বাতরোগ রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে করণীয়

নানা ধরনের বাতরোগ আছে। তবে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সবচেয়ে পরিচিত প্রদাহজনিত বাতরোগ হিসেবে বিবেচিত। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ১ শতাংশ এতে ভুগে থাকেন।

এর মধ্যে মধ্যবয়স্ক নারীরা আক্রান্ত হন বেশি। বাতরোগের মধ্যে এ রোগে পঙ্গুত্বের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সচেতনতা তৈরিতে প্রতিবছর ২ ফেব্রুয়ারি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সচেতনতা দিবস পালন করা হয়।

এ বছর রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সচেতনতা দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য চাই দ্রুত রোগনির্ণয় ও যথাযথ চিকিৎসা।’

লক্ষণ ও শনাক্ত

  • হাত-পায়ের ছোট সন্ধির অনেকগুলোতে একসঙ্গে ব্যথা, লালচে হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া।

  • ঘুম থেকে ওঠার পর সকালে এক ঘণ্টার বেশি সন্ধিগুলোতে জড়তা অনুভব করা।

  • আক্রান্ত সন্ধি ধীরে ধীরে বাঁকা ও শক্ত হতে থাকে।

  • শরীরের নানা স্থানের ত্বকে গুটি দেখা দিতে পারে।

  • কখনো কখনো সন্ধি ছাড়াও চোখ, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়।

এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে রক্তে রিউমাটয়েড ফ্যাক্টর বা অ্যান্টি সিসিপি অ্যান্টিবডি টেস্ট করে পজিটিভ পাওয়া গেলে বুঝতে হবে এটি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস। এ ছাড়া এক্স-রেতে বিশেষ পরিবর্তন দেখা যায়।

চিকিৎসা

যেকোনো বাতরোগের মতো এর চিকিৎসাপ্রণালি জীবনব্যাপী। চিকিৎসায় এ ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ও পঙ্গুত্ব থেকে বাঁচা যায়। চিকিৎসার ধরন ও শুরুটা রোগের তীব্রতা ও জটিলতার ঝুঁকির ওপর নির্ভর করে। প্রথমে কিছুদিন ব্যথানাশক, স্টেরয়েড ইত্যাদি ব্যবহারের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক ওষুধও শুরু করতে হবে। সাধারণত মিথোট্রেক্সেট এ রোগে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

এর বাইরে নানা গোত্রের আরও ওষুধ আছে, যা অবশ্যই বাতরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নিতে হবে। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতেও কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। এ রোগীদের ফলোআপ খুবই জরুরি।

সন্তান ধারণে পরামর্শ

এই রোগে গর্ভধারণে কোনো সমস্যা নেই। তবে কিছু ওষুধ আছে, যা সেবন করার সময় গর্ভধারণ নিরাপদ নয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই রোগীদের গর্ভধারণ করা যাবে না।

শেষ কথা

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় বিগত দশকগুলোতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। অনেক আধুনিক চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়েছে। এই উন্নতির সুফল বাংলাদেশের রোগীরাও পাচ্ছেন। তবে সর্বোচ্চ সুফল পেতে যত দ্রুত রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই ভালো।

  • অধ্যাপক রওশন আরা মেডিসিন ও বাতরোগ বিশেষজ্ঞ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল