কেন আমরা চোখ ঘষি, এতে চোখের কি কোনো ক্ষতি হয়?
আমরা অনেকেই অভ্যাসবশত বা অস্বস্তিবোধ করলে অজান্তেই চোখ ঘষি। হয়তো ঘুম থেকে ওঠার পর বা কম্পিউটারে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার পরে ক্লান্তি দূর করতে সামান্য চোখ ঘষি। আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি নিরীহ অভ্যাস মনে হলেও, চোখের মতো সংবেদনশীল অঙ্গের জন্য এই অভ্যাস মারাত্মক ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে।
চোখ ঘষার কারণ
শুষ্কতা ও ক্লান্তি: দীর্ঘ স্ক্রিন টাইম বা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে চোখ শুষ্ক ও ক্লান্ত হয়ে পড়লে মস্তিষ্ক ঘষার মাধ্যমে আরাম খোঁজে।
অ্যালার্জি: ধুলা, ফুলের পরাগ বা অন্য কোনো অ্যালার্জেনের কারণে চোখে চুলকানি শুরু হলে আমরা অজান্তেই চোখ ঘষি।
স্বস্তি: চোখ ঘষার সময় স্নায়ুগুলো উদ্দীপ্ত হয় এবং ভেগাস নার্ভ সক্রিয় হয়ে হৃৎস্পন্দন সামান্য হ্রাস করে, যা সাময়িক আরাম বা স্বস্তি এনে দেয়।
কেন এটি ক্ষতিকর
চোখ ঘষার অভ্যাস দীর্ঘ মেয়াদে চোখের জন্য মারাত্মক হতে পারে:
১. সংক্রমণের ঝুঁকি: হাত হলো জীবাণুর আস্তানা। চোখ ঘষার সময় হাতের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সরাসরি চোখে প্রবেশ করে, যা কনজাংটিভাইটিস (চোখ ওঠা) বা অন্যান্য সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
২. কর্নিয়ার ক্ষতি: জোরে চোখ ঘষলে কর্নিয়ার (চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশ) ওপর চাপ পড়ে। নিয়মিত এই চাপ পড়লে কেরাটোকোনাস নামক একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। এই রোগে কর্নিয়া দুর্বল হয়ে ধীরে ধীরে বাইরের দিকে শঙ্কু আকৃতি ধারণ করে, যা দৃষ্টিশক্তির মারাত্মক ক্ষতি করে এবং একসময় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
৩. চাপ বৃদ্ধি: যাঁরা গ্লুকোমার ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের জন্য চোখ ঘষা খুবই বিপজ্জনক। এতে চোখের ভেতরের চাপ হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, যা অপটিক নার্ভের ক্ষতি করে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. চুলকানি বৃদ্ধি: অ্যালার্জির কারণে চোখ ঘষলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ঘষার ফলে একধরনের হিস্টামিন নিঃসরনণকারী মাস্ট কোষ থেকে আরও বেশি হিস্টামিন নিঃসৃত হয়, যা চুলকানি ও লাল ভাবকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
৫. কালচে আভা বা ডার্ক সার্কেল: চোখ ও তার চারপাশের ত্বক খুবই পাতলা। জোরে ঘষলে এই অংশের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে চোখের নিচে কালচে ছোপ বা ডার্ক সার্কেল আরও প্রকট হতে পারে।
অভ্যাস দূর করার উপায়
চোখ ঘষার অভ্যাস থাকলে তা বন্ধ করতে হবে। চুলকানি বা অস্বস্তি হলে, পরিষ্কার ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আই ড্রপ ব্যবহার করুন। প্রয়োজন হলে একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ, চোখের ভেতরে কোনো সমস্যা থাকলে তা নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা আবশ্যক।