দাঁত কেন আঁকাবাঁকা হয়, সোজা করার উপায় কী

আঁকাবাঁকা দাঁত নিয়ে অনেকেই হীনম্মন্যতায় ভোগেন। মন খুলে হাসতে পারেন না, প্রাণ খুলে কথা বলতে পারেন না। এ ধরনের দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কারও করা যায় না। তাই আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আগেই সমান করে নিন আঁকাবাঁকা দাঁত

মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আগেই সমান করে নিন আঁকাবাঁকা দাঁত
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

মুখের খুবই পরিচিত ও সাধারণ একটা সমস্যা আঁকাবাঁকা দাঁত। মুখের সৌন্দর্যের পাশাপাশি এর কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিও আছে। আঁকাবাঁকা দাঁত ভালোভাবে ব্রাশ করেও পরিষ্কার করা যায় না। আস্তে আস্তে দাঁত কালো কালো হয়ে যায়, দাগ পড়ে, পরবর্তীকালে পাথরও হয়। তখন জিনজিভাইটিস হয়, সাধারণ ভাষায় যাকে বলে পায়োরিয়া। এ থেকে মুখে দুর্গন্ধ, রক্ত পড়া, পুঁজ আসার মতো সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে।

আবার যাঁদের একটা দাঁত উঁচু থাকে, তাঁদের ওই দাঁতের গোড়া ধীরে ধীরে করাতের মতো ক্ষয় হয়ে যায়। এতে দাঁত শিরশির করে, দাঁতে রুট ক্যানেল করারও প্রয়োজন পড়ে। এ ছাড়া আঁকাবাঁকা দাঁত নিয়ে একজন মানুষ প্রতিনিয়ত হীনম্মন্যতায় ভোগেন। হাসতে বা কথা বলতে গিয়ে আত্মবিশ্বাস হারাতে শুরু করেন, যা তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

কেন আঁকাবাঁকা হয় দাঁত

বিভিন্ন কারণে আঁকাবাঁকা হয়ে বেড়ে উঠতে পারে দাঁত। শিশুদের মুখে সাধারণত ২০টি দুধদাঁত আসে। এই দুধদাঁত পড়ে গিয়ে যথাসময়ে স্থায়ী দাঁত গজায়। কোনো কারণে যদি দুধদাঁত সময়মতো না পড়ে বা আগেই পড়ে যায়, তাহলে নিচের দাঁতটা শিকড় হারিয়ে ফেলে ঠিকমতো উঠতে পারে না। তখন হয়তো সেই দাঁতটা মাঝামাঝি জায়গায় ওঠে, কখনো বাইরে চলে যায়, কখনো ভেতরে চলে যায়। আবার কখনো যেখানে জায়গা পায়, সেখানেই বেড়ে উঠতে শুরু করে। দেখা দেয় আঁকাবাঁকা দাঁত। মা-বাবার এই সমস্যা থাকলেও সন্তানদের দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে বেড়ে উঠতে পারে।

বিভিন্ন কারণে আঁকাবাঁকা হয়ে বেড়ে উঠতে পারে দাঁত
ছবি: সংগৃহীত

আরও কিছু কারণেও দাঁত অবিন্যস্ত ও এলোমেলো হতে পারে। যেমন—

১.   জন্মগত।

২.   দাঁত ও চোয়াল, অর্থাৎ ম্যাক্সিলা ও ম্যান্ডবলের হাড়ের অসামঞ্জস্য।

৩.  নানা রকম রোগ, যেমন সিস্ট, টিউমার।

৪.   অভ্যাসজনিত কারণ, যেমন ছোটবেলা থেকে আঙুল চোষা। এতে ওপরের মাড়ির দাঁত সম্মুখে চলে আসে। অর্থাৎ ওপরের দাঁত উঁচু হয়ে যায়।

৫.   জন্মগত ত্রুটি, যেমন ঠোঁটকাটা ও তালুকাটা সমস্যা।

৬.   দুর্ঘটনাজনিত কারণ, যেমন সড়ক দুর্ঘটনায় ওপর ও নিচের চোয়ালের দাঁত ভেঙে অবিন্যস্ত হয়ে পড়তে পারে।

৭.   ওপরের চোয়ালের দুই দাঁতের মাঝের ফাঁকা।

৮.   অনেক সময় নির্দিষ্টসংখ্যক দাঁতের চেয়ে অতিরিক্ত দাঁত (সুপারনিউমারারি টিথ) ওঠার কারণে দাঁত অবিন্যস্ত হয়।

৯.   অনেক সময় ওপরের চোয়াল নিচের চোয়ালের চেয়ে বড় হয়। আবার নিচের চোয়াল অতিমাত্রায় বড় হয়ে যায়। যার কারণে দুই চোয়ালের দাঁতের অসামঞ্জস্য তৈরি হয়।

আঁকাবাঁকা দাঁতের চিকিৎসা

প্রথমত, আমাদের কারণ নির্ণয় করা প্রয়োজন। সে জন্য প্রথমে রোগীর ওপিজি এক্স–রে, সেফালোমেট্রি করা দরকার। ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ এই চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ দন্তচিকিৎসক বা অর্থোডেন্টিস্ট। এই চিকিৎসা রিমুভাল অ্যাপলায়েন্স ও ফিক্সড অ্যাপলায়েন্স—এই দুভাবে করা যায়।

অনেক সময় ওপরের চোয়ালের দুই পাশের ফার্স্ট প্রি-মোলার ওঠানোর প্রয়োজন হতে পারে। প্রথমে রোগী ও রোগীর অভিভাবককে পুরো বিষয়টি ভালো করে বুঝতে হবে। ১২-১৫ বছরের মধ্যে চিকিৎসা আরম্ভ করতে পারলে ভালো।

রিমুভাল অ্যাপলায়েন্স পদ্ধতিতে প্রথমে রোগীর দাঁতসহ চোয়ালের মাপ নেওয়া হয়। পরে ডেন্টাল ল্যাবরেটরিতে রিমুভাল অ্যাপলায়েন্স তৈরি করে রোগীকে পরানো হয়। এরপর সময়–সময় রিমুভাল অ্যাপলায়েন্স সক্রিয় করে রোগীর চিকিৎসা করা হয়।

আরেকটি পদ্ধতিতে রোগীর মুখে দাঁতের ফিক্সড অ্যাপলায়েন্স বসিয়ে চিকিৎসা করা হয়। পরে সময় নিয়ে ফিক্সড অ্যাপলায়েন্স সক্রিয় করে দাঁতগুলো সুন্দর করে পরিপাটি করে সাজানো হয়।

আঁকাবাঁকা দাঁত ব্রেস লাগিয়ে দাঁত সোজা করা যায়
ছবি: কবির হোসেন

প্রতিরোধ

শিশুকালেই যদি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে আঁকাবাঁকা দাঁত হওয়াটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। উঁচু–নিচু বা আঁকাবাঁকা দাঁত থাকলে ব্রেস লাগিয়ে ও বিভিন্ন পদ্ধতিতে দাঁত সোজা ও সুন্দর করা যায়। অল্প বয়সে চিকিৎসা শুরু করলে দ্রুত ও স্থায়ী ফল পাওয়া যায়। এই চিকিৎসার জন্য অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আঁকাবাঁকা দন্তবিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

*অধ্যাপক ডা. এস এম ইকবাল হুসাইন: সাবেক পরিচালক, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা