টেনিস এলবো উপশমের উপায় কী?

কনুইয়ের অস্থিসন্ধির একটি ব্যথার ধরন টেনিস এলবো। হাড়ের জয়েন্ট বা জোড়ার অতিব্যবহারের কারণে এটি হয়ে থাকে। সাধারণত ব্যথার অনুভূতি হয় কনুইয়ের বাইরের দিকে (পাশে), তবে হাতের পেছনের দিকেও তা ছড়াতে পারে। টেনিস এলবো হলে বাহু সোজা করতে বা সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করতে গেলে ব্যথা বোধ হবে।

হাড়ের জয়েন্ট বা জোড়ার অতিব্যবহারের কারণে টেনিস এলবো হয়ে থাকে
ছবি: সংগৃহীত

কারণ কী

হাড়ের সঙ্গে পেশি যে রগ দিয়ে লাগানো থাকে তাকে বলে টেনডন। কনুইয়ের বাইরের হাড়ের সঙ্গে অগ্রভাগের টেনডনগুলো হাতের পেশিগুলোকে সংযুক্ত করে। টেনিস এলবো তখনই হয় যখন বাহুতে একটি নির্দিষ্ট পেশি (এক্সটেনসর কার্পি রেডিয়ালিস ব্রেভিস) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই পেশি কবজি প্রসারিত করতে সাহায্য করে।

পুনরাবৃত্তিমূলক চাপ এক্সটেনসর কার্পি রেডিয়ালিস ব্রেভিস পেশিকে দুর্বল করে দেয়, তারপর যেখানে এটি কনুইয়ের বাইরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, সেখানে পেশির টেনডনে অত্যন্ত ক্ষুদ্র ছিদ্র সৃষ্টি করে। এই ছিদ্র বা টিয়ার প্রদাহ ঘটায় এবং ফলে ব্যথা অনুভূত হয়।

টেনিস এলবো যেকোনো কার্যকলাপ দ্বারা সূচিত হতে পারে। যেমন টেনিস এবং অন্যান্য জালিকাকার ব্যাট দিয়ে খেলা, সাঁতার, গলফ, ক্রমাগত চাবি ঘোরানো, ঘন ঘন স্ক্রু ড্রাইভার, হাতুড়ি ও কম্পিউটার ব্যবহার করা ইত্যাদি।

কীভাবে বুঝবেন

  • কনুইয়ে ব্যথা। প্রথমে মৃদু হলেও ধীরে ধীরে তীব্রতা বাড়তে থাকে।

  • ব্যথা কনুইয়ের বাইরে থেকে বাহু এবং কবজি পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।

  • দুর্বল মুষ্টি।

  • করমর্দন বা কোনো বস্তু চেপে ধরলে ব্যথা বেড়ে যায়।

  • কোনো কিছু তোলা, সরঞ্জাম ব্যবহার বা জার খোলার সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া।

চিকিৎসা

ল্যাটেরাল এলবো টেনডিনোপ্যাথির (এলইটি) প্রথম সারির ব্যবস্থাপনা হলো নন-অপারেটিভ চিকিৎসা। উদ্দেশ্য ব্যথা উপশম এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ।

  • ব্যথা উপশম করার জন্য হাতের বিশ্রাম দরকার। হাতের কার্যকলাপের অভ্যাস পরিবর্তনও জরুরি।

  • প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বল্প মেয়াদে ব্যথা উপশমের জন্য প্রথম দিকে ব্যথানাশক বড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • রক্তনালি সংকোচনের মাধ্যমে প্রদাহ এবং ফোলাভাব কমানোর উদ্দেশ্যে ১৫ মিনিটের জন্য প্রতিদিন তিনবার বরফ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কবজি বা আঙুল ফোলা থাকলে হাতটা এলিভেশন করতে বলা হয়।

  • সংকোচনের সময় ব্যথা কমাতে কনুই কাউন্টারফোর্স ব্রেস বেশ কার্যকর।

যখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

যেকোনো রোগবালাইয়ের শুরু থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারলে বড় রকমের জটিলতা এড়ানো যায়। তাই কবজি বা আঙুলের ফোলা, ব্যথা বোধ করলে শুরুতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভালো থাকা যায়।

*ডা. জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন: সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা