শীতে যেভাবে শিশুর যত্ন নেবেন

শীতকালে কমবেশি সবারই আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়। কেননা, তাপমাত্রা কম থাকে বলে ঠান্ডা-কাশির মতো রোগে ভোগার প্রবণতা বেশি থাকে, আবার ত্বকও সংবেদনশীল আচরণ করে। এমন অবস্থায় বিশেষ করে বৃদ্ধ আর শিশুদের প্রয়োজন আলাদা যত্ন। শীতে কীভাবে শিশুর যত্ন নেবেন, থাকল তারই কয়েকটা উপায়।

নবজাতকের যত্ন


সদ্যোজাত থেকে ৪০ দিন বয়স পর্যন্ত শিশুকে বলা হয় নবজাতক। এ সময় শিশুর সবচেয়ে বেশি যত্নের প্রয়োজন।


* সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর গায়ে যে সাদা সাদা নরম পদার্থ লেগে থাকে, সঙ্গে সঙ্গে তা পরিষ্কার করে ফেলবেন না। এটা শিশুকে বাইরের নতুন আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।


* নবজাতকের চুলও তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই চুল কেটে ফেলা ঠিক না।

নবজাতককে যতটা সম্ভব মায়ের শরীরের সঙ্গে ঘেঁষে রাখুন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

* নবজাতককে যতটা সম্ভব মায়ের শরীরের সঙ্গে ঘেঁষে রাখতে হবে। মায়ের কোল ঘেঁষে শোয়াতে হবে। মায়ের বুকের ত্বকের সঙ্গে নবজাতকের ত্বক লেগে থাকবে। এতে শিশু উষ্ণ থাকবে এবং মায়ের সঙ্গে আন্তরিকতা বাড়বে।


* শিশুকে ঘন ঘন দুধ খাওয়াতে হবে। এতে শিশুর ব্যায়াম হবে এবং নড়াচড়ায় নিজে থেকেই উষ্ণতা তৈরি করতে পারবে। বুকের দুধ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।


* ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।


* নবজাতককে ৩০ মিনিট সকালের নরম, মিষ্টি রোদে রাখতে হবে।


* নবজাতককে পারতপক্ষে ঘরের বাইরে নেবেন না। ঘরে আগুন জ্বালিয়ে তাপমাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না।

আপনার নবজাতককে নরম আরামদায়ক পোশাকে মুড়ে রাখুন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

* কুসুম গরম পানি দিয়ে গা মুছে দিতে হবে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে ঘর উষ্ণ রাখুন।


* ঘরের কারও ঠান্ডা–কাশি থাকলে তাকে নবজাতক থেকে দূরে রাখুন।


* নরম আরামদায়ক পোশাকে মুড়ে রাখুন। কানটুপি পরাতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে কান, মাথা নরম কাপড়ে পেঁচিয়ে রাখুন।

দেড় মাস থেকে এক বছর বয়সী শিশুর যত্ন


* শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে ভুলবেন না। গোসলের আগে বেবি অয়েল দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করতে পারেন।


* গোসলের পর ত্বকে লোশন লাগিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে পারেন। শিশুর জন্য ম্যাসাজ খুব ভালো।


* তেল ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। নারকেলের তেল ব্যবহারে ঠান্ডা লাগতে পারে। আবার তেল ব্যবহারের ফলে ত্বকে ময়লা আটকানোর আশঙ্কাও বেশি।


* ডায়াপার ব্যবহারের আগে জিঙ্কসমৃদ্ধ ক্রিম লাগিয়ে নিন।

পরিষ্কার কাপড় পরান
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

* উল বা পশমের কাপড় পরানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। কেননা, এগুলোয় ময়লা জমে ডেকে আনতে পারে কোল্ড-অ্যালার্জি। ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে পরান।


* যতটা সম্ভব হাতমোজা, পা-মোজা ও টুপি পরিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন (যদিও বাবুরা খুলে ফেলতে চাইবে)।


* বাবুকে যতটা সম্ভব বুকের দুধ খাওয়ান।


* ছয় মাসের বেশি বয়সী বাচ্চাকে মাঝেমধ্যে কমলালেবুর রস, লেবুর রস ও ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ান। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে।


* মোটেই ঠান্ডা খাবার খাওয়াবেন না। সবজি ও চিকেনের স্যুপজাতীয় গরম, পুষ্টিকর, তরল খাবার দিন।

কানটুপি পরাতে ভুলবেন না
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

এক থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুর যত্ন


* পারতপক্ষে বাইরের খাবার খাওয়াবেন না। টাটকা শাকসবজি, ফল খাওয়ান।


* এ বয়সে শিশুরা অনেক দৌড়াদৌড়ি করে। ফলে এমনিতেই শরীরে তাপ উৎপন্ন হয়। তাই খুব ভারী, মোটা পোশাক পরানোর দরকার নেই। নরম, সহজে ক্যারি করা যায় এরকম পোশাক পরান।


* মাঝেমধ্যে গরম স্যুপ, দুধ, আদা চা, ভিটামিন সি–জাতীয় খাবার, মৌসুমি ফল খাওয়ান।


* শিশুকে যথাসম্ভব পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখুন। হালকা ঠান্ডা–কাশিতে বিচলিত হবেন না। যথাসম্ভব উষ্ণ রাখুন।

ছয় মাসের বেশি বয়সীদের গরম দুধ আর ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে দিন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

* শিশুর ত্বকের যত্নে কী ধরনের পণ্য ব্যবহার করছেন (শ্যাম্পু, বেবি লোশন, বেবি অয়েল, বডি ওয়াশ, বেবি ফেশিয়াল ক্রিম, লিপ বাম ইত্যাদি) খেয়াল রাখুন। সেগুলো কী উপাদানে তৈরি, দেখুন। সফট, হালকা, হাইড্রেটিং, সোপ ফ্রি, অ্যালকোহল-প্যারাবেন ফ্রি, ময়েশ্চারাইজিং পণ্য ব্যবহার করুন।


* ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।


সূত্র: বয়েজ টাউন পেডিয়াট্রিকস ও হেলথ শটস

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন