প্লাস্টিকের পাত্র বা বোতলের এই ক্ষতিকর দিকগুলো কি জানতেন

প্লাস্টিকের কিছু রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা প্লাস্টিক থেকে বেরিয়ে গিয়ে আমাদের খাবার ও পানীয়তে প্রবেশ করতে পারে।
ছবি: পেক্সেলস

পানির বোতল থেকে শুরু করে ফ্লাস্ক, র‍্যাপিং, নানা ধরনের কনটেইনার, সর্বত্রই আমরা প্লাস্টিকে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। কাপড় বা পাটের ব্যাগ, কাচের বোতল, এসবের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক। কিন্তু প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলো কি আমরা জানি?

প্লাস্টিকের সমস্যা কী

গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিকের কিছু রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা প্লাস্টিক থেকে বেরিয়ে গিয়ে আমাদের খাবার ও পানীয়তে প্রবেশ করতে পারে। এসব রাসায়নিক দ্রব্য যেমন ফ্যালেটস ও বিসফেনলের সঙ্গে নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যার সম্পর্ক আছে। যেমন শারীরিক স্থূলতা, নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যা অথবা গর্ভধারণের ক্ষমতা হ্রাস।
প্লাস্টিক পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া প্লাস্টিক থেকে নির্গত রাসায়নিক ও মাইক্রোপ্লাস্টিক খাদ্যশৃঙ্খল এবং পরিবেশে প্রবেশ করে আরও ক্ষতি করতে পারে।

প্লাস্টিকের বাক্স মাইক্রোওয়েভ ওভেনে দেওয়া কি নিরাপদ?

প্লাস্টিকের পাত্র তাপের সংস্পর্শে এলে সমস্যাটি আরও প্রকট হয়ে ওঠে; অর্থাৎ প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করলে ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনে কাচ বা সিরামিকের পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।


প্লাস্টিক কনটেইনার ব্যবহারের অন্যতম ঝুঁকি হলো বিপিএ। বিসফিনল-এ নামের রাসায়নিকটি ব্যবহৃত হয় শক্ত, স্বচ্ছ প্লাস্টিক তৈরিতে। এ ছাড়া কিছু ধাতব ক্যান তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়। প্লাস্টিকের কনটেইনার থেকে খাবারের মধ্যে চলে আসতে পারে বিপিএ। শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় বিপিএর দীর্ঘকালীন ব্যবহারে শিশুর ফুসফুসে সমস্যা দেখা দেয়। শিশুকালে বিপিএর সংস্পর্শে বেশি সময় থাকলে পরবর্তী সময়ে দেখা দিতে পারে অ্যাজমা। এ কারণে প্লাস্টিকের কনটেইনার সরাসরি ওভেনে না দেওয়াই নিরাপদ।

প্লাস্টিকের পাত্র বা বোতলের সঙ্গে কি ক্যানসারের সম্পর্ক আছে?

প্লাস্টিকের পাত্র বা বোতলের সঙ্গে ক্যানসারের সরাসরি সম্পর্কের পর্যাপ্ত কোনো প্রমাণ নেই। তবে কিছু প্লাস্টিক পণ্যে ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক ঘটক, যেমন বিসফিনল-এ, ফ্লামিংস এজেন্টের সঙ্গে ক্যানসারের সংযোগ থাকতে পারে। এই রাসায়নিক ঘটকগুলো সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
সামগ্রিকভাবে প্লাস্টিকের দৈনন্দিন ব্যবহারে শারীরিক জটিলতার ব্যাপারে আমাদের জ্ঞান এখনো সীমিত। তবে প্লাস্টিকের পাত্রে উপস্থিত রাসায়নিকগুলো নিঃসন্দেহে সমস্যার কারণ হতে পারে। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে ও খাদ্য প্যাকেজিং উপকরণগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও গবেষণা, স্বচ্ছতা ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

প্লাস্টিকের জটিলতা প্রতিরোধে করণীয়

১. মাইক্রোওয়েভ ওভেনে প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করবেন না। কাচ বা সিরামিকের পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।
২. প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে কাচ বা স্টেইনলেস স্টিলের পানির বোতল ব্যবহার করুন।
৩. প্লাস্টিকের প্যাকেজিংয়ের সংস্পর্শ কমাতে যেখানে সম্ভব তাজা, প্যাকেজবিহীন খাবার বেছে নিন।
৪. অবশিষ্টাংশ কাচ বা স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
৫. খাবার ঢেকে রাখার জন্য প্লাস্টিকের মোড়ক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। বদলে পুনঃব্যবহারযোগ্য মোমের মোড়ক বা সিলিকন ঢাকনা ব্যবহার করুন।
৬. একবারই ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিকের পাত্র কম ব্যবহার করুন। বাঁশ বা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি পুনঃব্যবহারযোগ্য বিকল্পগুলো বেছে নিন।
৭. টিনজাত খাবার কেনার সময়, কৌটায় বিপিএমুক্ত আস্তরণ ব্যবহার করে, এমন ব্র্যান্ডগুলো বেছে নিন।
৮. প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাগজ বা কার্ডবোর্ডে প্যাকেজ করা পণ্য তুলনামূলক কম ক্ষতিকর।
৯. প্লাস্টিকের পাত্রে গরম বা তৈলাক্ত খাবার রাখবেন না।

লেখক: মেডিসিনবিশেষজ্ঞ, পপুলার মেডিকেল কলেজ