আইবিএস হলে হঠাৎ হঠাৎ তীব্র পেটের ব্যথা হয়
ছবি: প্রথম আলো

আইবিএসের লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া পর্যায়ক্রমে চলতে পারে। হঠাৎ হঠাৎ তীব্র পেটের ব্যথা হয়। অনেক সময় পেট মোচড় দিয়ে ওঠে এবং সঙ্গে সঙ্গে টয়লেটে যেতে হয়। মলত্যাগের পর পেটের ব্যথা ও পেট ফাঁপা কমে যায়, যার ফলে রোগী আরাম বোধ করেন। এ ছাড়া অনেকের পেটে গ্যাস হয়, অনেকের মলের সঙ্গে মিউকাস দেখা যায়, মলত্যাগের কিছুক্ষণ পরই আবার মলত্যাগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়াও হতে পারে। বিভিন্ন কারণে মানসিক উদ্বেগ বাড়লে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। একেক রোগীর ক্ষেত্রে আইবিএস একেক রকমভাবে প্রকাশ পেতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি প্রকাশিত হয়, আবার কারও ক্ষেত্রে ডায়রিয়া। আবার কেউ কেউ শুধু পেট ফাঁপা বা পেট মোচড়ের সমস্যা নিয়ে মূলত ভোগেন।

আইবিএস–সম্পর্কিত কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে যা করবেন

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে দ্রবণীয় আঁশ বা সলিউবল ফাইবারজাতীয় খাবার। যেমন সাইট্রাস ফল, ডাল, বাদাম, মিষ্টি আলু, নাশপাতি, গাজর, শসা ইত্যাদি।

আইবিএস–সম্পর্কিত ডায়রিয়া প্রতিরোধে যা করবেন

অনেক খাবার আছে, যেগুলো আইবিএস–সম্পর্কিত ডায়রিয়া আরও জটিল করে তোলে। এ ধরনের খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে, যেমন বেশি পরিমাণে আঁশ আছে, এমন খাবার। বিশেষ করে অদ্রবণীয় আঁশ বা ইনসলিউবল ফাইবারযুক্ত খাবারগুলো খাবেন না। এসব খাবারের মধ্যে আছে বাদাম, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি। তাই আইবিএস–সম্পর্কিত ডায়রিয়ায় এ ধরনের খাবার খাওয়া বারণ। অনেক আইবিএস রোগীর ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স বা দুধে অসহনশীলতা থাকে, তাঁদের বেলায় দুধ ও দুধজাত খাবার বাদ দিতে হবে।

আইবিএস রোগীদের কি শাকসবজি খাওয়া নিষেধ?

আইবিএস আক্রান্তরা অবশ্যই শাক খেতে পারবেন
ছবি: প্রথম আলো

আইবিএস রোগীদের নির্দিষ্ট কোনো খাদ্যতালিকা নেই। তবে রোগীদের চিহ্নিত করতে হবে, কী ধরনের খাবারে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। ঠিক সেসব খাবার বাদ দিলে ভালো হয়।
আইবিএস আক্রান্তরা অবশ্যই শাক খেতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে লেটুস ও পালংশাক কিন্তু অন্ত্রের জন্য উপকারী। তাই প্রায়ই শাক খেতে হবে। সবজিও খাওয়া যাবে। সবজিতে এমন কিছু উপাদান আছে, যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। ফলে গ্যাস, পেট ফাঁপার মতো সমস্যা কমে। এ ক্ষেত্রে গাজর, ভুট্টা, আলু, টমেটো ইত্যাদি সবজি বেশ উপকারী। এ ধরনের সবজি নিয়মিত পাতে রাখতে পারেন। তবে সবজি ভালো করে ধুয়ে তারপর রান্না করুন। আর রান্নায় বেশি তেল পরিহার করতে হবে। অতিরিক্ত তেল দিলে সবজির গুণ নষ্ট হয়। এ ছাড়া রোজ ডায়েটে রাখুন ফল। ফলে আছে শর্ট চেইন কার্বোহাইড্রেট। এই কার্ব পেট সুস্থ রাখতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে কলা, অ্যাভোকাডো, পেঁপে, বিশেষ করে কাঁচা পেঁপে, স্ট্রবেরি, কিউই খুবই উপকারী। তাই ফল ও শাকসবজি নিয়মিত পাতে রাখার চেষ্টা করুন।

এসবের পাশাপাশি নিচের নিয়মগুলো মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে

  • মানসিক চাপ সামলাতে হবে, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

  • পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে।

  • অতিরিক্ত চর্বি ও মিষ্টি বাদ দিতে হবে।

  • খাবার খেতে হবে ভালো করে চিবিয়ে।

  • কড়া চা-কফি যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।

  • বাসি খাবার না খাওয়াই ভালো।

  • নিয়মিত ও প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খেতে হবে।

  • রাত জাগা বন্ধ করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

  • তামাক, জর্দা, সিগারেট বাদ দিতে হবে।

  • কোমল পানীয় ও অ্যালকোহল বাদ দিতে হবে।

  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়া ঠিক নয়। এতে হজমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে সমস্যা বাড়িয়ে দেবে।

লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

আরও পড়ুন

পেটের সমস্যায় ভুগছি, তবে আলসার না

আরও পড়ুন

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কী করবেন