ইনহেলার না নেবুলাইজার, কোনটা ভালো?

শীতে যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা মাথাচাড়া দেয়, তার ভেতর শ্বাসকষ্ট আর হাঁপানি অন্যতম। যাঁদের হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস বা দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাঁরা শীতে বেশ ভোগান্তির শিকার হন।

শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নানা ধরনের। মুখে খাওয়ার নানা ওষুধ তো রয়েছেই, তবে সবচেয়ে কার্যকরী হচ্ছে ইনহেলার বা নেবুলাইজারে ওষুধ নেওয়া। এখনো অনেকেই এভাবে ওষুধ খেতে চান না। ইনহেলারকে অনেকেই ভাবেন শেষ চিকিৎসা। কেউ কেউ মনে করেন, একবার যদি ইনহেলার ব্যবহার শুরু করা হয়, তবে তা অভ্যাসে পরিণত হবে এবং এর ওপর নির্ভরশীলতা জন্ম নেবে। অনেকে আবার ইনহেলার নিতে অস্বস্তি বোধ করেন।

আসলে শ্বাসকষ্টে মুখে খাওয়ার বদলে ওষুধ সরাসরি শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করার ব্যবস্থা করতে পারলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর ও নিরাপদ। ইনহেলারের মাধ্যমে স্টেরয়েড বা শ্বাসযন্ত্র সম্প্রসারণ করার ওষুধ সূক্ষ্ম কণায় পরিণত করে শ্বাসের মাধ্যমে টেনে নেওয়া হয়। এভাবে দেওয়ার ফলে ওষুধ সরাসরি কাজ করে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয় কম। কেননা, অনেক কম পরিমাণ ওষুধেই কাজ হয়ে যায়। সঠিক নিয়মে ইনহেলার ব্যবহার করতে পারলে এটি খুব কার্যকরী। বলা যায়, এটিই হাঁপানির প্রধানতম চিকিৎসা। তবে ইনহেলার ব্যবহারের পর কুলি করতে হবে। ইনহেলার ব্যবহার করার সময় স্পেসারের সাহায্য নিলে তা অধিক কার্যকরী হয়।

সঠিক ইনহেলার প্রয়োগের কয়েকটি পদ্ধতি
অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান
আরও পড়ুন

কোনো কোনো সময় শ্বাসকষ্টের সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করলে ইনহেলার টানার মতো পরিস্থিতি থাকে না। তখন ওষুধগুলোকে তরল অবস্থা থেকে বাতাসের বাষ্পাকারে পরিণত করলে ফেসমাস্কের মাধ্যমে রোগী তা টেনে নিতে পারে। তাই জটিল শ্বাসকষ্টের রোগীকে নেবুলাইজারের মাধ্যমে ওষুধ দেওয়া হলে দ্রুত রোগনিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। তবে নিয়মিত ব্যবহারের জন্য নেবুলাইজারের চেয়ে ইনহেলারই ভালো। শিশু বা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ইনহেলার ব্যবহারে সমস্যা হলে নেবুলাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।

তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, শুধু শ্বাসকষ্টের সময় নয়, হাঁপানি বা অন্যান্য শ্বাসকষ্টের রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বছরভর ইনহেলার ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। যদিও ইনহেলার বা নেবুলাইজারের কাজ প্রায় একই, তবে নিয়মিত ব্যবহারের জন্য ইনহেলার আর রোগ জটিল আকার ধারণ করলে নেবুলাইজার ব্যবহার করার দরকার হতে পারে। সঠিক নিয়মে, সঠিক উপায়ে চিকিৎসা নিলে পুরো শীতেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে দূরে থাকা অসম্ভব কিছু নয়।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

আরও পড়ুন