ডায়াবেটিসজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধে উপায় কী

ডায়াবেটিস রোগীদের নানা জটিলতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চোখের রেটিনায় সমস্যা, যাকে বলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। একবার রেটিনোপ্যাথি দেখা দিলে তা আর আগের অবস্থায় ফেরে না। তাই রেটিনোপ্যাথির চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হলো চোখের রেটিনাতে একধরনের ক্ষত হয়, যার পরিণাম হচ্ছে স্থায়ী দৃষ্টিসমস্যা। রেটিনোপ্যাথির জন্য কিছু রিস্ক ফ্যাক্টরকে দায়ী করা হয়।

এগুলো হচ্ছে দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার লিপিডেমিয়া বা উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল—বিশেষ করে উচ্চমাত্রার এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসেরাইড, গর্ভাবস্থা, ধূমপান ইত্যাদি। কিছু বিষয় আছে, যেগুলোর প্রতি যত্নবান হলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি অনেকাংশ ক্ষেত্রেই পরিহার করা সম্ভব।

রক্তে শর্করা, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। আর এ তিনটি কাজ করতে হলে প্রয়োজন দৈনন্দিন জীবনযাপনে শৃঙ্খলা।

১. খাদ্যাভ্যাসে চিনি, লবণ ও তৈলাক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করা। সাদা ময়দা ও সাদা চাল ক্ষতিকর। আঁশসমৃদ্ধ খাবার, যেমন ফলমূল, শাকসবজি দেহের ওজন কমাতে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আঁশযুক্ত খাবার ৫০-৭৫ শতাংশ কোলেস্টেরল মলের সঙ্গে বের করে রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সরাসরি ভূমিকা রাখে। কম আঁশযুক্ত বা আঁশহীন খাবার দ্রুত রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং এসব খাবার, যেমন চিনি, মিষ্টি, পেস্ট্রি, পেস্তা, ময়দার রুটি, ফলের রস, বেকারি ফুড ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উত্তম। আস্ত ফলে সুগার কিছুটা থাকলেও সঙ্গে যথেষ্ট আঁশ থাকে। ফলের রসের চেয়ে আস্ত ফল খাওয়া স্বাস্থ্যকর।

২. খাদ্যতালিকায় চর্বিজাতীয় খাবার থাকতে হবে মোট ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশ। প্রায় ৬০ গ্রাম চর্বি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই থাকতে হবে। আনস্যাচুরেটেড চর্বির মধ্যে ভালো হচ্ছে বাদাম, মাছের চর্বি, অলিভ অয়েল ইত্যাদি। স্যাচুরেটেড চর্বি বা খারাপ চর্বি যেমন মাংস, দুগ্ধজাত খাবার কম খাওয়া উচিত। খাবারে অর্ধেক ফলমূল ও শাকসবজি, এক-চতুর্থাংশ হলো গ্রেইন (কর্ন, ভাত, ওট, বার্লি ইত্যাদি) এবং এক-চতুর্থাংশ আমিষ জাতীয়, যেমন লেগুম (শিমের বিচি, ডাল, পেঁয়াজ, বাদাম), মাছ বা সাদা মাংস (মুরগির মাংস) খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। 

৩. দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যায়াম খুবই প্রয়োজন। মধ্যম মানের ব্যায়াম, যেমন হাঁটাহাঁটি বা সাইকেল চালানো সপ্তাহে ১৫০ মিনিট। উত্তম মানের ব্যায়াম হলো প্রতিদিন ৩০ মিনিট মডারেট এক্সারসাইজ (দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং বা সাঁতারকাটা ইত্যাদি)। রেজিস্ট্যান্স এক্সারসাইজ সপ্তাহে ২-৩ বার, যেমন ভারোত্তলন বা ইয়োগা কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করে।

৪. চাপ কমাতে হবে। চাপ কমানোর উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম, ভালো ঘুম আর দিনের কাজ গুছিয়ে করা।

৫. নিয়মিত ওষুধ সেবন ও ফলোআপ জরুরি। বছরে অন্তত একবার এবং সমস্যা থাকলে আরও ঘন ঘন ফলোআপে থাকতে হবে।

৬. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি চোখে কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

  • ডা. মো. ছায়েদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক, কনসালট্যান্ট, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, ঢাকা