৩০ বছর বয়সের পর যে ৭ ভুলে সুখী হতে পারছেন না

জীবনের তিনটি দশক পেরিয়ে এসেছেন আপনি? তার মানে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে বহু কিছু আছে। স্মৃতির অ্যালবামের কিছু পাতা একটু ধূসর হয়ে এসেছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখাও থেমে নেই। দায়িত্ব বেড়েছে ঘরে-বাইরে, বেড়েছে ব্যস্ততা। এসবের মধে৵ সুখের হিসাব-নিকাশও নিশ্চয়ই করেন আপনি।

বাস্তবে নিজেকে সুখী বলে মানতে পারা মানুষের সংখ্যা বেশ কমএআই/প্রথম আলো

সুখের কোনো পরিমাপ হয় না। তবে বাস্তবে নিজেকে সুখী বলে মানতে পারা মানুষের সংখ্যা বেশ কম। কেউ ভোগেন হতাশায়, কেউ দুশ্চিন্তায়। কেউ সম্পর্কে অসুখী, কারও কাছে যন্ত্রণা হয়ে ওঠে কর্মক্ষেত্র। নির্দিষ্ট কোনো অসুবিধার কারণে জীবনের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আপনি সমস্যায় থাকতেই পারেন। তবে জীবন তো একটা গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সুখ আদতে এমন দু–একটি বিষয়ের জন্য হারিয়ে যায় না; বরং হারিয়ে যায় জীবনবোধের কারণেই। ত্রিশের পর সুখী হতে না পারার কিছু কারণ জেনে নেওয়া যাক।

১. সুখের পেছনে ছোটা

বিস্ময়কর মনে হলেও এটাই সত্য যে সুখের পেছনে ছুটতে ছুটতেই আমরা সুখের পথ থেকে সরে যাই। সুখের কিছু পার্থিব মাপকাঠি দাঁড় করিয়ে ফেলাটাই একটা বড় ভুল। পদমর্যাদা, সামাজিক অবস্থান বা অঢেল অর্থের পেছনে ছুটতে ছুটতেই সুখ হারিয়ে যায়; বরং যা আছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন। অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়ে সুখ খুইয়ে বসবেন না। ত্রিশ পেরিয়ে এসে সত্যিকার অর্থে কোনো কিছুর অভাব থাকলে কেবল তখনই জীবনে বড় কোনো পরিবর্তনের কথা ভাবুন।

অকারণ চিন্তা সুখের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

২. অনুতাপ

পাওয়া না পাওয়া মিলিয়েই জীবন। অতীত নিয়ে অনুতাপ করলে সুখী হওয়া মুশকিল। কী করেছেন, কী করতে পারতেন, কী হারিয়েছেন—এসব ভেবে সুন্দর সময়গুলো নষ্ট করবেন না। অনুতাপ করলে তো পুরোনো দিনগুলো ফেরত আসবে না। কষ্টই বাড়বে কেবল।

৩. অতিরিক্ত চিন্তা

অকারণ চিন্তা সুখের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যা আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই, তা নিয়ে ভাববেন না; বরং জীবনের পথে চলুন সতর্কভাবে। আর চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দিন প্রশান্তির দিকে। ভাবুন, বর্তমানকে কী করে আরও সুন্দর করে তোলা যায়। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইতিবাচক থাকুন।

৪. কৃতজ্ঞ না হওয়া

জীবনে যা কিছু পেয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতাবোধ না থাকলে আপনি নিজেকে অসুখী অনুভব করতেই পারেন। ভেবে দেখুন, আপনার চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থানে আছেন, এমন অনেক মানুষ আছেন পৃথিবীতে। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার কথা ভাবুন। আপনি নিশ্চয়ই সেখানকার মানুষের চেয়ে ভালো আছেন? কৃতজ্ঞ থাকুন। আপনি যদি শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে থাকেন, আপনার যদি কোনো অঙ্গহানি না হয়ে থাকে, অবশ্যই কৃতজ্ঞ থাকুন। ছোট–বড় বহু কারণ আছে কৃতজ্ঞ থাকার। এই বয়সে এসে সেসব ভুলে যাবেন না। কাছের মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, বহু বছর যাঁরা আপনার পাশে থেকেছেন।

আরও পড়ুন
শরীর ও মনের দিক থেকে সুস্থ না থাকলে সুখের সব আয়োজনই বৃথা
ছবি: প্রথম আলো

৫. অন্যের জন্য কিছু না করা

অসহায় প্রাণের জন্য কিছু করার মধে৵ আপনি জীবনের অর্থ খুঁজে পাবেন। এটি এড়িয়ে যাওয়ার মতো ভুল করা যাবে না। অভিভাবকহীন শিশু, আশ্রয়হীন বৃদ্ধ, পথের পশুপাখি—সবার জন্যই কিছু না কিছু করার আছে আপনার। অঢেল অর্থ ছাড়াও আপনি কারও না কারও জন্য কিছু করতে পারবেন। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, অসুস্থ আত্মীয় কিংবা বৃদ্ধাশ্রমের অচেনা একজন মানুষকে একটু সময় দিতে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। ইচ্ছাশক্তিই আসল। তেমনি নিজের খাবারের উচ্ছিষ্ট পথের প্রাণীকে দিতে আর তার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিতেও আপনার তেমন খরচ করতে হবে না। এভাবে বিনা পয়সায় সুখ কিনতে পারবেন আপনি।

৬. নিজের ভুল মেনে না নেওয়া

ভুলভ্রান্তিও জীবনেরই অংশ। ভুলের জন্য দীর্ঘদিন অনুতাপ করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি নিজের ভুল অস্বীকার করাও ঠিক নয়। নিজের ভুলগুলোকে ভুল বলে মেনে নিন। এমন অনেক ভুল থাকতে পারে, যা সংশোধন করলে জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে। সম্পর্কের কথাই ধরা যাক। বন্ধু কিংবা পরিবারকে হয়তো আপনি বহুদিন ধরে খুব একটা সময় দেননি। এই নিয়েই হয়তো সম্পর্কে জমেছে অভিমানের মেঘ। কথা–কাটাকাটি কিংবা ভুল–বোঝাবুঝির সূত্রপাত হয়তো তুচ্ছ কোনো বিষয় নিয়েই। আপনার দিকের ভুলগুলো শুধরে নিন। জীবন রঙিন হয়ে উঠবে।

৭. নিজের যত্ন না নেওয়া

ত্রিশের পর নিজেকে সময় দেওয়াই বিলাসিতা হয়ে দাঁড়ায়; কিন্তু সব দায়িত্ব সামলে নিজেকে সময় দিতেই হবে আপনার। রাখতে হবে ‘মি টাইম’। মনের কথা শুনতে হবে। সময়মতো ঘুম, ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া আর শরীরচর্চাও করতে হবে। মুক্তবাতাসে শ্বাস নেওয়াও জরুরি। শরীর ও মনের দিক থেকে সুস্থ না থাকলে সুখের সব আয়োজনই বৃথা।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুন