ডেঙ্গু নিয়ে সতর্কতা ভুললে চলবে না

ডেঙ্গু মশাপ্রতীকী ছবি

ডেঙ্গু এখন একটি আতঙ্কের নাম। সাধারণত বর্ষায় এর প্রকোপ বাড়ে। এ বছর বর্ষা শুরু হয়েছে, কিন্তু এখনো ডেঙ্গু নিয়ে সতর্কতামূলক কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। যখন ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেড়ে যাবে ও হাসপাতালগুলো ভরে যাবে, তখন হয়তো সবার টনক নড়বে। এখনই সময় ডেঙ্গুর সম্ভাব্য আক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক হওয়া।

লক্ষণ

জ্বর (১০১-১০৪ ডিগ্রি), শরীরব্যথা, মাথায় তীব্র যন্ত্রণা, চোখব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব, বমি করা, গলাব্যথা, কাশি, ত্বকে দানা ইত্যাদি ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ। তবে পরিচিত লক্ষণ ছাড়াও কিন্তু ডেঙ্গু হতে পারে। তাই এ মৌসুমে জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করা উচিত। তীব্র ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ হলো প্রচণ্ড পেটব্যথা, ক্রমাগত বমি, অনিয়ন্ত্রিত পাতলা পায়খানা, রক্তক্ষরণ, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, নিস্তেজ হওয়া, বিরক্তি ও অস্থিরতা।

কখন ভয়

জ্বর এক থেকে সাত দিন থাকতে পারে। কিন্তু এরপরই শুরু সংকটকাল। জ্বর ছেড়ে যাওয়ার ২৮ থেকে ৪৮ ঘণ্টা স্থায়ী হয় এ সময়। এ সময় হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়। জটিলতাগুলো হলো শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তপাত, প্লাজমা লিকেজ (রক্তনালি থেকে জলীয় অংশ বেরিয়ে যাওয়া) ও রক্তচাপ কমে যাওয়া। এমন ক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসা না দিলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

পরীক্ষা

এ সময় যেকোনো ধরনের জ্বরের এক দিন পরই রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট ও ডেঙ্গু এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে হবে। জ্বর চার থেকে পাঁচ দিন হয়ে গেলে অ্যান্টিজেন না করে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্টের সঙ্গে অ্যান্টি ডেঙ্গু আইজিজি ও আইজিএম অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা উচিত। এ ছাড়া রোগীর জটিলতার ধরন অনুযায়ী অন্যান্য পরীক্ষা করার প্রয়োজন হবে।

করণীয়

  • বাসায় বিশ্রাম নিন।

  • জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাবেন, গা মোছাবেন।

  • তরল খাবার, যেমন স্যালাইন, ডাব, স্যুপ, ফলের জুস, দুধ খাবেন—দুই থেকে আড়াই লিটার প্রতিদিন। অন্যান্য খাবারও খাবেন।

  • দিনে কয়েকবার রক্তচাপ পরীক্ষা করুন, পালস প্রেশার মাপুন। পালস প্রেশার হলো ওপরের ও নিচের প্রেশারের পার্থক্য। এটি ২০ মিমির কম হলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।

  • প্রস্রাবের পরিমাণ লক্ষ করুন। প্রস্রাব কম হলে ও রক্তচাপ কমে গেলে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে, অর্থাৎ দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

  • প্রতিদিন সিবিসি টেস্ট করানো ভালো।

কখন হাসপাতালে ভর্তি

প্রচণ্ড পেটব্যথা, অতিরিক্ত বমি, শরীরে পানি জমা, রক্তপাত শুরু হওয়া, হেমাটোক্সিট বেড়ে যাওয়া, প্লাটিলেটের পরিমাণ ৫০ হাজারের নিচে নামলে, প্রস্রাব কমে গেলে।

  • ডা. এ কে এম মূসা, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, আলোক হেলথকেয়ার লি., মিরপুর ১০, ঢাকা