খাবারে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকার পরও কাদের ওষুধ খেতে হবে

অনেকেই সম্পূরক হিসেবে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করেন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

রোগীরা প্রায়ই বলে থাকেন, ডাক্তার আমার হাঁটুতে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, সর্বশরীরে ব্যথা। কিছু ওষুধ লিখে দিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে বা এমনিতেই যে ওষুধটি খাওয়া হয়, তা হলো ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম একটি জনপ্রিয় ওষুধ। এটি ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ, মানে কিনতে প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) লাগে না। অনেকেই তাই ব্যথাবেদনা, হাড় শক্ত করতে বা এমনিতেই সাপ্লিমেন্ট (সম্পূরক) হিসেবে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করেন। কিন্তু এভাবে ক্যালসিয়াম সেবন করা কি উচিত?

ক্যালসিয়ামের উৎস

আমাদের শরীর ক্যালসিয়াম প্রস্তুত করতে পারে না। বাইরে থেকে ক্যালসিয়ামের জোগান দিতে হয়। ক্যালসিয়ামের সর্বোত্তম উৎস হলো খাবার। ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার হলো: দুধ (১ কাপ দুধে প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম আছে), দই, সবুজ শাকসবজি (যেমন ব্রকলি, কলা), মাছের নরম কাঁটা, সয়াবিন, বাদাম, শিম ইত্যাদি।

দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা

৯ বছরের কম বয়সীদের দৈনিক ১ হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার। ৯ থেকে ১৮ বছরের মানুষের দরকার দৈনিক ১ হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম। ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের দৈনিক ১ হাজার মিলিগ্রাম (সর্বোচ্চ সীমা ২ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম) চাহিদা থাকে। আর ৫০ বছরেরে বেশি বয়সীদের দৈনিক ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম (সর্বোচ্চ সীমা ২ হাজার মিলিগ্রাম)।

যাঁদের দৈনিক চাহিদার চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম প্রয়োজন

  • ঋতুস্রাব বন্ধের আগে।

  • ঋতুস্রাব বন্ধের পরে।

  • গর্ভাবস্থায়।

  • দুগ্ধদানকারী মা।

যাঁদের খাবারে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকা সত্ত্বেও ওষুধ খেতে হবে

  • যাঁরা শুধু শাকসবজি খান বা ভেজিটেরিয়ান।

  • দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার খেলে যাঁদের হজমে সমস্যা হয়।

  • যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন করেন।

  • যাঁদের বিভিন্ন হজমজনিত পেটের সমস্যা আছে।

  • যাঁরা অনেক বেশি প্রোটিনসমৃদ্ধ বা সোডিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান।

  • ক্যালসিয়াম হজমে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

ক্যালসিয়াম হজমের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন ডি। ভিটামিন ডির অভাব হলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। সে জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার (যেমন সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম) এবং সূর্যের আলো প্রয়োজন।

ক্যালসিয়াম সেবনের নিয়মাবলি

  • খাবার খাওয়ার পর খেতে হবে।

  • অধিক আঁশজাতীয় খাবারের সঙ্গে খাওয়া উচিত নয়।

  • একবারে ৫০০-৬০০ মিলিগ্রামের বেশি খাওয়া যাবে না।

  • আয়রন ও জিংক খাওয়ার ১-২ ঘণ্টা পর ক্যালসিয়াম খেতে হবে।

  • এক বেলা হলে সকালে খাওয়া ভালো। এতে হজম ভালো হয়। দুই বেলা হলে সকালে ও রাতে খাওয়া উচিত।

যাঁরা খেতে পারবেন না

  • প্যারাথাইরয়েড হরমোন যাঁদের বেশি।

  • পানিশূনতা থাকলে।

  • কোষ্টকাঠিন্য রোগে ভুগছেন।

  • যাঁরা কিডনিতে পাথর।

  • যাঁরা কিডনিজনিত জটিল রোগে ভুগছেন।

  • যাঁরা বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন, ক্যালসিয়াম গ্রহণের আগে অবশ্যই তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • হাড়, দাঁত গঠনের সঙ্গে সঙ্গে দেহের স্বাভাবিক কাজকর্ম সম্পাদন করার জন্য ক্যালসিয়াম খুব জরুরি। কিন্তু বেশি ক্যালসিয়াম সেবন এসব কাজ সম্পাদনে কোনো অতিরিক্ত ভূমিকা রাখে না। তাই প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম দরকার এবং শরীরে এর ঘটতি আছে কি না জেনে সেবন করা উচিত।