শত ক্যানসার যোদ্ধা এক হলেন যুদ্ধজয়ের শক্তি নিয়ে

একদল প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ রংতুলি নিয়ে বসে ছবি আঁকছেন। তাঁরা পেশাদার শিল্পী নন। এটি কোনো সাজানো দৃশ্যও নয়। নিজের জীবনযুদ্ধের গল্পের উদ্‌যাপনেই সেদিন এমনভাবে এক হয়েছিলেন তাঁরা। ব্রেস্ট ক্যানসার সারভাইভারস মিট ২০২৫-এর সেই আয়োজন হয়েছিল রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মিলনায়তনে। ২৫ নভেম্বরের সেই উৎসবে কী হয়েছিল?

ব্রেস্ট ক্যানসার সারভাইভারস মিট ২০২৫-এ যোগব্যায়ামে অংশ নেন ক্যানসারজয়ীরাছবি: স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের সৌজন্যে

ক্যানসার শব্দটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আতঙ্ক। নিজের কিংবা প্রিয়জনের ক্যানসার হলে তা মেনে নেওয়াই দুরূহ এক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তবে সেই সত্যকে মেনে নিয়ে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ীও হন বহু মানুষ। তেমনই ১০০ যোদ্ধা সেই সকালে হাজির হয়েছিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মিলনায়তনে। নিবন্ধন পর্ব শেষে তাঁরা যোগ দিয়েছিলেন মূল অনুষ্ঠানে।

সূচনায় নতুন উদ্যোগের ঘোষণা

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন হাসপাতালটির চিফ অপারেটিং অফিসার মো. এসাম ইবনে ইউসুফ সিদ্দিক। সূচনা বক্তব্যে তিনি জানান, ক্যানসারজয়ী একজন ব্যক্তির (ক্যানসার সারভাইভার) প্রতিবছর নিয়মিত যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হয়। আজীবন বিশেষ মূল্যে সেসব করানোর সুযোগ থাকবে স্কয়ার হাসপাতালে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তাঁদের এ উদ্যোগ।

বাস্তব যখন ভীষণ কঠিন

সূচনা পর্বের পর শুরু হয় প্যানেল ডিসকাশন। স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ও শল্যচিকিৎসকেরা অংশ নেন এ আলোচনা পর্বে। ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যে শারীরিক ও মানসিক সংকটের মধ্য দিয়ে যান, সে সম্পর্কে আলোচনা করেন তাঁরা।

সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের সামাজিক পরিসরে ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের রোল মডেল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, তাঁরাই হয়ে উঠতে পারেন বহু মানুষের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।

আয়োজনে নিজের জীবনের গল্প সবার সঙ্গে ভাগ করে নেন ক্যানসারজয়ী প্রণতি রানী দাস
ছবি: স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের সৌজন্যে

এ আয়োজনে নিজের জীবনের গল্প সবার সঙ্গে ভাগ করে নেন ক্যানসারজয়ী প্রণতি রানী দাস। ২০২০ সালে যখন করোনা অতিমারির কারণে কোনো হাসপাতালে সরাসরি চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ পাচ্ছিলেন না, তখন স্কয়ার হাসপাতালেই সেই সেবা পেয়েছিলেন বলে জানালেন।

প্রণতি বললেন, ‘স্কয়ার হাসপাতালে বিশ্বমানের সেবা পেয়েছি। ক্যানসার ধরা পড়ার পরও মনোবল হারাইনি। বিশ্বাস ছিল, আমি হারব না। কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি নিয়েও অফিস করেছি। আমার স্বামীও আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে একটা মিনিট দেরি করেননি।’

ক্যানসারে আক্রান্ত মায়ের জন্য ১০ বছর ধরে লড়ছেন সামিয়া হাসান
ছবি: স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের সৌজন্যে

ক্যানসারে আক্রান্ত মায়ের জন্য ১০ বছর ধরে লড়ছেন সামিয়া হাসান। তাঁর মতে, ক্যানসারে আক্রান্ত একজন রোগীর স্বজনের কখনো ছুটি হয় না। এই স্বজনদের লড়াই চলে প্রতিনিয়ত। ১০ বছরের এ পথচলায় স্কয়ার হাসপাতাল তাঁর ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ হয়ে উঠেছে বলেই জানান তিনি।

আরও পড়ুন

ভিন্নধর্মী আয়োজন

যোগব্যায়াম ও মিউজিক থেরাপির দায়িত্বে ছিলেন যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক কুশল রায় ও তাঁর সহকারীরা
ছবি: স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের সৌজন্যে

যোগব্যায়াম, চিত্রকর্ম আর সুরের মাধ্যমে সুস্থতার চর্চার আয়োজন ছিল অনুষ্ঠানের বাকি অংশে। যোগব্যায়াম ও মিউজিক থেরাপির দায়িত্বে ছিলেন যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক কুশল রায় ও তাঁর সহকারীরা। তাঁর নির্দেশনায় যোগব্যায়ামে অংশ নেন ক্যানসারজয়ীরা। তাঁর সহকারীরা সঠিকভাবে যোগব্যায়ামের ভঙ্গিগুলো শিখতে সাহায্য করছিলেন তাঁদের।

চিত্রশিল্পী মেগান এডওয়ার্ডের তত্ত্বাবধানে ‘গারডেন অব হিলিং’ থিমে ছবি আঁকছিলেন ক্যানসারজয়ীরা
ছবি: স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের সৌজন্যে

সবাই মিলে সুস্থতার এ উদ্যোগে অংশ নেওয়া বেশ ভিন্নধর্মী বিষয়ই বটে। চিত্রশিল্পী মেগান এডওয়ার্ডের তত্ত্বাবধানে ‘গারডেন অব হিলিং’ থিমে ছবি আঁকছিলেন ক্যানসারজয়ীরা। তাঁদের প্রতি মেগান এডওয়ার্ডের নির্দেশনা ছিল, নিজের জীবনের বিজয়ের কঠিন গল্পটাকে একটা বাগান হিসেবে ফুটিয়ে তোলার। নিজেকে একটা বীজ হিসেবে কল্পনা করতে বলেছিলেন তিনি। সেই থিম নিয়েই নিজেদের মনের ভাব ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলছিলেন এই লড়াকু মানুষেরা।

আরও পড়ুন