অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কি ডায়রিয়া হতে পারে

ডায়রিয়া সাধারণত পানিদূষণ ও খাদ্যদূষণের মাধ্যমে বাহিত বিভিন্ন রকমের জীবাণু দিয়ে হয়। তবে জীবাণু সংক্রমণ ছাড়াও কিছু কারণে ডায়রিয়া হতে পারে, অ্যান্টিবায়োটিক সেবন এর মধ্যে অন্যতম। কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পর ডায়রিয়া বা পেট খারাপ হতে পারে।

কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পর ডায়রিয়া বা পেট খারাপ হতে পারে
ছবি: প্রথম আলো

কেন হয়

যেকোনো ওষুধের কোনো না কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। অ্যান্টিবায়োটিকও এর ব্যতিক্রম নয়। অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের জন্য খুব জরুরি ওষুধ। যেকোনো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। তবে অ্যান্টিবায়োটিক আক্রমণকারী জীবাণুকে ধ্বংস করার পাশাপাশি শরীরের উপকারী ও স্বাভাবিকভাবে বসবাস করা নরমাল ফ্লোরাকেও অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের অন্ত্রে কলসট্রিডিয়াম ডিফিসিলি নামক এক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা নরমাল ফ্লোরার কারণে অন্ত্রনালির ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে না। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার পর যখন নরমাল ফ্লোরা দুর্বল হয়ে যায়, তখন এই জীবাণু ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।

কীভাবে বুঝবেন

অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার পর পেটব্যথার লক্ষণ দেখা যায়
ছবি:পেক্সেলস

প্রথমত, নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিবায়োটিক এ ধরনের ডায়রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার পর কয়েকটি লক্ষণ সাধারণত দেখা যায়। যেমন—

১. ডায়রিয়া

২. পেটব্যথা

৩. বমি ভাব বা বমি হওয়া

৪. জ্বরও আসতে পারে

৫. কোনো কোনো রোগীর মলের সঙ্গে রক্তও যায়

কাদের বেশি হয়

যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তুলনামূলক কম, যেমন বয়স্কদের এ ধরনের ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে। কয়েকটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক, যেমন সেফালোস্পোরিন, ক্লিন্ডামাইসিন, পেনিসিলিন–জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক এ ধরনের ডায়রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। যাঁরা ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন, তাঁদেরও ঝুঁকি বেশি থাকে।

করণীয়

ডায়রিয়া হলে খাওয়ার স্যালাইন পান করতেই হবে
ছবি: প্রথম আলো

অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার পর ডায়রিয়া শুরু হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক শুরুর সময়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেই অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করে দিতে হতে পারে। ডায়রিয়া হওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, শরীর থেকে অনেক পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। সেটা পূরণ করতে পর্যাপ্ত পানি, স্যালাইন খেতে হবে। অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়ার উন্নতি হয়। তবে উন্নতি না হলে চিকিৎসক কিছু ওষুধ দিয়ে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ করেন। অনেকে আছেন অ্যান্টিবায়োটিকজনিত ডায়রিয়া সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার পর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ব্যাপারে অধিক সতর্ক হয়ে যান বা ব্যবহার করতে চান না। মনে রাখতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিক একটি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। যেখানে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যথার্থ মনে করবেন, সেখানে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। এটাও মনে রাখতে হবে, সব অ্যান্টিবায়োটিকে এমন হয় না, এমনকি যেসব অ্যান্টিবায়োটিক এ ধরনের ডায়রিয়ার সঙ্গে জড়িত, খুব অল্পসংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটে।

ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা