২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মেনোপজের পর নিজেকে আবার নাহয় ভালোবাসুন

সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের দিকে নারীর মাসিক পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টিকে বলা হয় মেনোপজ। প্রথমবার পিরিয়ড হওয়ার মতোই পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়াও স্বাভাবিক, স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা। এই সময় নারী নানা শারীরিক জটিলতার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক সংকটে ভোগেন। বয়সের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে আসা এই মানসিক সংকট মোকাবিলায় মানসিকভাবে সুস্থ, স্বাভাবিক থাকার জন্য নারীর অনেক কিছু করার আছে। কী সেগুলো, জেনে নেওয়া যাক।

জীবন শুরু হতে পারে মেনোপজের পর থেকেও...
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

কথা বলুন মন খুলে

আপনার সঙ্গী, সন্তান কিংবা আপনজনদের নিজের মনের কথা খুলে বলুন। তাঁদেরকে বলুন আপনার কী ভালো লাগছে আর কী লাগছে না। মনের কথা চেপে রাখলে মন ভালো হয় না, বরং বিষণ্ন হয়, মনকে আরও আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরে।  

ঘর থেকে বের হোন  

হাঁটতে বের হোন। সামাজিক জীবনযাপন করুন। নানা রকমের গ্রুপ আছে, আপনি নিজে যেগুলোতে আগ্রহী, সেগুলোতে যোগ দিন। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটান। আত্মীয়স্বজনের বাসায় যান। পুরোনো বন্ধুকে ফোন করুন। অনেক দিন কথা বলা হয় না, এমন কাউকে ফোন করে কিছুক্ষণ গল্প করুন। সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়ান। এককথায় নিজেকে আরেকটু মুক্ত করুন।

স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করুন

সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়ামের বিকল্প নেই। আর মেনোপজের সময় অনেকের ওজন বেড়ে যায়, তাই নিয়মিত সুষম খাবার খেতে হবে, হালকা ব্যায়াম করতে হবে। মনের সুস্থতার জন্য কার্যকর হচ্ছে মেডিটেশন। এ ছাড়া ক্যাফেইন ও চিনিযুক্ত খাবার, সিগারেট, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। এ-জাতীয় খাবার যেমন শরীরের ক্ষতি করে, তেমনি বিষণ্নতা বাড়ায়। প্রতিদিন সকালে কিছু সময় রোদে কাটাতে চেষ্টা করুন, এতে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দূর হবে। ক্যালসিয়াম আর আয়রনযুক্ত খাবার খান। এ সময় মূলত এই দুইয়ের ঘাটতিতে নানা জটিলতা দেখা দেয়। মৌসুমি ফল, শাকসবজি বেশি বেশি খান।

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন, সেলফি তুলোন, সেই ছবি পোস্ট করুন ফেসবুকে–ইনস্টাগ্রামে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
আরও পড়ুন

আরেকবার প্রেমে পড়তে নেই মানা!


বিয়ের পর থেকে সেই যে আপনার দায়িত্ব পালন শুরু হয়েছে, বহু বছর হয়তো এমনটাই চলেছে। শুরুতে ছিল শ্বশুরবাড়ি বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব। সন্তান হয়েছে। যোগ হয়েছে নতুন দায়িত্ব। দুই যুগ পেরিয়ে গেছে সন্তানদের মাথার ওপর বটবৃক্ষ হয়ে থাকতে থাকতে। তারপর তাঁদের বিয়ে হয়েছে, আলাদা সংসার হয়েছে। জীবনের এই পর্যায়ে এসে পাওয়া না–পাওয়ার হিসাব মেলাতে বসে আপনি হয়তো লক্ষ করলেন, সকালের নাশতা, বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনা, অতিথি আপ্যায়নের শেষে ধুয়েমুছে থালাবাটি উঠিয়ে রাখতে রাখতে নিজেদের দাম্পত্য জীবনটাকেই হয়তো উপভোগ করা হয়নি। সেটাই এ সময়ে এসে শুরু করতে মানা কোথায়?

নতুন করে জীবনসঙ্গীর প্রেমে পড়ুন। তাঁর সঙ্গে সুখস্মৃতিগুলো ঝালিয়ে নিন। সকালে নাশতার টেবিলে গল্প জুড়ে দিয়ে গরম চা দু–এক দিন ঠান্ডা হয়ে গেলে ক্ষতি কী! বিয়ের পর হয়তো হানিমুনে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য ছিল না, সময় মেলেনি। এবার যান, দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসুন। জীবনসঙ্গীকে পাশে নিয়ে হাঁটুন। পার্কে বসে বাদাম খান। সিনেমা দেখুন। জীবনে যা কিছু করতে পারেননি বলে মনের ভেতরে আক্ষেপ পুষে রেখেছেন, সেগুলো সবই করুন!

যদি একা হন

আপনি যদি একা নারী হন, নিঃসঙ্গতায় ভোগেন, এমন সময়ে আপনি নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতেই পারেন। সেসব পরিচয়পর্ব ছাপিয়ে আপনি যদি আবার নতুন করে কারও প্রেমে পড়েই যান, দোষ কী? বিকেল করে যান না কফি খেতে। আবার টিপ দিন, লিপস্টিকের রঙে আপনার ঠোঁট রঙিন হোক, মন রঙিন হোক। খানিক গল্প করুন। হাসুন। শাড়ির ভাঁজ ভাঙুন। আয়নার সামনে মেলে ধরে নিজেকে ষোড়শীর মতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখুন আরেকবার। নিজেকে ভালোবাসুন। অন্যকেও দিন ভালোবাসার উষ্ণ ভাগ।

গভীর কথোপকথনে হালকা হোন। কফি শপে জিরিয়ে নিন। মানুষ একা বাঁচতে পারে না। একা সময়ে একজন ‘ইমোশনাল পার্টনার’ই হতে পারে তাঁর সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। প্রেমে পড়লে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এড্রিনালিন আর অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ হয় সবচেয়ে বেশি। এই দুই হরমোন হলো লাভ হরমোন আর ফিল গুড হরমোন। প্রেমে পড়ার কোনো বয়স নেই। এমনকি জীবনের সব আওয়াজ মিলিয়ে এলেও একটা সময় আপনি নতুন করে জুটি বাঁধার মতো সাহসী সিদ্ধান্তও নিতে পারেন। মেনোপজের পর নির্ভার হয়ে উপভোগ করা যায় যৌনজীবন। মনে রাখবেন, জীবন শুরু হতে পারে মেনোপজের পর থেকেও।

নিজেকে ভালোবাসুন নতুন করে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

পর্যাপ্ত ঘুম


জীবনের যেকোনো সময়েই পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। ভালো থাকার জন্য ভালো ঘুম একান্ত প্রয়োজন। ঘুম আমাদের মেটাবলিজম সিস্টেম আর ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। জীবনে স্থিতি দেয়। রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে। হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা কমায়। দীর্ঘ আর স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিশক্তি গুছিয়ে জড়ো করে রাখে। শারীরিক, মানসিক ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম ঠিক রাখার জন্য জীবনের মোট সময়ের তিন ভাগের এক ভাগ ঘুমের কোনো বিকল্প নেই।

এবার নিজের দিকে তাকান

সংসার, সন্তান তো অনেক হলো, সব আয়োজন শেষে এবার একটু নিজের দিকে তাকান। প্রথম প্রেমের পুরুষের দিকে যেমনভাবে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হতো, তেমনিভাবে নিজের দিকে তাকান। প্রথম প্রেমের যত্ন কিংবা ছুঁয়ে দেখার মতো এই সময়ে নিজের একটু যত্ন নিন। নিজের জন্য সময় বের করুন। কফি বা চা বানিয়ে বই হাতে বারান্দায় বসুন কিছুক্ষণ। বৃষ্টি দেখুন। মনে রাখবেন, নিজের যত্ন নেওয়া একটা মৌলিক প্রয়োজন।

ব্যস্ত রাখুন  


‘সুস্থ দেহ, সুন্দর মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন।’  

সৃষ্টিশীল কিছু করার চেষ্টা করুন। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। রুটিনমাফিক জীবন যাপন করুন। যা আগে করার ইচ্ছা হয়েছিল, কিন্তু সময়ে বা সুযোগে হয়নি, এমন কিছু শুরু করুন। সিনেমা দেখা, লেখালেখি, গান, নাচ, রান্না, আবৃত্তি, বাগান করা, ব্যবসা, উদ্যোগ, প্রাণী পালন—যা আপনাকে আনন্দ দেয়, তা-ই করুন। সমাজসৃষ্ট নারীর গুরুত্বের জায়গা, নারীকে মাপার সেকেলে স্ট্যান্ডার্ডগুলো ভাঙুন!

মেনোপজের শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানুন, সচেতন হন। এই সময় কোনো কিছুতেই নিজেকে জোর করবেন না, বরং কিশোরীর নাজুক শরীরের মতো নিজেকে আলতো করে আগলে রাখুন।

হারিয়ে যেতে নেই মানা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বেশির ভাগ পরিবারের মূল উপার্জনকারীরা এখনো পুরুষ হওয়ায় পুরুষদের ভালো-মন্দ নিয়ে যত ভাবা হয়, নারীকে নিয়ে ততটা ভাবা হয় না। নারীর শারীরিক অসুস্থতাই যেখানে গুরুত্ব পায় না, সেখানে মানসিক অসুস্থতা নিয়ে ভাবা একপ্রকার বিলাসিতা বৈকি। সবার আগে নারীকেই তাঁর নিজের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, নিজেকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবারের সাহায্য নিতে হবে। প্রয়োজনে কাপল থেরাপি বা ফ্যামিলি কাউন্সেলিং করতে হবে। এই সময়ে পরিবারকে সবচেয়ে বেশি পাশে থাকা উচিত। তাঁকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত রাখতে যা করণীয়, তার সবই করতে হবে।

আরও পড়ুন