থাইরয়েডের যে সমস্যায় ওজন কমানো মুশকিল

হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলে ওজন কমাতে গিয়ে অনেকেই মুশকিলে পড়েন
ছবি: পেক্সেলস

ওজন কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও শরীরচর্চা করতেই হবে। সহজভাবে বললে, ওজন কমানোর সূত্রই হলো পরিমিত ক্যালরি গ্রহণ আর তার চেয়ে বেশি ক্যালরি খরচ। তবে অনেকেরই কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে ওজন বাড়ে। হাইপোথাইরয়েডিজম তেমনই এক সমস্যা।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. অঞ্জনা সাহা বলছিলেন, হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপসর্গ তেমন একটা প্রকট না হওয়ায় অনেকেই এসবকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। অথচ বাংলাদেশে এ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা নেহাত কম নয়। এ সমস্যার কারণে ওজন কমাতে গিয়ে অনেকেই মুশকিলে পড়েন। ভুগতে পারেন নানা জটিলতায়।

হাইপোথাইরয়েডিজমে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে যায়।
ছবি: পেক্সেলস

সমাধান আছে কি?

হাইপোথাইরয়েডিজমে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে যায়। ফলে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমে আসে। ওষুধের মাধ্যমে হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে আনাটাই এর চিকিৎসা। হাইপোথাইরয়েডিজম হলে সাধারণত আজীবন ওষুধ সেবন করতে হয়। তবে রক্তের হরমোন যখন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যায়, তখন ওজন কমানোর ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজম আর কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।

হাইপোথাইরয়েডিজমে যেভাবে ওজন কমাবেন

হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ তো আপনি চিকিৎসকের পরামর্শমাফিক সেবন করবেনই। ওজন কমানোর অন্য পদক্ষেপ আর সবার মতোই হবে। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, শরীরচর্চা আর পর্যাপ্ত ঘুম। মনের চাপও কমাতে হবে, নইলে ওজন কমানো মুশকিল হয়ে দাঁড়াতে পারে। আপনি একটি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন কিংবা আপনাকে সারা জীবন ওষুধ খেতে হবে, এসব বিষয়কে নেতিবাচকভাবে নেবেন না।

এটি কোনো জটিল সমস্যা নয়। চিকিৎসা চালিয়ে গেলেই আপনি সুস্থ থাকবেন। জীবন চলবে আপন ছন্দে। এটা ঠিক যে ওষুধ সেবন শুরু করার পরেও হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হতে কারও কারও একটু বেশি সময় লাগে। এই সময়টাতে ওজন কমানো বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। তবে ধৈর্য ধরে সব নিয়ম মেনে চলার বিকল্প নেই। হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে এলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকে না। জীবনপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ওজন কমবেই।

আরও পড়ুন
ওজন কমাতে গিয়ে খাওয়া অতিরিক্ত কমিয়ে ফেলা মারাত্মক ভুল
ছবি: প্রথম আলো

তবে শর্করাও চাই ঠিকঠাক

শর্করা–জাতীয় খাবার বেশি খেলে ওজন বাড়ে। কিন্তু এসব খাবার একেবারেই না খাওয়া কিংবা অতিরিক্ত কমিয়ে ফেলাও মারাত্মক ভুল। আপনি যদি পর্যাপ্ত শর্করা গ্রহণ না করেন, তাহলে থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজমের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসাটাও আপনার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

তাই সুস্থ থাকতে আপনাকে রোজ ঠিক কতটা শর্করা গ্রহণ করতে হবে, তা একজন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নেওয়া উচিত। কেবল ভাত, রুটি, পরোটা বা আলুতেই নয়, নুডলস, পাস্তা, পিৎজা, প্যাটিস, শিঙাড়া, পুরি প্রভৃতিতেও শর্করা রয়েছে। সুস্থ থাকতে পুষ্টিমান বুঝে খাবার খাওয়াই শ্রেয়।

তারপরও ওজন কমছে না?

হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি এত সব চেষ্টার পরেও ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেখতে হবে, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না। হরমোন অন্য কোনো সমস্যা কিংবা স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ সেবনের কারণেও ওজন কমানো কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সবারই যা জানা প্রয়োজন

স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মাধ্যমে ওজন কমানোর প্রচেষ্টা যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে একজন হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। কাজকর্মে উদ্যম না পাওয়া, সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, শারীরিক দুর্বলতা, শরীর ব্যথা, বিষণ্নতা, হুট করে মনমেজাজ বিগড়ে যাওয়ার মতো সাধারণ ব্যাপারই হতে পারে হাইপোথাইরয়েডিজমের উপসর্গ। পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যেহাইপোথাইরয়েডিজম বেশি দেখা যায়।

মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, তারিখের আগেই মাসিক হয়ে যাওয়া এবং সন্তান ধারণ করতে না পারার কারণও হতে পারে হাইপোথাইরয়েডিজম। কারও কারও রক্তশূন্যতাও দেখা দিতে পারে, যার ফলে তাঁকে মলিন দেখায়। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক আপনার উপসর্গের কারণ খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন। বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ওজন নিয়ন্ত্রণও সহজ ও স্বাস্থ্যকর।

আরও পড়ুন