উচ্চতাভীতি কেন হয়

মাথা ঘোরানো, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে বলে মনে হওয়া উচ্চতাভীতির উপসর্গ
ছবি : সংগৃহীত

সবুজ পাহাড়। চোখজুড়ানো শ্যামলিমা। প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার অপার আনন্দের এমন মুহূর্তে বাদ সাধতে পারে আপনার উচ্চতাভীতি। জরুরি প্রয়োজনে বিমানে করে কোথাও যাওয়ার সময়ও উচ্চতাভীতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েন কেউ কেউ। কেবল পাহাড়ে বা বিমানই-বা কেন? রোজকার জীবনেও উচ্চতাভীতির কারণে বিপাকে পড়ার ঘটনা ঘটে। বহুতল ভবনের ব্যালকনি, ছাদ, এমনকি লিফটেও উচ্চতাজনিত ভয়ের কারণে মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

খেয়াল রাখবেন, উচ্চতাভীতির কারণে জীবনের আনন্দগুলো যেন হারিয়ে না যায়
ছবি : পেক্সেলস ডটকম

কেন এই ভয়

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চতা নিয়ে এই ভীতির নির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকে না। এটি একটি মানসিক বিষয়। কারও কারও ক্ষেত্রে অতীতে উচ্চতা-সংক্রান্ত দুর্ঘটনার ইতিহাস থাকে। তবে নির্দিষ্ট কোনো শারীরিক সমস্যা কিংবা শারীরিক দুর্বলতা এ জন্য দায়ী নয়। উঁচু জায়গায় উঠলে যে কারোরই একটু-আধটু ভয় হতে পারে। তবে যাঁদের ভীতি প্রকট আকার ধারণ করে, কেবল তাঁদের সমস্যাটিকেই উচ্চতাভীতি বলা হয়, এমনটাই জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনূর শারমিন।

আরও কারণ

মানবমন নাকি বড্ড বিচিত্র। মস্তিষ্কে জমা হওয়া কোনো দুঃসহ স্মৃতি কখন কোনো পরিস্থিতিতে মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, বলা মুশকিল! অনিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠা কিংবা অতীতে বড় কোনো মানসিক বিপর্যয়ের শিকার ব্যক্তিরা উচ্চতাভীতিতে ভুগতে পারেন। কারও কারও উচ্চতাভীতির সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ভাট্টার জায়গায় যাওয়া নিয়েও ভীতি থাকতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য কারও মধ্যেও এ ধরনের ভীতি দেখা যায়। উচ্চতাভীতিতে আক্রান্ত ব্যক্তির মনের নানান দিক বিষয়ে বলছিলেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জোবায়ের মিয়া।

আরও পড়ুন
উঁচু জায়গায় উঠলে যে কারোরই একটু-আধটু ভয় হতে পারে।
ছবি : পেক্সেলস ডটকম

উপসর্গগুলো জেনে নিন

উঁচু স্থানে গেলে অস্থির হয়ে পড়া, মাথা ঘোরানো, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে বলে মনে হওয়া উচ্চতাভীতির উপসর্গ। এমনকি ওই ব্যক্তি ওই মুহূর্তেই মারা যাচ্ছেন—এমনটাও অনুভব করতে পারেন।

তাহলে কি ভুগবেন আজীবন

আপনার উচ্চতাভীতি থাকলে যে কখনোই উঁচু জায়গায় স্বাভাবিকভাবে যেতে পারবেন না, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। যাঁদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সমস্যা দূর হবে। এ ধরনের সমস্যা অনুভব করলে মানসিক রোগবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপির মাধ্যমে সমস্যাটি দূর করা যায়। চিকিৎসার অংশ হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রথমে অপর ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে স্বল্প উচ্চতার কোনো স্থানে যেতে হয়। ধীরে ধীরে বেশি উচ্চতায় ওঠার অভ্যাস করা হয়। তা ছাড়া ভীতিকর পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখার জন্য স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কিছু শিথিলকরণ পদ্ধতি (রিল্যাক্সেশন টেকনিক) অনুশীলন করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং যোগব্যায়ামের মতো পদ্ধতি। এভাবে একসময় তিনি ভীতিজাগানিয়া পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখতে সক্ষম হবেন এবং সেই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে পারবেন। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ওষুধ সেবনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।