একসময় ছয় মাস বয়সেই মেয়েশিশুর কান ফুটো করে দেওয়া হতো। তখন বাড়িতেই নানি-দাদির হাতে সোনামুখি সুই দিয়ে কান ফোঁড়ানো হতো। বর্তমান সময়ে কিছুটা বড় হওয়ার পর এবং পারলারে গিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে কান ফোঁড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে।
১০ বছর বয়স হওয়ার আগে কান ফোঁড়ানো ভালো নয়। কারণ, শিশুদের কানের বৃদ্ধির কারণে সঠিক জায়গাটি পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। আবার বেশি দেরি করাও উচিত নয়।
কান ফুটো করার সময়
যে শিশুর কান ফোঁড়ানো হবে, তাকে আগে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। নয়তো সে ভয় পাবে বা কান্নাকাটি করবে। সে জন্য একটু বড় বা সচেতন হওয়ার পরই কান ফোঁড়ানো উচিত।
কান ফোঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই কানে গোল্ড প্লেটেড বা ইমিটেশনের কানের দুল না পরানোই ভালো। অনেকের এতে অ্যালার্জি হতে পারে।
যে যন্ত্র দিয়ে কান ফোঁড়ানো হবে, তা যেন জীবাণুমুক্ত হয়। যদি বাড়িতেই কান ফোঁড়ানোর ব্যবস্থা হয়, তবে যে সুই দিয়ে কান ফোঁড়ানো হবে তা অবশ্যই গরম পানিতে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। ব্যবহৃত নয়, নতুন সুই ব্যবহার করতে হবে। একজনের ব্যবহৃত সুই আরেকজনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।
অভিজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে বা পারলারে আধুনিক জীবাণুমুক্ত যন্ত্রের সাহায্যে কান ফুটো করাই সবচেয়ে ভালো।
যেদিন কান ফোঁড়ানো হবে, সেদিন বা তার আগের কয়েক দিন শিশুর জ্বর, সংক্রমণ বা অ্যালার্জি জাতীয় অসুস্থতা থাকলে ফোঁড়ানো পিছিয়ে দিতে হবে। শিশু সুস্থ হলে তারপর কান ফোঁড়াতে হবে।
কান ফোঁড়ানোর পর
বারবার কান স্পর্শ করা যাবে না। ভালো করে হাত ধুয়ে তারপর স্পর্শ করতে হবে। শিশুকেও এ বিষয়ে সচেতন করে দিতে হবে।
দিনে দুবার কানের সুতা বা দুল ঘুরিয়ে বা নাড়াচাড়া করে দিতে হবে। কাঁচা অবস্থা থেকে হিলিং হওয়ার সময় ওই স্থানে ফাইব্রোসিস হয়ে কানের ফুটো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বারবার নাড়িয়ে দিলে তা হবে না।
সেভলন বা ডেটল জাতীয় জীবাণুনাশক পানি দিয়ে দ্রবণ করে দিনে একবার কানের ফুটোর চারপাশে ভালো করে মুছে দিন। তাহলে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
কান ফোঁড়ানোর পর লেবু, কমলা বা ভিটামিন সি আছে এমন খাবার খেতে দিন বেশি করে। এতে তাড়াতাড়ি ক্ষতস্থান শুকিয়ে যাবে।
যেসব খাবারে শিশুর অ্যালার্জি আছে, সেসব খাবার একেবারেই দেবেন না। চুলকানি হলে শিশু নখ দিয়ে চুলকাবে এবং সংক্রমণ হবে।
কাঁচা অবস্থায় ওই স্থানে নিজে বা অন্য কেউ হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
সংক্রমণ হলে
শরীরের সবচেয়ে নরম অংশ হলো কানের লতি। এতে কোনো হাড় নেই। তাই এখানে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যদি কানের লতিতে সংক্রমণ হয়, তবে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। পুঁজ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে।