গরমে ঘাম হওয়া কি খারাপ

গরম পড়ছে। গরমের দিনে ঘাম তো হবেই। ঘামের কটু গন্ধ বিরক্তির উদ্রেক করলেও ঘাম হওয়াটা কিন্তু খারাপ নয়; বরং গরম আবহাওয়ায় বেঁচে থাকার জন্য এটি দেহের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তবে এ কথাও ঠিক যে ঘামের মাধ্যমে দেহ থেকে প্রচুর পানি ও প্রয়োজনীয় লবণ বেরিয়ে যায়। এর ফলে হতে পারে পানিশূন্যতা ও লবণের ঘাটতি। তাই গরমের সময় ঘামের বিষয়ে সচেতন থাকা আবশ্যক।

ভেজা কাপড় দিয়ে দ্রুত ঘাম মুছে ফেলুন।
মডেল: জাহিদ, ছবি: সুমন ইউসুফ

যখন আপনি বেশ ঘামছেন, তখন ছায়াশীতল পরিবেশে অবস্থান করতে চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল হচ্ছে এমন জায়গায় থাকতে পারলে ভালো। সেটি সম্ভব না হলে সব সময় সঙ্গে রাখতে পারেন ছোট্ট একটি ফ্যান, যা ব্যাটারিতে চলে। ঘাম হলে কিন্তু ঘাম মুছেও ফেলতে হবে। তা না হলে তাতে জন্ম নেবে জীবাণু। জীবাণুর কারণে ঘামে কটু গন্ধ হয়। আর এসব জীবাণু দিয়ে ত্বকে সংক্রমণ হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান।

ঘাটতি মেটাতে যা করবেন

ঘাম হলে পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। অতিরিক্ত ঘাম হলে ওরস্যালাইন কিংবা ডাবের পানি খাওয়া উচিত। এগুলোর বিকল্প হতে পারে সামান্য লবণ মিশ্রিত পানি কিংবা পানীয়। মনে রাখতে হবে, গ্লুকোজ কিংবা চিনি মেশানো তরল খাবার খেলে কিন্তু লবণের ঘাটতি পূরণ হয় না। তা ছাড়া অতিরিক্ত চিনি বা গ্লুকোজ গ্রহণ করা খুব একটা স্বাস্থ্যকরও নয়। উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগ কিংবা হৃৎপিণ্ডের বৈকল্য থাকলে অবশ্য বাড়তি লবণ খেতে নিষেধ করা হয়। তাঁদের কারও কারও আবার পানি পানের বেলায়ও থাকে বিধিনিষেধ। কিন্তু অতিরিক্ত ঘাম হলে তাঁরা ডাবের পানি, ওরস্যালাইন বা সামান্য লবণ মেশানো পানি খেতে পারবেন। অর্থাৎ ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়া পানি এবং লবণের ঘাটতি সবাইকেই পূরণ করতে হবে।

ঘেমে গেলে যত দ্রুত সম্ভব, শিশুর ঘাম মুছে দিন
মডেল: মৃন্ময়ী ও রাবেয়া, ছবি: সুমন ইউসুফ

ত্বকের জন্য যা কিছু

গরমের দিনে ঘামের দুর্গন্ধ এড়াতে নানা প্রসাধনী ব্যবহার করতে পারেন। এতে কোনো ক্ষতি নেই। তবে মানসম্মত প্রসাধনসামগ্রী বেছে নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

ঘাম হলে ঠান্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে চেষ্টা করুন। ভেজা (ওয়েট) টিস্যুও কাজে লাগাতে পারেন। তা সম্ভব না হলেও যেকোনো শুকনা কাপড়, রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে ত্বক মুছে ফেলুন।

ভেজা কাপড় বা ভেজা টিস্যু পেপার দিয়ে ঘাম মোছার পরেও কিন্তু শুকনা কিছু দিয়ে ত্বক মুছতে হবে। ত্বক ভেজা থেকে গেলে ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে।

শরীরের যেসব স্থানে বেশি লোম থাকে, সাধারণত সেসব স্থান বেশি ঘামে। শরীরের এসব স্থান অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। লোম ছোট করে রাখুন।

যে পোশাক পরা অবস্থায় ঘাম হয়েছে, তা যত দ্রুত সম্ভব বদলে ফেলতে চেষ্টা করুন।

অতিরিক্ত ঘাম হলে আরও যা খেয়াল রাখবেন

অতিরিক্ত ঘাম হলে মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা, অবসন্নতা কিংবা ক্ষুধামান্দ্যর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ রকম হলে অবশ্যই ঠান্ডা স্থানে বিশ্রাম নিন। সম্ভব হলে শরীরে ঠান্ডা পানি ঢালুন। মাথায়ও পানি দিতে পারেন। পানি ঢালতে না পারলে পানি দিয়ে শরীর ও মাথা মুছে ফেলুন। এমন পরিস্থিতিতে তরল খাবারও খেতে হয়।

নির্দিষ্ট কিছু হরমোনের তারতম্য হয়ে থাকলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। যদি এমনটা মনে হয়, একই তাপমাত্রায় আপনি আগের চেয়ে বেশি ঘামছেন কিংবা ঘামের কারণে যদি কখনো আপনার স্বাভাবিক জীবনধারা ব্যাহত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন এ সময়
ছবি: প্রথম আলো

এমনটাও কিন্তু হতে পারে যে আপাতদৃষ্টে হয়তো ঘাম হওয়ার কোনো কারণই নেই, তবুও আপনি বা আপনার আপনজন ঘামছেন। এভাবে কারণ ছাড়াই হঠাৎ অতিরিক্ত ঘাম হওয়াটা কোনো শারীরিক সমস্যার উপসর্গ হতে পারে। এই যেমন রক্তের সুগার কমে গেলে কিংবা হার্ট অ্যাটাক হলে এমনভাবে ঘাম হতে পারে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের সুগার কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই তাঁদের এভাবে ঘাম হলে দ্রুত চিনি মেশানো পানি খাইয়ে দিতে হয় এবং রক্তের সুগার মাপতে হয়। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শও নিতে হয়। ডায়াবেটিস না থাকলেও হঠাৎ খুব ঘাম হলে নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে হবে জরুরিভাবে। বুঝতেই পারছেন, এটি যদি হার্ট অ্যাটাকের কারণে হয়ে থাকে, তাহলে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা শুরু করাটা কত জরুরি।