চুইংগাম গিলে ফেললে কি হজম হতে সাত বছর সময় লাগে
ছোটবেলায় স্টিকার পাওয়ার লোভে যে পরিমাণে চুইংগাম খেয়েছি, তার কোনো হিসাব নেই। আর চিবানোর সময় মনের ভুলে যে কত গিলে ফেলেছি, তারও কোনো হিসাব নেই। ভুল করে গিলে ফেলার পরে মনের মধ্যে কত প্রশ্ন আর ভয় যে কাজ করেছে। কারণ, ছেলেবেলায় বড়রা চুইংগাম খাওয়া দেখলে বলতেন, ‘খবরদার। চুইংগাম গিলে ফেলবি না। তাহলে সেটা পেটে গিয়ে সাত বছর আটকে থাকবে।’
কথাটা শোনার পর হয়তো ভয়ে চুইংগাম ফেলে দিয়েছেন অথবা ভুলে গিলে ফেলার পর পেটে একটা অজানা আতঙ্ক নিয়ে ঘুমিয়েছেন।
তবে বিজ্ঞান কিন্তু এই পুরোনো ধারণাকে একদমই উড়িয়ে দিয়েছে। চুইংগাম পেটে বছরের পর বছর ধরে আটকে থাকে না। এটি অন্যান্য অপাচ্য খাবারের মতোই পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে যায়। আর এক বা দুই দিনের মধ্যেই শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘জার্নাল আব পেডিয়াট্রিকস’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা দেখিয়েছে, শিশুরা যদি একাধিক চুইংগাম গিলে ফেলে, তবে তা অন্ত্রে বাধা তৈরি করতে পারে।
যখন কেউ অনেকগুলো চুইংগাম গিলে ফেলে, তখন তা পেটে থাকা অন্যান্য হজম না হওয়া খাবারের অংশের সঙ্গে মিশে যায়। এরপর এসব উপাদান মিলেমিশে ‘বেজোয়ার’ নামের একটি আঠালো পিণ্ডের মতো তৈরি করে। এই পিণ্ডটি যদি খুব বড় হয়ে যায়, তবে তা অন্ত্রের পথকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। যদিও এমন ঘটনা খুবই কম দেখা যায়। তবু যারা নিয়মিত চুইংগাম খায়, তাদের কিন্তু এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।
তাই যদি আপনি মাঝেমধ্যে একবার ভুল করে চুইংগাম গিলে ফেলেন, তাহলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আপনার শরীর ঠিক জানে কীভাবে এটি বের করে দিতে হয়। শুধু চুইংগাম গিলে ফেলাকে অভ্যাসে পরিণত করবেন না। তবে বিশেষ করে ছোটদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
পেটে যাওয়া চুইংগাম কত দ্রুত শরীর থেকে বেরিয়ে আসে
যখন চুইংগাম পাকস্থলীতে প্রবেশ করে, তখন পাচনতন্ত্র এটিকে অন্য যেকোনো অপাচ্য পদার্থের মতোই বিবেচনা করে। চুইংগামের মূল ভিত্তিটি তৈরি হয় সিনথেটিক পলিমার ও রেজিন দিয়ে। এই জিনিসগুলো এতই শক্ত যে পাকস্থলীর শক্তিশালী অ্যাসিড বা হজমের এনজাইম তা ভেঙে ফেলতে পারে না।
চুইংগামের ভেতরের যে চিনি ও ফ্লেভার থাকে, সেটা কিন্তু হজম প্রক্রিয়াতেই গলে যায়। আর বাকি যে শক্ত গাম বা আঠালো অংশটি থাকে, সেটা অক্ষত অবস্থাতেই অন্ত্রের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে। সাধারণত গিলে ফেলার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সেই চুইংগাম স্বাভাবিকভাবে মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
এই দ্রুত প্রক্রিয়াটি পরিষ্কার প্রমাণ করে যে চুইংগাম গিলে ফেললে তা পাকস্থলীর ভেতরে আটকে থাকে না। তাই যাঁরা মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাবশত চুইংগাম গিলে ফেলেন, তাঁদের দীর্ঘদিন ধরে কোনো ক্ষতির চিন্তা করার কারণ নেই।
তবে শিশুরা বিশেষ করে এই ঝুঁকির মধ্যে থাকে। কারণ, তাদের পরিপাকতন্ত্র তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। এ ছাড়া যাঁদের দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমের সমস্যা আছে, তাঁদেরও নিয়মিত চুইংগাম গিলে ফেলার প্রবণতা থাকলে সতর্ক থাকা উচিত।
ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদে চুইংগাম খাওয়ার সহজ উপায়
হঠাৎ চুইংগাম গিলে ফেলা ক্ষতিকারক নয়। তবে নিয়মিত গিলে ফেলা বিপদ ডেকে আনতে পারে।
১. ইচ্ছাকৃতভাবে চুইংগাম গিলে না ফেলা। চিবানো শেষ হলে চুইংগাম ফেলে দিন। আর ফেলার সময় নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। যাতে অন্যদের সমস্যা না হয়।
২. দিনে খুব বেশি হলে এক বা দুটি চুইংগাম চিবানোই যথেষ্ট। এর বেশি চিবানো থেকে বিরত থাকুন। কারণ, নিয়মিত অতিরিক্ত চুইংগাম খাওয়া অভ্যাসে পরিণত হলে তা হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
৩. ছোটদের ক্ষেত্রে কিন্তু এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, তাদের হজমতন্ত্র বা অন্ত্র ছোট হওয়ার কারণে গিলে ফেলা চুইংগাম সহজেই বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই শিশুরা যখন চুইংগাম খাবে, তখন তাদের দিকে নজর রাখুন যেন ভুল করেও তারা গিলে না ফেলে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ডিউক হেলথ