নারীর শরীরে পুরুষ হরমোন

মেয়েদের শরীরে পুরুষ হরমোন অর্থাৎ অ্যান্ড্রোজেনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বড় হয়ে একসময় বের হওয়ার কথা থাকলেও আর বের হতে পারে না।

অ্যান্ড্রোজেনের এই আধিক্যের কারণে পুরুষের মতো মুখে অবাঞ্ছিত লোম, অনিয়মিত মাসিক, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি নানা সমস্যা হতে পারে। আলট্রাসনোগ্রামে ওভারি বা ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট দেখা যায়। এ জন্য সব মিলিয়ে এই রোগের নাম পলি সিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস।

সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের এই রোগের প্রবণতা বেশি।

যেসব লক্ষণ দেখা যায়

পিসিওএসে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে—

  • অনিয়মিত মাসিক। অনেকের পরপর বা একাধিকবার পিরিয়ড মিস হয়।

  • অস্বাভাবিক ওজন বেড়ে যাওয়া। আক্রান্ত অন্তত ৫০ শতাংশ নারীই মোটা হয়ে থাকেন।

  • মুখসহ পিঠ ও বুকে প্রচুর ছোট ছোট ব্রণ দেখা যায়। অনেক সময় ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় পিগমেন্টেশন বা কালো দাগ দেখা যায়।

  • বন্ধ্যাত্ব: পিসিওএস থাকলে ডিম্বাণু নিঃসরণ চক্র অনিয়মিত হয়, ফলে গর্ভধারণে অসুবিধা হয়। গর্ভধারণ হলেও গর্ভপাতের ঝুঁকি থেকেই যায়।

  • শরীরে অবাঞ্ছিত লোম ওঠা ও চুলপড়া। অনেকের ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো টাক দেখা দিতে পারে।

আক্রান্তদের নিকটাত্মীয়ের এই রোগ হওয়ার ইতিহাস থাকতে পারে। এ জন্য পারিবারিক ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। তলপেটের আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় ওভারির আয়তন, ওভারিতে ছোট সিস্টের মতো কতটি সিস্ট আছে ও অন্যান্য বেশ কিছু বিষয় দেখা হয়। এ ছাড়া রক্তে গ্লুকোজ ও ইনসুলিনের মাত্রা, লিপিড প্রোফাইল ও অন্যান্য হরমোন যেমন—থাইরয়েড, কর্টিসল, প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা দেখা উচিত।

চিকিৎসা

পিসিওএসের চিকিৎসা রোগীর লক্ষণ, চিকিৎসা ইতিহাস এবং রোগীর স্বাস্থ্য অন্যান্য অবস্থার ওপর নির্ভর করে। চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে—

হরমোনাল জন্মনিরোধক: এটি একই সঙ্গে মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ, ব্রণ থেকে মুক্তি ও চুলের সমস্যায় কার্যকর।

অ্যান্ড্রোজেন ব্লক ওষুধ: কিছু ওষুধ অ্যান্ড্রোজেনের প্রভাব ও উৎসকে ব্লক করতে সাহায্য করে।

ইনসুলিন সংবেদনশীল ওষুধ: ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় প্রায়ই মেটফরমিন ওষুধ ব্যবহৃত হয়।

ডিম্বাণু স্ফুটনে সাহায্যকারী ওষুধ: যাঁরা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু স্ফুরণের জন্য কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

জীবনযাত্রার পরিবর্তন: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ওজন কমানো ও নিয়মিত ব্যায়াম পিসিওএস রোগীদের সমস্যা সমাধানে বহুলাংশে সাহায্য করে থাকে।

অস্ত্রোপচার: আধুনিক চিকিৎসায় সিস্টের আকার বা সংখ্যা বেশি বেড়ে গেলে ল্যাপারোস্কোপিক ওভারিয়ান ড্রিলিং পদ্ধতির সাহায্য সিস্ট অপসারণ করা যায়।

পিসিওএস আক্রান্ত নারীদের ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

  • অধ্যাপক ব্রিগে. জে. (অব.) ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম, প্রসূতিবিদ্যা ও বন্ধ্যাত্ব রোগবিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার হাসপাতাল