ঘাড় ও গলার কালচে দাগ কি কোনো রোগের উপসর্গ?

ঘাড়ে বা গলার পেছন দিকে গাঢ় কালো দাগ অনেককেই বিব্রত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করেছবি: সংগৃহীত

ঘাড়ে বা গলার পেছন দিকে গাঢ় কালো দাগ অনেককেই বিব্রত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে। একে বলে অ্যাকান্থসিস নিগ্রিক্যান্স। এ রকম দাগ শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন বগল, কুঁচকি, নাভি, কপাল ছাড়াও কনুই, হাঁটু, মলদ্বার ইত্যাদি স্থানেও দেখা দিতে পারে। এটা শুধু ত্বকের সমস্যা নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর পেছনে থাকে অন্তর্নিহিত কোনো রোগ।

কারণ

সাধারণত ৪০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এ সমস্যা দেখা যায়। অনেক কারণ থাকলেও চিকিৎসাশাস্ত্র মতে, এর মুখ্য কারণ শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোনের আধিক্য, যখন ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না বা রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায়। অধিক ইনসুলিন রিসেপ্টরের ওপর কাজ করে ত্বকের কিছু কোষের বৃদ্ধি ঘটিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি করে বলে ধারণা করা হয়।

এ ছাড়া আরও কিছু হরমোনজনিত ও অন্যান্য রোগের সঙ্গে এর যোগাযোগ থাকে। যেমন টাইপ–২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হাইপোথাইরয়েডিজম, গ্রোথ হরমোনের আধিক্য, কুশিং সিনড্রোম, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, জন্মগত কারণ, ক্যানসার ইত্যাদি।

উপসর্গ

ত্বকের রং কালচে হওয়ার পাশাপাশি অন্তর্নিহিত রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অধিক ওজন বা স্থূলতার কারণে শরীরে যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয়, তার উপসর্গও দেখা দিতে পারে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের আধিক্যের কারণে লিভারের সমস্যা। এককথায় মেটাবলিক সিনড্রোম, নারীর শরীরে অবাঞ্ছিত লোম ও অনিয়মিত মাসিক (পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম), পুরুষাঙ্গ ছোট ও বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি, শ্বাসকষ্ট, হাড় ও মাংসপেশির ব্যথা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

রোগ ও কারণ নির্ণয়

বংশগত কারণে হলে জন্মের পর থেকেই দেখা দিতে পারে এ রোগ। সমস্যা যত ধীরে প্রকাশিত হয়, তা তত কম ক্ষতিকারক। কারণ খুঁজতে পর্যাপ্ত ইতিহাস ও শারীরিক অন্যান্য সমস্যার (যেমন কর্টিসল হরমোনের আধিক্য বা অভাব, থাইরয়েড, এন্ড্রোজেন ও গ্রোথ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ক্যানসার) লক্ষণ অনুসন্ধান করতে হবে। সন্দেহ হলে প্রয়োজনে রক্তসহ অন্যান্য পরীক্ষা, এমনকি বায়োপসিও লাগতে পারে।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

  • চিকিৎসা মূলত কারণভিত্তিক। কারণ দূর করতে পারলে রোগ ভালো হয়ে যাবে, অন্যথায় বাইরে থেকে ত্বকের পরিচর্যা করে ফল হবে না। ওষুধ ও রোগের কারণে হলে তার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

  • স্থূলতার কারণে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্যই ওজন কমাতে হবে। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে, যাতে ধীরে ধীরে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কমতে থাকে।

  • আনুষঙ্গিক জটিলতা থাকলে এর চিকিৎসা করতে হবে। ওজন কম থাকা অবস্থায় ও অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আগেই সচেতন হতে হবে।

ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল