জ্বর হলেই কি ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে
বৃষ্টির জন্য ডেঙ্গু মৌসুম দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সাধারণভাবে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে ডেঙ্গু মৌসুম। কিন্তু এবারের আবহাওয়া অন্য রকম। বৃষ্টি থামছে না। তাই এ বছর ডেঙ্গুর পিক বা সর্বোচ্চ অবস্থা হয়তো আমরা এখনো দেখিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর এ পর্যন্ত ৩৩ হাজারের ওপর মানুষের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। আর প্রায় ২০০ মানুষ ডেঙ্গুর কারণে মারা গেছেন। সামনে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
জ্বর হলেই কি ডেঙ্গু
এটা ঠিক যে এই সময় ডেঙ্গু ছাড়াও ফ্লু, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড ও অন্যান্য সংক্রমণও অনেক হচ্ছে। হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে আসা সব রোগীরই যে ডেঙ্গু, তা নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চলছে এবং এখনো শনাক্তের হার নিচে নামেনি। তাই এ সময় জ্বর হলে ডেঙ্গুর আশঙ্কার কথা বাদ দেওয়া যাবে না। যদিও নানা রকম উপসর্গ দেখে চিকিৎসকেরা জ্বরের কারণ কিছুটা আন্দাজ করতে পারেন, কিন্তু যতক্ষণ না পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে এটি ডেঙ্গু নয়, ততক্ষণ কিন্তু ডেঙ্গুর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
তাহলে কি পরীক্ষা করাতে হবে
আমাদের মতো ডেঙ্গুপ্রবণ দেশে ডেঙ্গুর মৌসুমে জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো উচিত। সাম্প্রতিককালে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রতিবছরই ধরন পাল্টাচ্ছে। ডেঙ্গুর যে ক্ল্যাসিক্যাল উপসর্গ, তার অনেকগুলোই আজকাল অনুপস্থিত থাকছে। যেমন আগে ডেঙ্গু হলে উচ্চ মাত্রার জ্বর হতো, বর্তমানে বলা হয় জ্বর তীব্র না-ও হতে পারে। তীব্র মাথাব্যথা, চোখব্যথা, পেশিব্যথা আজকাল অনেকেরই দেখা যাচ্ছে না। আবার আগে বলা হতো জ্বরের তৃতীয় বা চতুর্থ দিন গিয়ে জটিলতা হয়, এখন দেখা যাচ্ছে অনেকের একেবারে শুরুর দিকেই জটিলতা হয়ে যাচ্ছে। তাই আগের মতো চিকিৎসকেরা উপসর্গ ও লক্ষণ মিলিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত করতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রেই রোগী চিকিৎসকের কাছে আসছেন জটিলতা নিয়ে, দেরি করে। তাই এ সময় জ্বর হলেই উচিত ডেঙ্গু পরীক্ষা করে ফেলা। এতে রোগ সম্পর্কে আগেভাগেই জানা যাবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া যাবে।
কখন কী পরীক্ষা
ডেঙ্গু শনাক্ত করতে হলে জ্বর আসার প্রথম বা দ্বিতীয় দিন ডেঙ্গু এনএসওয়ান পরীক্ষা করে ফেলা ভালো। তবে মনে রাখবেন, এই টেস্ট নেগেটিভ হলেও ডেঙ্গু হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এর সঙ্গে একটা কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সিবিসি করে ফেলা ভালো। পরবর্তী সময়ে হিমাটোক্রিট বা প্লাটিলেটের কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে এই প্রথম সিবিসির সঙ্গে তুলনা করার দরকার পড়বে। যদি জ্বরের ৪ বা ৫ দিন অতিবাহিত হয়ে যায়, তবে এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন আর পরীক্ষা করার দরকার নেই। তখন করতে হবে ডেঙ্গু আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষা। সাম্প্রতিক সংক্রমণে ৯-১০ দিন পর্যন্ত আইজিএম পজিটিভ থাকে, তারপর ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এর বাইরে প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসক আপনাকে আরও কিছু পরীক্ষা করাতে দিতে পারেন। যেমন যকৃতের এসজিপিটি পরীক্ষা বা পেটের আলট্রাসনোগ্রাম।
ডেঙ্গু ধরা পড়লেই কি হাসপাতালে যেতে হবে
ডেঙ্গু পরীক্ষা পজিটিভ হলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বাড়িতে বিশ্রাম নিন, প্রচুর তরল ও পানি পান করুন। নিজেকে পরিবারের অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলুন।
অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ