রাত আটটার পর খাওয়া ঠিক নয় কেন?

রাত আটটার মধ্যেই রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া ভালো।
ছবি : নকশা

রাত আটটার পর খাওয়া ঠিক নয়—এমন একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়। কেন বলে এ কথা? আসলে খাবার থেকে পাওয়া পুষ্টি দেহকে সুস্থ রাখে, বাড়ায় কর্মক্ষমতা। তবে এই পুষ্টি এমনিতেই পাওয়া যায় না। এ জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি সঠিক সময়ে খাওয়াটাও জরুরি। না হলে হিতে বিপরীত হয়।

রাতের খাবার দেরি করে খেলে ওজন বাড়ে।
ছবি : নকশা

রাতের খাবার দেরিতে খেলে ওজন বাড়ে, বদহজম, হতে পারে ঘুমের ব্যাঘাত, অ্যাসিডিটি ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা। তাই শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বের পুষ্টিবিদরা রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেতে বলেন।

‘রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেলে অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে রেহাই মেলে। সঠিক সময়ে খাবার না খেলে দেহ সঠিকভাবে পুষ্টি শোষণ করতে পারে না। দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো ভালোভাবে পেতে অসুবিধা হয়। বিদেশে রাতের খাবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে শেষ করতে বলা হয়। তবে আমাদের দেশে জীবনযাপনের ধরন অনুযায়ী রাতের খাবার আটটার মধ্যে শেষ করতে পারলে ভালো,’ বলছিলেন পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।

আরামদায়ক ঘুমের জন্য রাতের খাওয়া ও ঘুমাতে যাওয়ার মধ্যে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ফারাক থাকা দরকার। না হলে অতিরিক্ত খাবারের চাপে পেটে গ্যাস তৈরি হওয়ার শঙ্কা থাকে; খাবার পরিপাকে সমস্যা হয়। এতে ঘুম ভালো হয় না। কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে বলে জানান অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের (চট্টগ্রাম) প্রধান পুষ্টিবিদ মাহফুজা আফরোজ। রাতের মূল খাবারটা দেরি করে খেলে ওজন বাড়ে। রাতে খাওয়ার পর থেকে সকাল পর্যন্ত আমরা তেমন কোনো খাবার খাই না। এতে দেহ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টানা উপবাসে চলে যায়। এই দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকাটা দেহের উপকার করে। এই সময়টায় দেহ জমে থাকা চর্বি ভেঙে শক্তিতে পরিণত করে। তবে দেরি করে খেলে পাকস্থলীতে যে খাবার থাকে, শুধু সেটি থেকে শক্তি উৎপাদন করে। আগে অন্যান্য খাবার খাওয়ার কারণে জমা হওয়া চর্বিতে হাত দেয় না। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হয়। তাই ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই রাতের খাবার আটটার মধ্যে খেতে হবে।

এই ধরনের ভারী খাবার রাতে না খাওয়াই ভালো।
ছবি : নকশা

গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমালে রক্তচাপ ১০ শতাংশ কমে। আবার ঘুম থেকে উঠলে বেড়ে যায়। দেরি করে বেশি খেয়ে ঘুমালে হজম প্রক্রিয়ার কারণে রক্তচাপ বেড়েই থাকে। এতে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা তৈরি হয়। আগেভাগে রাতের খাবার খেলে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগী এবং ডায়াবেটিসে ঝুঁকিপ্রবণ ব্যক্তিদের রাত আটটার মধ্যে খেয়ে ফেলতে বলা হয়।

এ ছাড়া বুক জ্বালাপোড়া, গলা দিয়ে টক পানি উঠে আসা, অ্যাসিডিটি ইত্যাদি সমস্যা থাকলে তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেতে বলা হয়। বেশি দেরিতে খেলে এবং খাবার হজম হওয়ার আগে ঘুমিয়ে পড়লে পেটে প্রচুর গ্যাস হয়। এতে সমস্যা বাড়ে। মলত্যাগও ভালোভাবে হয় না। আবার বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, রাতের খাবার দেরিতে খেলে পুরুষের প্রোস্টেট ও নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।

ঘুম থেকে ওঠার পর যাঁরা সকালবেলা প্রাণবন্ত, চাঙা বোধ করতে চান, তাঁদের জন্য রাতে আগে খাওয়া বিধেয়। বেশি রাতে খেলে খাবার হজম না হওয়ার কারণে অলসবোধ হয়। ঘুম থেকে ওঠার পরও ক্লান্ত লাগে। কাজ করার শক্তি পাওয়া যায় না। এ জন্য আগেই খেয়ে ফেলা ভালো, বলেন পুষ্টিবিদ মাহফুজা আফরোজ।

অনেকেই রাতে দেরিতে খাবার খেয়ে সকালের নাশতা খান না। এটাও তাঁকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দেয়। রাতে তাড়াতাড়ি খেলে সকালে ক্ষুধা লাগে এবং নাশতা ঠিকঠাকমতো করা হয়। এতে সারা দিন কর্মক্ষম থাকা যায় বলে জানান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।