জরায়ুমুখে ক্যানসার রোধে সচেতন হোন

নারীদের ক্যানসারের মধ্যে জরায়ুমুখে ক্যানসার অন্যতম। জরায়ুর সবচেয়ে নিচের অংশের নাম সারভিক্স বা জরায়ুমুখ, যা জরায়ু ও প্রসবের পথ বা যোনির মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত। নারীর যৌনাঙ্গের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এই অংশে ক্যানসারের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

  • অতিরিক্ত সাদা স্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, অতিরিক্ত অথবা অনিয়মিত রক্তস্রাব, সহবাসের পর রক্তপাত, মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় রক্তপাত, কোমর, তলপেট বা ঊরুতে ব্যথা ইত্যাদি জরায়ুমুখে ক্যানসারের উপসর্গ।

  • অল্প বয়সে যাঁরা অবাধ যৌনাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন বা যাঁদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়, তাঁদের এ ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। একাধিক পুরুষসঙ্গী থাকা বা পুরুষের একাধিক নারীসঙ্গী থাকা কিংবা ঘন ঘন সন্তান নেওয়া জরায়ুমুখে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

  • স্বাভাবিক কোষ থেকে জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে শতভাগ রোগীই ভালো হয়ে যেতে পারেন। যদিও রোগের শুরুতে উপসর্গ অল্পমাত্রায় থাকায় অনেকেই গুরুত্ব দিতে চান না। দেরিতে শনাক্ত হওয়ার কারণে রোগ ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়ে।

  • নিয়মিত স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে যেসব নারীর বয়স ৩০-এর বেশি (বাল্যবিবাহ হলে ২৫-এর বেশি), তাঁদের তিন বছর পরপর স্ত্রীরোগ চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে জরায়ুমুখ পরীক্ষা করানো উচিত।

  • ভায়া (ভিআইএ), প্যাপ স্মেয়ার ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব।

  • বর্তমানে জরায়ুমুখে ক্যানসার প্রতিরোধে অতি কার্যকর টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী সব মেয়ে ও নারী জরায়ুমুখে ক্যানসার প্রতিরোধে টিকা নিতে পারেন। এ টিকার তিনটি ডোজ নিতে হয়। প্রথম ডোজ যেকোনো দিন। দ্বিতীয় ডোজ প্রথম ডোজের এক মাস পর এবং তৃতীয় ডোজ প্রথম ডোজের ছয় মাস পর। এ টিকা দীর্ঘমেয়াদি জরায়ুমুখে ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম।

  • জরায়ুমুখে ক্যানসার প্রারম্ভিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ পদ্ধতি বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজেই আছে। যাঁদের ঝুঁকি রয়েছে, তাঁরা বছরে একবার বা নেগেটিভ ক্ষেত্রে তিন বছর পরপর এ পরীক্ষা করবেন।

  • আমাদের দেশে জরায়ুমুখে ক্যানসারের হার বেশি, তাই প্রত্যেক নারীকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষা ও টিকা গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই এ রোগ প্রতিহত করা সম্ভব।

  • অধ্যাপক ডা. মো. ইয়াকুব আলী, অনকোলজি বিভাগের প্রধান, এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল