স্ট্রোকের পর ফিজিওথেরাপি 

কোনো কারণে মস্তিষ্কের নিজস্ব রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে স্নায়ুকোষ নষ্ট হয়ে যাওয়াকে স্ট্রোক বলে। স্ট্রোককে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট বলা হয়; যা বাংলা করলে দাঁড়ায়, মস্তিষ্কের রক্তনালির দুর্ঘটনা। মস্তিষ্কের বিভিন্ন জায়গা শরীরের বিভিন্ন কাজের জন্য নির্দিষ্ট থাকে। তাই মস্তিষ্কের কোথায়, কতটুকু আক্রান্ত হয়েছে, সেটির ওপর নির্ভর করে স্ট্রোকের তীব্রতা ও লক্ষণ। 

স্ট্রোকের কারণ

● মস্তিষ্কের রক্তনালিতে বাধা বা ব্লক সৃষ্টি হলে আক্রান্ত অংশের স্নায়ুকোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। 

● মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটলে আক্রান্ত অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উচ্চ রক্তচাপ এ স্ট্রোকের অন্যতম কারণ; যেখানে ছোট ছোট রক্তনালি ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয়। ফলে মস্তিষ্কের মধ্যে চাপ বাড়ে।

প্রাথমিক উপসর্গ 

● হঠাৎ অতিরিক্ত মাথাব্যথা।

● মুখ, হাত ও পা অবশ হয়ে যাওয়া (সাধারণত শরীরের যেকোনো এক পাশ)।

● কথা বলতে ও বুঝতে সমস্যা। 

● এক বা দুই চোখে দেখতে সমস্যা। 

● ব্যালান্স বা ভারসাম্য নষ্ট হওয়া। 

● মাথা ঘোরা ও হাঁটতে সমস্যা।

স্ট্রোক–পরবর্তী সমস্যা 

● শরীরের এক পাশ অথবা অনেক সময় দুই পাশ দীর্ঘ সময়ের জন্য অবশ হয়ে যায়। 

● মাংসপেশির টান প্রথমে শিথিল হয়ে কমে গেলেও পরে আস্তে আস্তে টান বাড়তে থাকে ও শক্ত হয়ে যায়।

● হাত–পায়ে ব্যথা, পেশি শুকিয়ে যাওয়া, হাঁটাচলা ও নড়াচড়ার ক্ষমতা হ্রাস, শুয়ে থাকার জন্য চাপজনিত ঘা দেখা দেওয়া, শোল্ডার বা ঘাড়ের জয়েন্টে সমস্যা।

কেন ফিজিওথেরাপি 

স্ট্রোকের রোগীর চিকিৎসায় মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিমের চিকিৎসা প্রয়োজন। ওষুধ পুরোপুরি শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারে না। তাই স্ট্রোক–পরবর্তী সমস্যা দূর করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন সঠিক ফিজিওথেরাপি। স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে ২৪ ঘণ্টার ভেতর ফিজিওথেরাপি শুরুর ব্যাপারে পরামর্শ করা উচিত। মনে রাখবেন, স্ট্রোকের পর যত দ্রুত ফিজিওথেরাপি শুরু করা যাবে, রোগীর কার্যক্ষমতা ফিরে আসার সম্ভাবনা তত বেশি থাকবে।

প্রাথমিক অবস্থায় ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব 

● শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিককরণ। 

● সঠিক পজিশনিং।

● মাংসপেশির স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য বজায় রাখা। 

দুই-তিন সপ্তাহ পর গুরুত্ব

● মাংসপেশির স্বাভাবিক টান ফেরানো।

● শরীরের স্বাভাবিক অ্যালাইনমেন্ট ফেরানো। 

● বিভিন্ন জয়েন্টের স্বাভাবিক নাড়ানোর ক্ষমতা বা মুভমেন্ট ফেরানো। 

● ব্যালান্স ও কো-অর্ডিনেশন উন্নত করা এবং স্বাভাবিক হাঁটার ক্ষমতা ফেরানো। 

● রোগীর কর্মদক্ষতা বাড়ানো। 

● রোগীর মানসিক অবস্থা উন্নতি করা। 

●রোগীকে সমাজের মূলস্রোতে ফেরতে সহায়তা করা।

এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা