শীতে হাত-পা বরফঠান্ডা হয়ে গেলে ভয়ের কিছু আছে কি

কিছু রোগব্যাধিতে হাত–পা মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা হতে পারেছবি: পেক্সেলস

শীতে অনেকেরই হাত বা পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে থাকে। কনকনে বাতাসের সংস্পর্শে এলে পা শীতল হবে, এটা অস্বাভাবিক নয়। অতিরিক্ত ঠান্ডায় সবারই হাত বা পা শীতল হয়ে পড়ে। কিন্তু মনে রাখবেন, কিছু রোগব্যাধিতে হাত–পা এমন মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা হতে পারে।

ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, রক্তশূন্যতা, হাইপোথাইরয়ডিজম, রেনোডস সিনড্রোম, প্রান্তীয় স্নায়ুবিক রোগ, প্রান্তীয় রক্তনালির রোগ থাকলে এমনটি হতে পারে। এ ছাড়া ভয়, আতঙ্ক, মানসিক অভিঘাত থাকলে রক্তে বেড়ে যায় অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোন। এটি রক্তনালিকে সাময়িক সময়ের জন্য সরু করে দেয়। পায়ে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। ফলে পা ঠান্ডা হয়ে আসে।

অতিরিক্ত ঠান্ডায় সবারই হাত বা পা শীতল হয়ে পড়ে। কিন্তু মনে রাখবেন, কিছু রোগব্যাধিতে হাত–পা এমন মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা হতে পারে
ছবি: পেক্সেলস

হৃদ্‌রোগে রক্তসঞ্চালনক্ষমতা কমে যায়। শরীরের রক্ত সরবরাহ কম হলে পায়ে এর প্রভাব পড়ে বেশি। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকলে রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়। ডায়াবেটিসে প্রান্তীয় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব কারণে পা ঠান্ডা হতে পারে। হিমোগ্লোবিনের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে অক্সিজেন বহন করা। রক্তশূন্যতার কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন বাহিত হতে পারে না। ফলে বা হাত ঠান্ডা হতে পারে।

হাইপো থাইরয়েডিজমের ফলে শরীরে বিপাকীয় কার্যক্রম ব্যাহত হয়। শরীর ক্যালরি কম উৎপন্ন হয়। ফলে শরীরে অসংখ্য লক্ষণ প্রকাশ পায়। ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া এই রোগের অন্যতম লক্ষণ।

রেনডস সিনড্রোমে রক্তনালি খুব বেশি আক্রান্ত হয়। শীতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় সাময়িক সময়ের জন্য, এমনকি রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হাত–পায়ের আঙুল ফ্যাকাসে কিংবা নীলাভ বর্ণ ধারণ করে। এ রোগে অনেক ক্ষেত্রে আঙুলের প্রান্তভাগে আলসার দেখা দেয়। এমনকি গ্যাংগ্রিন সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু রোগে প্রান্তীয় রক্তনালি সরু হয়ে যায়। এসবকে বলে পেরিফেরাল আর্টেরিয়াল ডিজিজ। ধূমপায়ী পুরুষদের এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। এতে পা বরফঠান্ডা হয়ে যায়। হাঁটলে পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভূত হয়।

গ্যাংগ্রিন হওয়ার কারণে পা কেটে ফেলতে হয়। সাময়িক সময়ের জন্য শৈত্যপ্রবাহে পা ঠান্ডা হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে বাড়িতে কিছু ব্যবস্থা নিলেই চলে। তবে নিচের লক্ষণগুলো থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে—

১. অস্থিসন্ধিতে ব্যথা

২. আঁটসাঁট চামড়া

৩. ত্বকের রং বদল

৪. অনুভূতি হ্রাস

৫. আলসার

৬. স্নায়ুবিক দুর্বলতা

কী করণীয়?

রক্ত চলাচল বাড়াতে হলে নিজের চলাচল বাড়াতে হবে। হাঁটুন, শরীরচর্চা করুন। শরীর গরম হবে, উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে পায়ে। শীতের সময় হাত–পায়ে মোজা পরুন। অজু কিংবা গোসলের সময় গরম পানি ব্যবহার করুন। পা ঠান্ডা হলে গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। এতে রক্তসঞ্চালন বেড়ে যাবে। গরম পানির ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। ধূমপান, অ্যালকোহল, অতিরিক্ত কফি থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন। মানসিক অভিঘাত মুক্ত থাকুন। আয়রন, ভিটামিন, ফলিক অ্যাসিড—এসব রক্তসঞ্চালনে সাহায্য করে। এসব যোগ করুন খাদ্যতালিকায়।

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, ঢাকা