শিশুর পা ব্যথা বা গ্রোয়িং পেইন কেন হয়, সমাধান কী
শিশুর পা ব্যথা মানেই যে বাতজ্বর, এমনটা নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যান্য কারণেই শিশুর পা ব্যথা হয়। সবচেয়ে বেশি যে কারণে ব্যথা হয়, তা হলো ‘গ্রোয়িং পেইন’। জেনে নিন এর কারণ ও করণীয়।
শুরুতেই মিলিয়ে দেখুন, আপনার শিশুসন্তানের মধ্যে এসব লক্ষণ দেখা গেছে কি না—
সে হঠাৎ হাঁটতে অস্বস্তি বোধ করছে বা খুঁড়িয়ে হাঁটছে।
কোনো কোনো শিশুর পায়ের ব্যথা কখনো রাতে বেশি হয়, কারও আবার সকালে।
কারও কারও পা টিপে দিলে আরাম লাগে, কারও ক্ষেত্রে বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যায়।
কোনো কোনো শিশু হাঁটাহাঁটি বা কাজ করলে ভালো থাকে।
কারও আবার অস্থিসন্ধি ফুলে যায়।
র্যাশও দেখা দেয়।
ওপরের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে স্বাভাবিকভাবেই মা–বাবা পড়েন দুশ্চিন্তায়। তাঁদের মনে দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধে—এই বয়সে পা ব্যথা, বাতজ্বর নয় তো?
পা ব্যথা মানেই কি বাতজ্বর
শিশুর পা ব্যথা মানেই যে বাতজ্বর, এমনটা নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যান্য কারণেই শিশুর পা ব্যথা হয়। সবচেয়ে বেশি যে কারণে ব্যথা হয়, তা হলো ‘গ্রোয়িং পেইন’। নামে গ্রোয়িং পেইন হলেও শিশু বড় হয়ে যাওয়ার জন্য এমন ব্যথা হয় অথবা এই ব্যথা শিশুর বেড়ে ওঠাকে বাধাগ্রস্ত করে, এমনটিও নয়।
ঠিক কী কারণে এই ব্যথা হয়, তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা যায়, মাংসপেশির অতিরিক্ত ব্যবহার, যেমন সারাদিন খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপের কারণে পায়ের মাংসপেশিতে চাপ পড়ে।
আবার কিছু শিশুর ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা একদমই কম থাকে। তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। আবার কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুর ভিটামিন ডির মাত্রা কম থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এই ব্যথা বেশি দেখা যায়।
গ্রোয়িং পেইন কখন হয়
সাধারণত তিন বছরের পর থেকে গ্রোয়িং পেইন হয়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ৩-৬ বয়সীদের মধ্যে। সাধারণত ১০–১২ বছর বয়সের পর এই ব্যথা ভালো হয়ে যায়। এই ব্যথা সাধারণত দুই ঊরুর বা পায়ের মাংসপেশিতে হয়।
শিশু অনেক সময় বলে, তার পায়ের মধ্যে কামড়াচ্ছে। সন্ধ্যায় বা রাতের দিকে ব্যথা বাড়ে, সাধারণত কয়েক ঘণ্টা পর এই ব্যথা কমে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠলে শিশুর মনেও থাকে না রাতে তার পা ব্যথা ছিল। তাই সে আবার সারা দিন পূর্ণোদ্যমে খেলাধুলা, দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। সন্ধ্যার পর আবার সেই ব্যথা ফিরে আসে। তবে সাধারণত প্রতিদিন একই মাত্রায় ব্যথা হয় না।
কী করতে হবে
হালকা মালিশ বা ব্যায়াম এবং কুসুম গরম পানির সেঁক দেওয়ার মতো ঘরোয়া কিছু চিকিৎসাতেই এই ব্যথা ভালো হয়ে যায়।
কোনো শিশুর দেহে ভিটামিন ডির মাত্রা খুব কম থাকলে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট লাগতে পারে।
শিশুকে পুষ্টিকর খাবার, যেমন দুধ ও দুধের তৈরি খাবার বেশি দিতে হবে।
ব্যথা বেশি হলে প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
অন্য যেসব কারণে পা ব্যথা হয়
শিশুর পা ব্যথা গ্রোয়িং পেইন ছাড়াও অন্যান্য কারণে হতে পারে—
আঘাত লাগা বা অনুপযুক্ত জুতা পরার কারণে কারও কারও ব্যথা হয়।
কারও কারও বেলায় কিছু রোগের কারণে পায়ে ব্যথা হয়। যেমন ভাইরাল মায়োসাইটিস, পলিমায়োসাইটিস, ডারমাটোমায়োসাইটিস, জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস, রিউম্যাটিক ফিভার বা বাতজ্বর, অস্টিওমায়েলাইটিস, হাড়ের টিবি বা টিউমার।
লিউকেমিয়ার মতো জটিল রোগেও এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই শিশুর পা ব্যথাকে সব সময় গ্রোয়িং পেইন ভেবে বসে থাকলেও চলবে না।
প্রয়োজনে শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন
যেকোনো এক পায়ে বা হাতে ব্যথা হলে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যথা থাকলে।
ব্যথার কারণে রাতে শিশুর ঘুম ভেঙে গেলে।
ব্যথার কারণে শিশু হাঁটতে না পারলে বা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটলে।
বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে শিশুর অসুবিধা হলে।
অস্থিসন্ধি বা অস্থি ফুলে গেলে, লালচে হয়ে থাকলে।
ব্যথার সঙ্গে জ্বর থাকলে।
শরীরে র্যাশ বা চামড়ার নিচে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য কালো দাগ দেখা দিলে।
খাবারে অনীহা এবং শিশুর ওজন কমে গেলে।
শিশু দৈনন্দিন খেলাধুলা করতে না পারলে বা অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে গেলে।
শিশুর শরীরে আঘাতের লক্ষণ থাকলে।