আপনার পরিবারের কেউ থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করছেন না তো?

কোনো থ্যালাসেমিয়া রোগীকে যদি কাছ থেকে দেখে থাকেন, তাহলে তাঁর জীবনযুদ্ধের সাক্ষী আপনি। এমন কাউকে যদি না-ও দেখে থাকেন, তবু রোগটি সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ, নীরবে থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করতে পারেন যে কেউ। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যদি বাহক হন, তাঁদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা ২৫ শতাংশ। নিজের পরিবার যেন থ্যালাসেমিয়ার শঙ্কামুক্ত থাকে, সে জন্য কী করতে হবে, জানেন কি? এমন আরও নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বোনম্যারো  ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিট ও হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাফিয়া আলম

প্রথম আলো:

কেউ থ্যালাসেমিয়া বাহক হলে কি তাঁর সন্তানেরও থ্যালাসেমিয়া হবে?

থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রোগ। জিনগত ত্রুটির কারণে এ রোগ হয়। আমাদের দেহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেসব জিন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলো সাজানো থাকে ক্রোমোজোমে, জোড়ায় জোড়ায়। প্রতিটি জোড়ার একটি অংশ আসে মায়ের কাছ থেকে, অন্যটি আসে বাবার কাছ থেকে। একজন ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া বাহক হওয়ার অর্থ হলো, তাঁর একটি নির্দিষ্ট ক্রোমোজোম জোড়ার যেকোনো একটিতে ত্রুটি রয়েছে। একজন বাহকের সন্তান তখনই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে, যদি তাঁর জীবনসঙ্গীও এ রোগের বাহক হন।

প্রথম আলো:

কেউ থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না, কীভাবে বোঝা যাবে?

একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক কিন্তু অসুস্থ নন। বাহক হওয়ার কারণে তাঁর কোনো শারীরিক সমস্যা হয় না। তবে কেউ থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না, তা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা সম্ভব। এর জন্য প্রথমে সিবিসি পরীক্ষা করাতে হয়। সেই রিপোর্ট দেখে একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেবেন, তাঁকে কখন থ্যালাসেমিয়ার বাহক পরীক্ষা করাতে হবে। রক্তের এই পরীক্ষার নাম হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস।

প্রথম আলো:

কোথায়, কীভাবে করানো যায় এই পরীক্ষা?

বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি মেডিকেল কলেজে এই পরীক্ষা করানো যায়। জেলা শহর, এমনকি উপজেলা থেকেও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকা এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে নমুনা পাঠিয়ে ফলাফল জেনে নেওয়া সম্ভব।

প্রথম আলো:

এই পরীক্ষা কখন করানো প্রয়োজন?

হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস পরীক্ষাটি জীবনে একবার করানোই যথেষ্ট। তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যায়, তিনি থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না। বিয়ের আগেই এই পরীক্ষা করানো উচিত। দুজন বাহকের বিয়ে না হলেই সন্তানের থ্যালাসেমিয়ার ঝুঁকি থাকবে না। বিয়ের আগে পরীক্ষা করানো না হয়ে থাকলে সন্তান ধারণের আগে পরীক্ষাটি করানো যেতে পারে। তা-ও যদি করানো না হয়ে থাকে, সন্তান ধারণের আট সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষাটি করাতে হবে। তবে একজন ব্যক্তির যদি আয়রনের ঘাটতি থাকে কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কারণে তিনি রক্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে এই হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস পরীক্ষার মাধ্যমে বাহক নির্ণয় করা সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষাটি করানো উচিত।

প্রথম আলো:

বাহক হলে কী করতে হবে?

স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে কেবল একজন বাহক হলে কিন্তু কোনো সমস্যাই নেই। কেবল একজন বাহক হলে (জিনগত কারণে) সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হবে না। দুজনই যদি বাহক হন, কেবল তখনই সন্তানের থ্যালাসেমিয়ার ঝুঁকি থাকবে। এ ক্ষেত্রে সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ, বাহক হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ। ওই দম্পতির প্রতিটি সন্তানের ক্ষেত্রে একই ঝুঁকি থাকবে।

প্রথম আলো:

বাহক হওয়ার কারণে কি কখনো রক্ত নিতে হতে পারে?

থ্যালাসেমিয়া বাহক কিন্তু থ্যালাসেমিয়া রোগী নন। একজন বাহক স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। তবে কোনো কোনো বাহকের হিমোগ্লোবিন সামান্য কম থাকতে পারে। বাহক হওয়ার কারণে কারও রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কারও কারও ক্ষেত্রে জ্বর বা গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কিছুটা কমে যেতে পারে।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন