এই গরমে স্কুলে শিশুরা কী করবে

প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক শিশুরা। আরামদায়ক পোশাক, নিরাপদ খাবার এবং পানির ব্যবস্থা করতে হবে তাদের জন্য।

ঘেমে গেলে যত দ্রুত সম্ভব, শিশুর ঘাম মুছে দিনমডেল: মৃন্ময়ী ও রাবেয়া, ছবি: সুমন ইউসুফ

প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত-অবসন্ন হয়ে পড়তে পারে শিশু। অসুস্থতার এক বড় কারণ পানিশূন্যতা। ঘাম থেকেও সৃষ্টি হয় অস্বস্তি। ভাইরাস সংক্রমণ কিংবা খোসপাঁচড়াও হয় এ সময়। ডায়রিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েড হয়ে থাকে। সুস্থ থাকতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আবশ্যক। শিশুর জন্য আরামদায়ক পোশাক, নিরাপদ খাবার এবং পানির ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে তৈরি খাবারই শিশুর জন্য ভালো। তবে এমন খাবার দিতে হবে, যা সহজে নষ্ট হয় না। বাড়ি থেকেই পর্যাপ্ত পানি দিয়ে দিন। সাধারণ প্লাস্টিকের বোতল পরিহার করুন। ঠান্ডা পানি বর্জনীয়। অসুস্থ বোধ করলে সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষককে জানানোর পাশাপাশি নিজে থেকে কী কী করতে হবে, সেটাও তাকে শিখিয়ে দিতে পারলে ভালো। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার।

তিন ধাপে যত্ন

গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের শিশুবিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা সুলতানা জানালেন, স্কুলে যাওয়ার আগে, স্কুলে থাকার সময় এবং স্কুল থেকে ফেরার পর শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করার উপায়—

স্কুলে যাওয়ার আগে: স্কুলের নির্দিষ্ট পোশাক না পরতে হলে শিশুকে নরম, সুতি কাপড়ের পোশাক পরান। টিফিনে হালকা খাবার দিন। পানিজাতীয় ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো। রোদে বা গরমে যাতে দৌড়ঝাঁপ না করে, সেটি তাকে আদর করে বুঝিয়ে বলুন।

বাইরের খাওয়া না খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন
ছবি: সুমন ইউসুফ

স্কুলে থাকার সময়: স্কুলের সময়টায় শিক্ষার্থীর মূল দায়িত্ব শ্রেণিশিক্ষকের। ফাস্ট ফুডের পরিবর্তে হালকা খাবার খেতে উৎসাহ দেওয়া, শিশুর পোশাক-আশাকের দিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি স্কুলের সময়টাকে আনন্দময় এবং উপভোগ্য করে তোলাটাও তাঁর দায়িত্ব। দুরন্তপনার বয়সে শিশুকে বসিয়ে রাখা সহজ কাজ নয়। বিরতির সময় শিশুদের নিয়ে ছড়া-কবিতা বা গল্পের আসর জমানো কিংবা বসে খেলতে উৎসাহিত করাও এক বিশাল দায়িত্ব। এমন আসরে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সবাইকে উৎসাহ দেওয়া, সুন্দর উপস্থাপনের জন্য হাততালি দেওয়া বা কাছে টেনে নেওয়ার দায়িত্ব তিনি যতটা আন্তরিকতার সঙ্গে করবেন, শিশু ততটাই আগ্রহী হবে দৌড়ঝাঁপ বাদ দিয়ে এমন কাজে অংশ নিতে। আগ্রহ বাড়াতে মাল্টিমিডিয়ার সহায়তাও নিতে পারেন শিক্ষক।

স্কুল থেকে ফেরার পর: বাসায় ফেরার পর আবার শুরু অভিভাবকের দায়িত্ব। যত দ্রুত সম্ভব, শিশুর পোশাক বদলে ঘাম মুছে দিন। পানি ও তরল খাবার দিন। ভালোভাবে গোসল করিয়ে দিন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করুন। স্কুলের পোশাক, খাবারের বাটি, পানির বোতল পরিষ্কার করে ফেলুন।

খাওয়াদাওয়া ঠিকঠাক

টিফিনে নিরাপদ খাদ্য ও সঠিক পুষ্টি বিষয়ে পরামর্শ দিলেন ঢাকার আজিমপুরের গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেহানা বেগম।

সবজি নুডলস বা স্যান্ডউইচ হতে পারে দারুণ টিফিন। সবজি আর মুরগির মাংসের রোল বা শিঙাড়া করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। সমুচা বা কলিজার শিঙাড়াও হতে পারে। স্কুলের আগে সামান্য তেলে ভেজে নিন। টিস্যু পেপারে বাড়তি তেল শোষণ করিয়ে নিন। আরেকটি টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে বাক্সে রাখুন। যেকোনো খাবারেই সয়াবিন তেলের বদলে জলপাই তেল ব্যবহারের চেষ্টা করুন।

ফলমূল দিতে পারেন। ফল খেতে না চাইলে রস করে দিন। লেবুর শরবত দিতে পারেন। বাইরের জুস কিংবা শরবত বর্জনীয়।

খাবার ও পানীয় দিন ফুড গ্রেড উপকরণের পাত্রে। ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের পাত্র ছয় মাসের বেশি ব্যবহার করবেন না। পানি এবং পানীয়ের জন্য স্টিলের বোতল ভালো, যা দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারযোগ্য।

বাইরের অনিরাপদ পানি, পানীয়, চাটনি, মাখানো ফল, ফুচকা, চটপটি, ফাস্ট ফুড, ভাজাপোড়া খাবার যে কারও জন্যই স্বাস্থ্যকর নয়, সেটি বুঝিয়ে দিন তাকে।

বাড়িতে তৈরি খাবার দিয়ে দিন শিশুর টিফিন বাক্সে
ছবি: নকশা

সচেতনতায় সুস্থতা

ঘাম মুছে ফেলতে শিখিয়ে দিন। সঙ্গে রুমাল দিন।

প্রস্রাব কম হচ্ছে কি না বা গাঢ় রঙের হচ্ছে কি না, খেয়াল করে পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টি শিখিয়ে দেওয়া ভালো।

হঠাৎ খারাপ লাগলে শিশু কী করতে পারে, বয়স অনুযায়ী তা শিখিয়ে রাখা ভালো। খারাপ লাগলে ফ্যানের নিচে বা ছায়াযুক্ত ঠান্ডা স্থানে যেতে হবে; পানি খেতে হবে; চোখে-মুখে-মাথায় এবং হাতে-পায়ে পানি দিতে হবে। খারাপ লাগলে মুখ ও শরীর মোছার জন্য সঙ্গে ভেজা টিস্যুও দেওয়া যেতে পারে।