চশমার বিকল্প কি লেজার সার্জারি?

অনেকেই এই প্রশ্ন করেন, চশমার বিকল্প কি লেজার সার্জারি? চশমা পরলে একটা পড়ুয়া ভাব আসে বলে অনেকেই যেমন চশমা পরতে পছন্দ করেন, ঠিক তার বিপরীত দিকও আছে। সৌন্দর্য কমে যাবে ভেবে চশমা পরতে পছন্দ করেন না অনেকে। আবার পাওয়ার বেশি হলে ভারী চশমা পরতেও ইচ্ছা করে না অনেকের। অন্য দিকে চক্ষুবিজ্ঞানের এত এত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মধ্যে তাহলে চশমার বিকল্প কী হতে পারে?

ভারী চশমা পরতেও ইচ্ছা করে না অনেকের
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

চশমার বিকল্প হতে পারে কন্ট্যাক্ট লেন্স, লেজার সার্জারি অথবা আরও আধুনিক পদ্ধতি লেন্স ইমপ্ল্যান্টেশন। চশমার বিকল্প লেজার সার্জারির মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রচলিত ল্যাসিক আর স্মাইল। এ ছাড়া আছে লাসেক, পিআরকে।

লেজার সার্জারি কী

লেজার মূলত আলো। এই আলো ব্যবহার করে যেমন হীরা কিংবা শক্ত ধাতু কেটে ফেলা যায়, তেমনই চোখের কর্নিয়ার মতো সংবেদনশীল অঙ্গকে দেওয়া যায় নতুন আকৃতি। ল্যাসিক কিংবা স্মাইল সার্জারির জন্য ব্যবহার করা হয় এক্সাইমার লেজার।

এটি কর্নিয়ার টিস্যুর আণবিক বন্ধনকে ভেঙে বাষ্পীভূত করে ফেলে।
কর্নিয়ার পাওয়ার চোখের মোট পাওয়ারের দুই–তৃতীয়াংশ। কর্নিয়ার আকৃতি আর পুরুত্ব এর উৎস। কার্যত কর্নিয়া একধরনের উত্তল লেন্স। কর্নিয়ার পুরুত্ব কমানো বা বাড়ানোর মাধ্যমে চোখের মোট অপটিক্যাল সিস্টেমের পাওয়ারের পরিবর্তন করা যায়।

লেজার সার্জারির পর আর চশমা ব্যবহার করতে হয় না
ছবি: পেক্সেলস

এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে লেজার সার্জারির মাধ্যমে কর্নিয়ার পুরুত্ব পরিবর্তন করে চোখের মোট পাওয়ার পরিবর্তন করা হয়, যাতে আর চশমা ব্যবহার করতে না হয়।

লেজার সার্জারি কি সব ক্ষেত্রেই কার্যকর

উত্তর হলো, এটা নির্ভর করে পাওয়ারের ধরনের ওপর। বয়স চল্লিশের পর যে কাছের জিনিস কম দেখার সমস্যা তৈরি হয়, তার জন্য লেজার সার্জারি করা যায় না।

আরও পড়ুন

সবাই কি করাতে পারবেন

উত্তর হলো, না। কেননা লেজার সার্জারি করতে হলে প্রথমে চোখের পাওয়ার দুই বছর স্থিতিশীল থাকতে হয়। অর্থাৎ দুই বছরের মধ্যে কারও চোখের পাওয়ারে বড় পরিবর্তন হতে পারবে না। এরপর আছে কর্নিয়ার পুরুত্ব। কর্নিয়া বেশি পাতলা হলে সেখানে লেজার সার্জারি করা সম্ভব নয়। এরপর আছে বয়সের বিষয়টি।

১৮ বছরের ওপরে যেকোনো বয়সে করা যায়। আবার বয়স চল্লিশের কোঠায় চলে গেলে না করাই ভালো। কেননা তত দিনে প্রেসবায়োপিয়ার কারণে চশমার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

কাজেই চশমা একদমই যাঁরা ব্যবহার করতে চান না, তাঁদের জন্য ল্যাসিক প্রযোজ্য নয়। তবে কারও যদি অনেক ভারী চশমা ব্যবহার করতে হয়, তবে লেজার সার্জারির মাধ্যমে চশমার লেন্সের পুরুত্ব কমানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে লেজার সার্জারি ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে সার্জারি করা যাবে কি  না, তা একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ রোগীর সব অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বয়স চল্লিশের কোঠায় চলে গেলে প্রেসবায়োপিয়ার কারণে চশমার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়
মডেল: সারা ফ্যায়রুজ। ছবি: প্রথম আলো

ল্যাসিক সার্জারি একসঙ্গে দুই চোখে করা যায়। চোখে ড্রপ দিয়ে অবশ করে নেওয়া হয়, তাই ব্যথা লাগে না। ল্যাসিক সার্জারির পর দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করা যায়। ল্যাসিক সার্জারি করার পর খেলাধুলা করা, সাঁতার কাটা সম্পূর্ণ নিরাপদ। সব সার্জারির মতো ল্যাসিক সার্জারিরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেমন চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
চশমার বিকল্প হিসেবে তাই ল্যাসিক ও স্মাইলের মতো লেজার সার্জারি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

আরও পড়ুন