নারীদের সিহানস সিনড্রোম

নারীর এক অদ্ভুত রোগ সিহানস সিনড্রোম। অনেক সময়ই শনাক্ত হতে অনেক দেরি হয়। বছরের পর বছর এ নিয়ে নারীরা ভুগতে থাকেন। কিন্তু সঠিক পরীক্ষা–নিরীক্ষার অভাবে রোগ ধরা পড়ে না। আসলে এটি নারীদের প্রসব–পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সৃষ্ট একটি জটিলতা। এতে হরমোনের ঘাটতি দেখা দেয় শরীরে। একে একে শুরু হয় নানা উপসর্গ।

ঝুঁকি

আমাদের দেশে এখনো পোস্টপারটাম হেমোরেজ বা প্রসব–পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের হার অনেক বেশি। দেশে মাতৃমৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ এটি। যদি এই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের হাত থেকে কোনো নারী বেঁচেও যান, পরবর্তী সময়ে দেখা দেয় নানা সমস্যা। এর মধ্যে একটি হলো অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি নষ্ট হওয়া। রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার কারণেই এটি হয়।

পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে গুরুত্বপূর্ণ সব হরমোন নিঃসৃত হয়। একে বলা হয় মাস্টার গ্ল্যান্ড বা প্রভু গ্রন্থি। কারণ, এ হরমোনগুলোই শরীরের অন্যান্য গ্রন্থি, যেমন থাইরয়েড, অ্যাড্রিনাল, ওভারি, ব্রেস্ট ইত্যাদির কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। মাস্টার গ্ল্যান্ড অকার্যকর হয়ে পড়লে একে একে অকার্যকর হয়ে পড়তে শুরু করে অন্য গ্রন্থিগুলোও।

কীভাবে বুঝবেন

প্রথমে যে বিষয় নজর কাড়ে, তা হলো প্রলেকটিন হরমোনের অভাবে এই নারীরা সন্তানকে বুকের দুধ দিতে ব্যর্থ হন। কারণ, স্তনে দুধ তৈরি করে প্রলেকটিন হরমোন। এলএইচ ও এফএসএইচ হরমোন কমে যাওয়ার কারণে ওভারি আর ইস্ট্রোজেন প্রজেস্টেরন তৈরি করতে পারে না।

ফলে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় বা অনিয়মিত হয়ে যায়, বন্ধ্যত্ব দেখা দেয়। এমনিতে সন্তান প্রসবের পর মাসিক শুরু হতে কয়েক মাস দেরি হয়ে যেতে পারে, যা স্বাভাবিক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিষয়টা মেনোপজের মতো হয়ে যায়। ফলে হট ফ্লাশ হয়, নিয়মিত মাসিক আর শুরু হয় না।

থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতির জন্য হাইপোথাইরয়েডিজমের সব উপসর্গ, যেমন ক্লান্তি, দুর্বলতা, খসখসে ত্বক, ফোলা মুখ, চুল পড়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দেখা দেয়। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি অকার্যকর হয়ে পড়া। পিটুইটারি থেকে এসিটিএইচ হরমোন না আসার কারণে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি কর্টিসোল তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। প্রথমে অবসাদ, ক্লান্তি, রক্তচাপ কমে যাওয়া, রক্তে সোডিয়াম ও শর্করা কমে
যাওয়া দিয়ে শুরু হয়ে একসময় রোগী অচেতন হয়ে পড়তে পারেন।

চিকিৎসা কী

পিটুইটারি গ্রন্থি নষ্ট হয়ে গেলে তা মেরামত করা সম্ভব নয়। তাই একমাত্র চিকিৎসা সেই হরমোনগুলো প্রতিস্থাপন বা পরিমিতভাবে ব্যবহার করা। কর্টিকোস্টেরয়েড, থাইরক্সিন, ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করে যেতে হবে আজীবন।

নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না কিংবা ওভারডোজ বা আন্ডারডোজ হচ্ছে কি না। একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে সারা জীবন এসব হরমোন থেরাপি নিয়ে যেতে হবে।

ডা. তানজিনা হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ