পাকস্থলীর ক্যানসার সম্পর্কে দরকার সচেতনতা

পাকস্থলী বা স্টমাক ক্যানসারের হার বেড়ে চলেছে। এর লক্ষণ প্রথমে প্রকাশ পায় না বা প্রকাশ ঘটে অনেকটা গ্যাস্ট্রিক বা সাধারণ সমস্যার মতো। ফলে ক্যানসার শনাক্ত হতে দেরি হয়ে যায়। এ বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা দরকার।

পাকস্থলীর কাজ খাদ্য হজম করা। পাকস্থলী থেকে খাদ্য ও এনজাইমমিশ্রিত মণ্ড পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য অঙ্গ, যেমন ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রে যায়। যখন পাকস্থলীর মধ্যকার বা দেয়ালের স্বাস্থ্যকর কোষগুলো নিজেদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে ও ক্যানসার কোষে পরিণত হয়, তখন টিউমার তৈরি করে। এই প্রক্রিয়া সাধারণত খুবই ধীরে ধীরে ঘটে। তাই পাকস্থলীর ক্যানসার বহু বছর ধরে বাড়ে।

সাধারণত ষাটোর্ধ্ব মানুষকে এ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। নারীর তুলনায় পুরুষ পাকস্থলী ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হন।

প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করা হলে পাকস্থলী বা রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে পাশের অঙ্গগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ছড়ায় যকৃতে ও পেটের অভ্যন্তরে।

পাকস্থলী ক্যানসারের কয়েকটি ধরন রয়েছে—অ্যাডেনোকার্সিনোমা, লিম্ফোমা, কার্সিনয়েড টিউমার। পাকস্থলীতে ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, পাচনতন্ত্রের অন্যান্য অংশ টিউমার, পাকস্থলীর পলিপস, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জেনেটিক সিনড্রোম; যেমন লিঞ্চ সিনড্রোম ও লি-ফ্রোমেনি সিনড্রোম। এ ছাড়া তামাক বা ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, অত্যধিক অ্যালকোহল পান, খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এবং ফলমূল ও শাকসবজি না খাওয়া।

লক্ষণ

  • প্রাথমিক লক্ষণ হলো দীর্ঘদিন ধরে বদহজম ও পেটের অস্বস্তি। খাওয়ার পর পেট ফুলে যাওয়ার অনুভূতি। হালকা বমি বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, পেটে জ্বালাপোড়া ভাব।

  • গুরুতর লক্ষণ হলো মলের সঙ্গে রক্তপাত ও রক্তবমি। কোনো কারণ ছাড়াই ওজন হ্রাস। পেটব্যথা। চোখ ও ত্বক হলুদ হওয়া। খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া।

চিকিৎসা

  • অবস্থা বুঝে অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিউমার বৃদ্ধি ও আকারের ওপর নির্ভর করে পাকস্থলীর একটি অংশ বা পুরোটা সার্জারির মাধ্যমে সরিয়ে ফেলার দরকার হতে পারে।

  • কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন সাধারণত সার্জারির পাশাপাশি চলতে থাকে।

প্রতিরোধ

  • জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে পেটের ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো যায়। প্রতিদিন ব্যায়াম করা উচিত।

  • অর্গানিক খাবার খেতে হবে। প্রতিদিনের খাবারে ফরমালিনমুক্ত ফল ও শাকসবজি রাখতে হবে। অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার ও ভাজাপোড়া না খাওয়া। খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও রান্না করে খাওয়া। তাজা ও গরম খাবার খাওয়া।

  • খোলা জায়গার খাবার ও পানি পান করা থেকে বিরত থাকা।

  • খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নেওয়া।

  • ধূমপান ও অ্যালকোহল একেবারেই বাদ দেওয়া।

  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ না খাওয়া। নিজে নিজে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ না খাওয়া।

  • প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মো. সেতাবুর রহমান, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল