উদ্ভিজ্জ দুধ কি সত্যিই দুধের বিকল্প

দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার। তবে দুধে অনেকের অ্যালার্জি থাকে। দুধে থাকা ল্যাকটোজ নামের উপাদানটির কারণে শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারেন অনেকে। এমন সমস্যাকে বলা হয় ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। কিছু রোগের উপসর্গ বাড়ে দুধ খেলে। আবার কেউ কেউ সব ধরনের প্রাণিজ খাবার এড়িয়ে চলেন বলে দুধ খান না। অনেকে এমনিতেই দুধ পছন্দ করেন না। নানা কারণেই বিকল্প হিসেবে উদ্ভিজ্জ দুধ গ্রহণ করেন অনেকে। আদতে কি সেসব দুধের বিকল্প হতে পারে?

নানা কারণেই বিকল্প হিসেবে উদ্ভিজ্জ দুধ গ্রহণ করেন অনেকেছবি: পেক্সেলস

দুধ থেকে পাওয়া যায় শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি১, বি২, বি৩–সহ কিছু পুষ্টি উপাদান। প্রাণিজ খাবার হওয়ায় এতে আরও পাওয়া যায় ভিটামিন বি১২। এর অভাবে হয় রক্তস্বল্পতা। কিন্তু উদ্ভিজ্জ দুধে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি১২ নেই। যদি আপনি ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি১২–সমৃদ্ধ অন্য কোনো খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ না করেন, তাহলে আপনাকে আলাদাভাবে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি১২ যোগ করা (ফরটিফায়েড) উদ্ভিজ্জ দুধ খেতে হবে। তবে চিনিমিশ্রিত যেকোনো দুধ এড়িয়ে চলা উত্তম। উদ্ভিজ্জ দুধ প্রসঙ্গে নানা তথ্য দিলেন রাজধানীর গবর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আকতার

দুধে থাকা ল্যাকটোজ নামের উপাদানটির কারণে শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারেন অনেকে
ছবি: পেক্সেলস

ফাতেমা আকতার জানান, দুধ ও উদ্ভিজ্জ দুধের মধ্যে বিরাট পার্থক্য থাকে আমিষের পরিমাণ এবং ধরনে। ২৫০ মিলিলিটার দুধ থেকে আমিষ পাওয়া যায় ৮ গ্রাম। কিন্তু অধিকাংশ উদ্ভিজ্জ দুধেই এতটা আমিষ থাকে না। এ ছাড়া প্রাণিজ আমিষে আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সব অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা উদ্ভিজ্জ দুধে নেই, অর্থাৎ উদ্ভিজ্জ দুধের আমিষ গুণগত মানেও বেশ খানিকটা পিছিয়ে। এসবের দামও তুলনামূলক বেশি। অবশ্য নিতান্তই যদি প্রয়োজন অনুভব করেন, তাহলে এসবের ব্যবস্থা করা ছাড়া তো উপায়ও নেই। মিষ্টান্ন, স্মুদি কিংবা চা-কফি তৈরির সময় এসব ব্যবহার করতে পারেন দুধের বিকল্প হিসেবে। বাড়িতে কিছু উদ্ভিজ্জ দুধ বানানোও সম্ভব, তবে সেই দুধে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম কিংবা ভিটামিন বি১২ যোগ করার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন

কিছু উদ্ভিজ্জ দুধের ভালোমন্দ দিক

সয়া দুধ খুব বেশি না খাওয়াই ভালো

সয়া দুধ: সয়া দুধে আমিষের পরিমাণ প্রাণিজ দুধের কাছাকাছি। প্রতি ২৫০ মিলিলিটার সয়া দুধে আমিষ পাবেন ৭-৯ গ্রাম। প্রাণিজ দুধের চেয়ে এতে শর্করা আর চর্বির পরিমাণ কম। তবে এই দুধ খুব বেশি না খাওয়াই ভালো। কারণ, হরমোনের ওপর সয়ার প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নন।

ওট দুধ: প্রতি ২৫০ মিলিলিটার ওট দুধে আছে ২-৪ গ্রাম আমিষ। প্রাণিজ দুধের চেয়ে এতে চর্বি কম, কিন্তু শর্করা থাকে প্রাণিজ দুধের চেয়ে বেশি। অবশ্য পর্যাপ্ত আঁশ থাকায় ওট দুধ খেলে অনেকটা সময় আর ক্ষুধা লাগে না। বাজারের ওট দুধে লবণ যোগ করা থাকতে পারে। তাই দেখেশুনে কিনুন। বাড়তি লবণ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

কাঠবাদামের দুধ: দারুণ স্বাদের এই দুধে অবশ্য আমিষের পরিমাণ খুব কম। প্রতি ২৫০ মিলিলিটারে আছে ১-২ গ্রাম আমিষ। প্রাণিজ দুধের চেয়ে শর্করা আর চর্বির পরিমাণও কম এতে।

আরও পড়ুন

কাজুবাদামের দুধ: কাজুবাদামের দুধেও আমিষ থাকে খুব কম। প্রতি ২৫০ মিলিলিটারে মাত্র ১ গ্রামের মতো থাকে। এতেও প্রাণিজ দুধের চেয়ে শর্করা আর চর্বির পরিমাণ কম থাকে। তবে এতে থাকে ফাইটিক অ্যাসিড, যা আমাদের দেহে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও জিংকের মতো পুষ্টি উপাদান শোষণে বাধা দেয়।

কাঠবাদাম ও কাজুবাদামের দুধে অবশ্য আমিষের পরিমাণ খুব কম থাকে

তাই এসব উপাদানসমৃদ্ধ খাবার এবং কাজুবাদামের দুধ গ্রহণের মধ্যে অন্তত দুই ঘণ্টা ব্যবধান রাখুন। আর কাজুবাদামের দুধ ক্যালসিয়াম ফরটিফায়েড হলেও খুব একটা লাভ নেই। আলাদাভাবে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেতেই হবে আপনাকে।

নারকেলের দুধ: নারকেলের দুধে আমিষের পরিমাণ একেবারেই নগণ্য। এতে শর্করার পরিমাণও কম, কিন্তু চর্বি অনেক বেশি। এই দুধে থাকা চর্বিটা হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা স্বাস্থ্যকর নয়। তাই এই দুধ গ্রহণ না করাই ভালো। তা ছাড়া কারও কারও এই দুধ হজমেও সমস্যা হতে পারে।

চালের দুধ: দুধ, বাদাম, সয়া, গ্লুটেন—যে উপাদানেই অ্যালার্জি থাকুক না কেন, চালের দুধ খেতে পারবেন যে কেউ। এতে আমিষের পরিমাণ অবশ্য কম। প্রতি ২৫০ মিলিলিটারে মাত্র ১ গ্রাম। এতে প্রাণিজ দুধের চেয়ে চর্বির পরিমাণ কম, কিন্তু সব উদ্ভিজ্জ দুধের মধ্যে এতেই শর্করার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আর এই শর্করা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়েও দেয় খুব দ্রুত। তাই খুব বেশি চালের দুধ গ্রহণের সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন