শরীরে পানি জমেও বাড়তে পারে ওজন

মা হওয়ার প্রক্রিয়াতেও হতে পারে ওয়াটার ওয়েট
ছবি: প্রথম আলো

‘এত কষ্ট করলাম, তবু ওজন কমছে না।’—এমন কথা নিয়মিত শুনবেন চারপাশে। হয়তো আপনার নিজেরই এমন অবস্থা। হয়তো ওজন কমানোর চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখেননি। সব ধরনের টিপস ও পরামর্শ মেনে চলছেন, তবু ওজন একই আছে। তাহলে নিশ্চয়ই এমন কোনো সমস্যা হচ্ছে, যার কারণে আপনার ওজন কমছে না।

সঠিক ডায়েট মেনে না চলা, ঠিকমতো ব্যায়াম না করা, জীবনযাপনে অনিয়ম—এগুলোই সাধারণত ওজন বাড়ার মূল কারণ। এসব ঠিকঠাক মেনে চলার পরও যদি ওজন না কমে, তাহলে আরেকটি বিষয়ে নজর দিতে পারেন। এই যেমন ওজন না কমার আরেকটি অন্যতম কারণ হতে পারে শরীরে পানি জমা (ওয়াটার ওয়েট)। কারও শরীরে যদি বেশি ওয়াটার ওয়েট থাকে, তাহলে নিজেকে স্ফীত (ব্লোটেড) ও মেদবহুল লাগে।

ওয়াটার ওয়েট কী

শরীরের তরল পদার্থ যখন দেহের টিস্যুর মধ্যে আটকে যায়, তখন শরীর ফুলে যায়। ওয়াটার ওয়েটে পানিজাতীয় সব তরল পদার্থকে শরীর ধরে রাখে, পরে যা কিডনিতে পৌঁছায়। কিন্তু সমস্যা হলো কিডনি এই তরল পদার্থ দেহ থেকে বের করে না দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গ আর চামড়ার ভেতর জমাতে শুরু করে। ওয়াটার ওয়েট মূলত শরীরের আসল ওজন নয়, সাময়িক। তবে এটি অস্বস্তিকর। নিজের কাছেই নিজেকে মনে হয় বেঢপ।

শরীরে পানি জমার মূল কারণ

শরীরে পানি জমার মূল কারণ লবণ ও শর্করা (কার্ব)। অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি জমিয়ে রাখে। কেননা, লবণের সোডিয়াম পানির সঙ্গে মিশে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে জমে থাকে। তাই বেশি লবণ গ্রহণে শরীরে বেশি পানি জমতে পারে। শর্করাজাতীয় খাবারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। স্বাস্থ্যবিদদের মতে, আমরা যখন কার্বোহাইড্রেট–জাতীয় খাবার খাই, শরীর তাৎক্ষণিকভাবে সেটা ব্যবহার না করে বরং সেটাকে গ্লাইকোজেন হিসেবে ব্যবহার করে। আর গ্লাইকোজেন পানিকে দ্রুত আকৃষ্ট করে। তাই শরীরে গ্লাইকোজেন বেশি হলে পানির পরিমাণও বেড়ে যায়।

শরীরে পানি জমে ওজন বেড়ে যাওয়ার আরও কিছু কারণ

নির্দিষ্ট কিছু ওষুধপত্র: নির্দিষ্ট কিছু রোগের ওষুধ শরীরে তরল পদার্থ জমিয়ে রাখে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, উত্তেজনা বা প্রদাহ কমানোর ওষুধ, কিছু ডায়বেটিসের ওষুধ শরীরে পানি জমিয়ে রাখে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নিতে হবে, এ ধরনের ওষুধ গ্রহণের কারণে আপনার শরীরে পানি জমে কি না।

দুর্বল রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা: শরীরে পানি জমে ওজন বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে দুর্বল রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা। সাধারণত পায়ের শিরা–উপশিরাগুলো দিয়ে রক্ত হৃৎপিণ্ডে যায়। কিন্তু যখন রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন রক্ত নিচের দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং শরীরের নিচের অংশে তরল পদার্থগুলো ধারণ করে।

গর্ভধারণের সময়ে: অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালে ওয়াটার ওয়েট হতে পারে। সাধারণত প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে এটি লক্ষ করা যায়। আর তখনই নতুন মায়েদের হাত, পা, পায়ের গোড়ালি ও চেহারা ফুলে যায়। অনেকেই হয়তো এ জন্য হরমোনকে দায়ী করতে পারে, তবে পেটে পানি জমে যাওয়াও এর জন্য দায়ী। এটি ধমনি বা শিরার ওপর একপ্রকার পর্দার মতো করে থাকে। ফলে তরল পদার্থগুলো দেহের টিস্যুতে গিয়ে জমা হয় এবং সহজে বের হয়ে আসতে পারে না। গর্ভধারণের সময়ে যদি শরীর ফুলে ব্যথা হওয়া শুরু করে, তাহলে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রতিকার কী

যাঁর শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে, তিনি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যা করতে পারেন—

খাবারে অতিরিক্ত লবণ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি গ্রহণ করুন। কেননা, কেউ যখন পানি কম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর শরীর সেটা জমিয়ে রাখে।

মাত্রাতিরিক্ত চা, কফিজাতীয় জিনিস পান করা থেকে বিরত থাকুন।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ঘামের মাধ্যমে দেহে জমে থাকা পানি বের হয়ে যাবে।

হাইড্রেটিং ফুড বা জলসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।

সূত্র: ফেমিনা