লিম্ফোমা কী?
লিম্ফোমা রক্তের একধরনের ক্যানসার, যা আমাদের শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ কোষ লিম্ফোসাইট থেকে উৎপন্ন হয়। এই কোষগুলো সাধারণত জীবাণু ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে, কিন্তু কখনো কখনো জিনগত ত্রুটির কারণে এরা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করে ও ক্যানসারে রূপ নেয়। এর ফলে লসিকা গ্রন্থিগুলো ফুলে যায়।
লিম্ফোমা মূলত দুই ধরনের —
১. হজকিন লিম্ফোমা ও
২. নন-হজকিন লিম্ফোমা
হজকিন লিম্ফোমায় ‘রিড-স্টার্নবার্গ সেল’ নামের বিশেষ কোষ পাওয়া যায়, যা এই রোগের পরিচায়ক। অপরদিকে নন-হজকিন লিম্ফোমা অনেক বৈচিত্র্যময় এবং তুলনামূলকভাবে বেশি সংখ্যায় দেখা যায়।
লিম্ফোমার লক্ষণ কী
গলা, বগল বা কুঁচকিতে লিম্ফ নোড বা লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, রাতে অতিরিক্ত ঘাম, ওজন কমে যাওয়া।
অবসাদ, ক্ষুধামান্দ্য ও লিভার প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া।
এই উপসর্গগুলো যদি এক মাসের বেশি স্থায়ী হয়, তবে দ্রুত রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসার প্রধান ধাপ
লিম্ফোমার চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের ধরন, পর্যায় ও রোগীর বয়সের ওপর। প্রচলিত চিকিৎসার মধ্যে আছে—
কেমোথেরাপি
রেডিওথেরাপি
ইমিউনোথেরাপি
টার্গেটেড থেরাপি
বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট
ইমিউনোথেরাপি কী
ইমিউনোথেরাপি একধরনের আধুনিক চিকিৎসা, যা শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
টার্গেটেড থেরাপি: নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক চিকিৎসা
টার্গেটেড থেরাপি ক্যানসার কোষের নির্দিষ্ট জিন বা প্রোটিনকে আঘাত করে, ফলে সুস্থ কোষ কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন ইব্রুটিনিব ও একালাব্রুটিনিব ম্যান্টল সেল লিম্ফোমা ও ওয়ালডেনস্টরম ম্যাক্রোগ্লোবিউলিনেমিয়াতে কার্যকর।
বাংলাদেশে চিকিৎসার সুযোগ
বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি অনেক হাসপাতালেই রিটুক্সিম্যাবসহ বিভিন্ন ইমিউনোথেরাপি ও টার্গেটেড ওষুধ ব্যবহৃত হচ্ছে। উন্নত কেন্দ্রগুলোতে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সুবিধাও রয়েছে।
ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে CAR-T সেল থেরাপি দেশে সহজলভ্য হবে বলে আশা করা যায়।
শেষ কথা
একসময় লিম্ফোমা মানেই ছিল ভয়, অনিশ্চয়তা ও মৃত্যুর আশঙ্কা। কিন্তু এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতিতে এটি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগে পরিণত হয়েছে।
ইমিউনোথেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপি লিম্ফোমা চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা করেছে, যেখানে রোগীর জীবনমান ভালো রাখা এবং দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থতা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য।
ডা. মো. কামরুজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল হেমাটোলজিস্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা