নিয়মিত মোটরবাইক চালান? কাঁধ, ঘাড়সহ শারীরিক জটিলতা এড়াতে পরামর্শগুলো মেনে চলুন

সহজে চলাফেরা, কম খরচে ভ্রমণ আর সময় বাঁচানোর জন্য অনেকেই মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। তাই শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গাতেই মোটরসাইকেল জনপ্রিয় এক বাহন। তবে নিয়মিত বাইক চালাতে গিয়ে আমরা বেশির ভাগ সময় দেহভঙ্গির দিকে খেয়াল করি না। সঠিক ভঙ্গি না রেখে দীর্ঘদিন বাইক চালালে শরীরে ধীরে ধীরে নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে, যা প্রথমে টের না পেলেও পরবর্তী সময়ে বড় শারীরিক জটিলতায় রূপ নিতে পারে।

মোটরসাইকেল চালানো নিরাপদ করতে মানসম্মত হেলমেটের বিকল্প নেইপ্রথম আলো

ভুল ভঙ্গি থেকে তৈরি হওয়া সমস্যা

  • পিঠের ব্যথা: সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা। দীর্ঘ সময় সামনের দিকে ঝুঁকে হ্যান্ডেল ধরা বা সিটের অবস্থান উঁচু-নিচু হলে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়ে।

  • ঘাড় ও কাঁধে টান ও ব্যথা: হেলমেটের বাড়তি ওজন, সোজা না হয়ে কুঁজো ভঙ্গিতে চালানো বা সিট ও হ্যান্ডেলের অসামঞ্জস্যতা ঘাড় ও কাঁধে টান ধরায়, ব্যথা হয়। এতে হতে পারে সার্ভিকাল স্পনডিলোসিস, রোটেটর কাফ ইনজুরির মতো সমস্যা।

  • কোমরে ব্যথা: লম্বা সময় এক ভঙ্গিতে বসে থাকায় কোমরের পেশি শক্ত হয়ে যায়, এতে ব্যথা ও অস্বস্তি তৈরি হয়। হতে পারে পিএলআইডি বা প্রলাপসড লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক। এই রোগ হলে দুটি কশেরুকার মধ্যে থাকা কোমরের নরম অংশ (ডিস্ক) বের হয়ে বাইরের দিকে চলে আসে।

  • হাত ও কবজির ব্যথা: অনেকক্ষণ হ্যান্ডেল ধরে রাখলে ও থ্রটল কষে ধরলে কবজি ও আঙুলে ব্যথা দেখা দেয়। এতে হতে পারে টেনিস এলবো ও কারপাল টানেল সিনড্রোমের মতো সমস্যা।

  • হাঁটু ও নিতম্বে চাপ: পায়ের ভাঁজ ঠিক না থাকলে বা সিট ও ফুটরেস্টের দূরত্ব শরীরের সঙ্গে মানানসই না হলে হাঁটুতে চাপ পড়ে। চাপ পড়ে নিতম্বেও।

  • সার্বিকভাবে ক্লান্তি ও ঝিমুনি অনুভব করতে পারেন।

মোটরসাইকেল চালানোর সময় সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করুন
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিরোধের উপায়

১. সঠিক দেহভঙ্গি: পিঠ সোজা, কাঁধ রিলাক্স, মাথা সোজা রাখতে হবে।
২. বাইক সেটআপ: সিট এমন উচ্চতায় রাখতে হবে যাতে পা স্বাভাবিকভাবে মাটিতে লাগে। হ্যান্ডেল ও ফুটরেস্ট শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ঠিক করতে হবে।
৩. সময় নিয়ন্ত্রণ: একটানা ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের বেশি চালানো উচিত নয়। মাঝেমধ্যে থেমে স্ট্রেচিং করা প্রয়োজন। এটি করলে শরীরের পেশি ও অস্থিসন্ধিগুলোর জড়তা দূর করে শরীরকে গতিশীল ও সচল করবে।
৪. সুরক্ষা সরঞ্জাম: হালকা তবে মজবুত হেলমেট, গ্লাভস, জুতোর মতো সেফটি গিয়ার বা সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করলে চাপ কমে।

ফিজিয়্যাট্রিক ব্যবস্থাপনা

১. প্রাথমিক পর্যায়ে: বিশ্রাম, গরম বা ঠান্ডা সেঁক, ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ (ডাক্তারের পরামর্শে)।
২. ফিজিওথেরাপি: এসডব্লিউডি বা শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, ইউএসটি বা আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, আইএফটি বা ইন্টারফেনশিয়াল থেরাপি এবং টেনস বা ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন।
৩. ব্যায়াম: ঘাড়, কাঁধ, কোমর ও পায়ের স্ট্রেচিং, কোর মাসল (পেট, পিঠ আর নিতম্বের পেশি) ও পিঠ শক্ত করার ব্যায়াম (প্ল্যাঙ্ক ও ব্রিজ), ভঙ্গি সংশোধনের ট্রেনিং।
৪. দীর্ঘ মেয়াদে লক্ষ্য: ব্যথা কমানো, স্বাভাবিক কাজে ফেরানো, আবার যাতে সমস্যা না হয় তার প্রতিরোধ।

দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন

১. বাইকে ওঠার আগে ও পরে হালকা স্ট্রেচিং করা।
২. ভারী ব্যাগ পিঠে না নিয়ে বাইকের সামনের অংশে রাখা।
৩. প্রতিদিন কোর ও পিঠের পেশি শক্ত করার ব্যায়াম করা।
৪. ঘুমের সময় সাপোর্টিভ বালিশ ব্যবহার করা।
৫. দীর্ঘ সময় চালানোর পর কাজ শুরু করার আগে ৫ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া।
একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে সঠিক দেহভঙ্গির অভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম করলে বাইক চালানোর কারণে হওয়া বেশির ভাগ সমস্যা সহজেই প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা সম্ভব।

ডা. সাকিব-আল-নাহিয়ান: রেজিস্ট্রার, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, গ্রিনলাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুন