পিসিওএস হরমোনজনিত সমস্যা

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস একটি দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল হরমোনজনিত রোগ; যা প্রজননক্ষম বয়সী অর্থাৎ ১৫-৪৫ বছর বয়সের নারীদের হয়। বলা হয়, প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে একজনের এ সমস্যা আছে।

অজ্ঞতা ও দ্বিধার কারণে অনেক সময় রোগনির্ণয়ে অনেক দেরি হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা। যথাযথ চিকিৎসা না করলে আজীবন এমনকি মেনোপজের পরও একজন পিসিওএস রোগী নানাবিধ শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হন।

কেন হয়

এ রোগে নারীর ডিম্বাশয় থেকে অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজেন নিঃসৃত হয় এবং অ্যান্ড্রোজেনের প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। তখন অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্যের কারণে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট হয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু পরিপক্ব হয়ে বের হতে পারে না।

এতে নিয়মিত ঋতুচক্রে বাধা সৃষ্টি হয়। অ্যান্ড্রোজেন ছাড়াও আরেকটি হরমোনের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াকে দায়ী করা হয়। সেটি হলো ইনসুলিন। ইনসুলিন হরমোন ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় শরীরে তুলানামূলকভাবে বেশি ইনসুলিন (হাইপারইনসুলিনেমিয়া) দেখা দেয়। অতিরিক্ত ইনসুলিন অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। অ্যান্ড্রোজেন বা টেস্টোস্টেরন বেশি হওয়ার পেছনে এই ইনসুলিনের অকার্যকারিতাও দায়ী।

লক্ষণ

  • অনিয়মিত মাসিক: দীর্ঘদিন মাসিক বন্ধ থাকা, নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে হওয়া, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। তবে কারও কারও মাসিক স্বাভাবিক থাকতে পরে।

  • অবাঞ্ছিত লোম: মুখে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে পুরুষের মতো অত্যধিক লোম হওয়া।

  • মুখে ও শরীরে অতিরিক্ত ব্রণ হওয়া।

  • চুল পড়ে যাওয়া ও কখনো কখনো টাক হওয়া।

  • শরীরের বিভিন্ন অংশে, যেমন গলার পেছনে, বগলে ত্বক কালো হয়ে যাওয়া।

  • স্থূলতা বা ওজন বেড়ে যাওয়া।

  • বন্ধ্যাত্ব।

জটিলতা

  • পিসিওএস বিপাকজনিত ও হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে; যার প্রভাব পড়ে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর। ফলে রোগীর উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

  • রক্তে চর্বি জমে, ফ্যাটি লিভার দেখা দেয়।

  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি। বন্ধ্যাত্ব এ রোগীদের একটি বড় সমস্যা।

  • বারবার গর্ভপাত, নিদ্রাহীনতা ও ঘুমের সময় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিষণ্নতা, অবসাদ ও অন্যান্য মানসিক সমস্যার হারও বেশি।

  • বয়সের সঙ্গে জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।

প্রতিকার

  • পিসিওএসকে বলা হয় ‘ডিজিজ অব লাইফস্টাইল’। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ব্যবস্থাপনা মেনে চলা এ রোগের চিকিৎসার প্রধান ও
    প্রথম ধাপ।

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে ও লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করলে উপকার পাওয়া যায়। শরীরের ওজন ৫ শতাংশ কমাতে পারলেই মাসিক নিয়মিত হতে শুরু করে। আর ওজন ১০ শতাংশ কমাতে পারলে ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয় ও বন্ধ্যাত্ব সমস্যার অবসান হয়।

ডা. মারুফা মোস্তারী, সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়