কথায় আছে, ‘কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়’। এটা দৈহিক উচ্চতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমাদের সমাজে কম উচ্চতা নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। বেশির ভাগ মা-বাবার অভিযোগও সন্তানের উচ্চতা কম নিয়ে। কিন্তু সন্তান অতিরিক্ত লম্বা হওয়ার কারণে সমস্যা হতে পারে কখনো?
প্রথমেই জানা দরকার, অতিরিক্ত লম্বা বলতে কী বোঝায়। চিকিৎসা পরিভাষায় কারও উচ্চতা গড় উচ্চতার ৯৭ শতাংশের বেশি হলে অস্বাভাবিক লম্বা বলা হয়। শিশুদের উচ্চতা পরিমাপের জন্য একটা গ্রোথ চার্ট ব্যবহার করে থাকেন চিকিৎসকেরা, সেই গ্রোথ চার্টে এই অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে।
এখন প্রশ্ন, আদৌ এটি কোনো সমস্যা কি না বা এর চিকিৎসা করার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না। জাতিগত বা বংশগতভাবে অনেকে অনেক লম্বা হতে পারে, সেই ক্ষেত্রে কেউ যদি নীরোগ হয়, তবে তা স্বাভাবিক বলেই বিবেচিত হবে। কিন্তু পূর্ণবয়স্ক হওয়ার আগে কারও উচ্চতা অস্বাভাবিক হলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই রোগের আলামত খুঁজে দেখতে হবে।
যেসব রোগের লক্ষণ হতে পারে
কোনো শিশু অতিরিক্ত মোটা বা ওজন অতিরিক্ত হলে উচ্চতা বাড়তে পারে। কারও ওজন কমে শুধু লম্বাও হতে পারে। এ ছাড়া কেউ কেউ দৃশ্যত অস্বাভাবিক লক্ষণের অধিকারী হয়। এটা হতে পারে আকৃতিগত বা আচরণগত। অনেক সময় চেহারায়, মুখাকৃতিতে বা শারীরিক গঠনে কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। আবার বুদ্ধিমত্তা, আচার-আচরণে বা পড়াশোনাতেও পিছিয়ে থাকতে পারে। কারও কারও বয়ঃসন্ধি বিলম্বিত বা আগাম হতে পারে।
অস্বাভাবিক লম্বা মানেই রোগ নয়। কিন্তু অস্বাভাবিক লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে হরমোনজনিত কিছু রোগের বিষয়ও আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্রোথ হরমোনের আধিক্য (জায়গান্টিজম) বা থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য (হাইপারথাইরয়েডিজম)। এ ছাড়া কিছু জন্মগত রোগ ও সিনড্রোম, যেমন হোমোসিস্টিনুরিয়া, মারফান সিনড্রোম, ক্লাইনফিল্টার সিনড্রোম, বেকউথ-ওয়াইড ম্যান সিনড্রোম, ট্রিপল-এক্স সিনড্রোম ইত্যাদি থাকলে কেউ অস্বাভাবিক লম্বা হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও থাকে।
শিশু যদি সুস্থ ও পারিবারিক বা বংশগতভাবে লম্বা হয়ে থাকে, তাহলে তা স্বাভাবিক। অন্যথায় শিশু যদি দ্রুত লম্বা হতে থাকে এবং সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায়, শরীরের গড়ন ডিসপ্রপোরশনেট বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে বিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট