ওষুধ খাওয়ার পরও কেন অনেকের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না

ছোটখাটো কিছু ভুল ধারণা আর জীবনাচারের জন্য অনেকের ওষুধ খেয়েও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না
প্রতীকী ছবিতে মডেল হয়েছে আক্কাস মাহমুদ, ছবি: সুমন ইউসুফ

রোকেয়া বেগমে বয়স ৫৫ বছর। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন। রক্তচাপ মাপক যন্ত্রে পারদের মাত্রা সব সময় উঁচুতেই বাঁধা থাকে। রোজ তিনটি ওষুধ খেয়েও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না রক্তচাপ। তাঁর জীবনযাপনের ইতিহাস থেকে জানা গেল, টোকা লবণ ছাড়া তিনি ভাত খেতে পারেন না। তবে প্রেশারের রোগীর কাঁচা লবণ খাওয়া উচিত নয়—লোকমুখে এ কথা শুনে তিনি লবণ ভেজে খান!

এ রকম ছোটখাটো কিছু ভুল ধারণা আর জীবনাচারের জন্য রোকেয়া বেগমের মতো অনেকের ওষুধ খেয়েও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

সাধারণত কারও রক্তচাপ ১৪০/৯৯ মিলিমিটার মারকারির ওপরে গেলে আমরা তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলি। তবে বয়সভেদে তারতম্যও হয়। উচ্চ রক্তচাপের অনেক কারণ আছে; যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা অজানা। শতকরা ৫ ভাগের ক্ষেত্রে কিছু কারণ জানা যায়। যেমন থাইরয়েড বা হরমোনজনিত সমস্যা, কিডনি জটিলতা, স্থূলতা এবং কিছু ওষুধ (জন্মনিয়ন্ত্রণ, ব্যথানাশক)।

আরও পড়ুন

নিয়ন্ত্রণে না থাকলে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের পাঁচটি প্রধান অঙ্গের ক্ষতি করে। এগুলো হলো মস্তিষ্ক, চোখ, হৃদ্‌যন্ত্র, কিডনি ও রক্তনালি। এ অঙ্গগুলো ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই জটিলতাগুলো এড়াতে উচ্চ রক্তচাপের যথাযথ চিকিৎসা ও সুনিয়ন্ত্রণ জরুরি।

উচ্চ রক্তচাপের আরেকটি খারাপ দিক হলো তেমন কোনো উপসর্গ না থাকা। থাকলেও সামান্য মাথাব্যথা বা ঘাড়ব্যথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তাই রোগী বুঝে উঠতে পারেন না, তাঁর উচ্চ রক্তচাপ আছে। এ জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বছরে একবার হলেও রক্তচাপ মেপে দেখা উচিত।

কিন্তু শুধু ওষুধ খেয়েই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন; পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা ও জীবনযাপনের পদ্ধতিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শুধু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন না করার কারণে অনেক ওষুধ সেবন করেও মানুষের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হয় না। আবার সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা ও জীবনাচার পাল্টানোর মাধ্যমে অনেকে ওষুধ কমিয়ে আনতে পারেন, এমনকি বাদ দেওয়াও সম্ভব।

আরও পড়ুন

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস

  • লবণ বা লবণাক্ত খাবার পরিহার। সারা দিনে ছয় গ্রামের কম পরিমাণ লবণ খাওয়া উচিত।

  • চিনিযুক্ত খাবার কম খাওয়া।

  • ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার।

  • চর্বি ও তেলজাতীয় খাবার না খাওয়া।

  • নিয়মিত ফল ও সবজি, যেমন কলা, শিম, টমেটো, মাশরুম ইত্যাদি খাওয়া।

  • মাংসের হাড়, মুরগির চামড়া না খাওয়া।

  • বেশি বেশি মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ, খাওয়া ভালো।

  • পরিমিত পানি খাওয়া (৬-৮ গ্লাস/দিন)

  • খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে ড্যাশ (ডায়েটারি অ্যাপ্রোচ টু স্টপ হাইপারটেনশন) ডায়েট মেনে চলা যেতে পারে। এটা ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।

নিয়মিত শরীরচর্চা

  • ওজন বেশি হলে কমাতে হবে।

  • ৩০ থেকে ৪০ মিনিট করে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন হাঁটতে হবে। এ ছাড়া জগিং, সাইক্লিং, সাঁতার, টেনিস, বাস্কেটবল, সিঁড়িতে ওঠানামা, স্কিপিং, বাগান করা ইত্যাদি করা যেতে পারে।

  • দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করলে প্রতি ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ মিনিটের বিরতি নিন।

  • পর্যাপ্ত ঘুমান (ন্যূনতম ৬ ঘণ্টা)।

ডা. মো. ইব্রাহিম: জুনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজি, কুয়েত–বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, ঢাকা