সচেতনতাই পারে পিসিওএস দ্রুত নির্ণয় করতে

পিসিওএস (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম) একধরনের হরমোনজনিত রোগ। কিশোরী, তরুণী থেকে শুরু করে মেনোপজের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন, এমন নারীও পিসিওএসে ভোগেন। বাংলাদেশে আনুমানিক প্রায় ৮–১৩ শতাংশ নারীর এ সমস্যা আছে। সেপ্টেম্বর পিসিওএস সচেতনতা মাস। এ উপলক্ষে ১৬ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো কার্যালয়ে যৌথভাবে এক মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) ও প্রথম আলো। আয়োজনটির সায়েন্টিফিক পার্টনার ছিল ওষুধ কোম্পানি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস।

আলোচনায় রোগটির নানা দিক তুলে ধরেন নারীস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ফিরোজা বেগম। পিসিওএস নির্ণয়ে সচেতনতার গুরুত্ব উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে–

ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ফিরোজা বেগম
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

আমাদের উদ্দেশ্য পিসিওএস নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি। সারা পৃথিবীতেই পিসিওএস রোগ নির্ণয় করতে অনেক সময় লেগে যায়। কারণ, এর লক্ষণ একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় তাঁর অনিয়মিত মাসিক, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গর্ভধারণে অসুবিধা, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় হরমোনাল ও  মেটাবলিক সিনড্রোম। মেনোপজের কাছাকাছি বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এমনকি জরায়ুর ক্যানসারও দেখা যেতে পারে।

এটি কোনো রোগ নয়, বরং এটা একটা সিনড্রোম। পিসিওএসে অনেক ধরনের উপসর্গ দেখা যেতে পারে, তবে প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্য হলো, শরীরে পুরুষ হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণে অবাঞ্ছিত লোম, অনিয়মিত মাসিক ও ডিম্বাশয়ে সিস্ট। এই তিনটির যেকোনো দুটি থাকলেই পিসিওএস হয়েছে বলে ধারণা করি আমরা। পিসিওএসে অনেকের ওজন বেড়ে যায়। ২০ শতাংশ মেয়ের ক্ষেত্রে ‘লিন পিসিওএস’ দেখা যায়, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওজন বাড়ে না। অনেক ক্ষেত্রে জিনগত কারণে পিসিওএস হতে দেখা যায়। অনেক সময় আমরা দেখি, যে মেয়েটির পিসিওএস হয়েছে তাঁর মায়েরও অনিয়মিত মাসিক হতো, গর্ভধারণ করতে দেরি হয়েছে।

আরও পড়ুন

পিসিওএসে ওজন বাড়ার বিষয়টি একটি দুষ্টচক্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত ৫ থেকে ১০ শতাংশ ওজন কমলে মাসিক নিয়মিত হয়ে যায়। মাসিক নিয়মিত না হলে আমরা ওরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল দিই। কিন্তু সেই পিলটার মধ্যে কিন্তু ইস্ট্রোজেনও থাকে, প্রোজেস্টেরনও থাকে। যে প্রজেস্টেরনটা থাকবে তার মধ্যে অ্যান্ড্রোজেনিক প্রোজেস্টেরনটা কম থাকতে হবে। না হলে কিন্তু তাঁর কোনো উপকারে আসবে না। একটা ওষুধ আছে, যাতে সিপ্রোটেরন অ্যাসিটেট থাকে, সেটিও কিন্তু পিরিয়ড চক্র ঠিক রাখে ও অবাঞ্ছিত লোম কমাতে সাহায্য করে। এতে কাজ না হলে আমরা স্পাইরনোল্যাকটন দিই, স্পাইরনোল্যাকটনের সমস্যা হচ্ছে—এটি মাসিক অনিয়মিত করে ফেলে। তাই এর সঙ্গে রোগীকে ওরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল দিতে হবে।

অনেকে মনে করেন গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা যাবে না। এটি একদম ঠিক নয়; বরং এ সময় ব্যায়াম করলে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা বাড়ে। কিশোরীদের নিয়মিত শরীরচর্চা করা উচিত।

মাসিকের কাছাকাছি বয়সে কারও চার মাসের বেশি সময় ধরে মাসিক বন্ধ থাকলে তাকে প্রোজেস্টেরন হরমোন দিয়ে মাসিক করাতে হয়। না হলে জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। এই বয়সে মেয়েদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে, কার্ডিওভাস্কুলার ঝুঁকিও থাকে। সবকিছুর ঝুঁকিই যেহেতু তাদের মধ্যে বেশি থাকে, তাই পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

আরও পড়ুন