প্রথম সন্তান সিজারিয়ানে হলে দ্বিতীয়বার কি নরমালে হওয়া সম্ভব

প্রথমবার সিজারিয়ান হওয়ার পরও দ্বিতীয়বার নরমাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভব, একে বলা হয় ভিব্যাক (ভিবিএসি)
ছবি : প্রথম আলো

অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে, প্রথম সন্তান সিজারিয়ান অপারেশনে হলে পরের সন্তান কি নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে জন্ম দেওয়া সম্ভব?

বেশির ভাগ মানুষেরই ধারণা, একবার সিজারিয়ান অপারেশন করলে কখনোই আর নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়। কিন্তু জানেন কি, প্রথমবার সিজারিয়ান হওয়ার পরও দ্বিতীয়বার নরমাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভব। একে বলা হয় ভিব্যাক (ভিবিএসি), অর্থাৎ ভ্যাজাইনাল বার্থ আফটার সিজারিয়ান সেকশন। তবে এ জন্য অন্তঃসত্ত্বার শারীরিক অবস্থা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ নিতে হবে।

ভিব্যাক করার জন্য যে বিষয়গুলো ভীষণ জরুরি

  • শুধু প্রথম সন্তান সিজারিয়ানে হলে দ্বিতীয়বার নরমাল ডেলিভারি সম্ভব। অনেকেই দুই বা তিনটি সন্তান সিজারিয়ান অপারেশনে জন্ম দেওয়ার পর নরমাল ডেলিভারি করাতে চান। এভাবে কখনোই ভিব্যাক সম্ভব নয়। কারণ, বারবার জরায়ু কেটে সেলাই করার কারণে জরায়ুতে সেলাইয়ের স্থানটা দুর্বল হয়ে যায়। সেই দুর্বল স্থানে নরমাল ডেলিভারি হলে আগের সেলাইয়ের স্থান ফেটে যেতে পারে।

  • অন্তঃসত্ত্বা নারীর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ থাকলে ভিব্যাকের চেষ্টা করা উচিত নয়। নরমাল ডেলিভারির ট্রায়াল দিতে গিয়ে রক্তে চিনির মাত্রা, রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন অতিমাত্রায় বেড়ে বা কমে যেতে পারে।

  • গর্ভফুলের মাধ্যমে মায়ের রক্ত থেকে গর্ভস্থ শিশুর দেহে জরুরি পুষ্টি, অক্সিজেনের সরবরাহ হয়। নিচের দিকে থাকা গর্ভফুলকে বলে প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া। প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে ভিব্যাক সম্ভব নয়।

  • মায়ের বয়স চল্লিশের কাছে পৌঁছে গেলে ভিব্যাক ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা থাকে। বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নরমাল ডেলিভারি করার শারীরিক শক্তিও কমতে থাকে।

  • ডপলার ও সিটিজি (কার্ডিও টকোগ্রাফি মেশিন) সব হাসপাতালে থাকে না। ভিব্যাকের জন্য এমন হাসপাতাল নির্ধারণ করা উচিত, যেখানে ডপলার আলট্রাসনোগ্রাফি, সিটিজি মেশিনের ব্যবস্থা আছে। ভিব্যাকের সম্ভব না হলে যাতে দ্রুত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মা ও শিশুকে ঝুঁকিমুক্ত করা যায়।

  • অনেক শিশুর জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (এনআইসিইউ) প্রয়োজন হয়। ভিব্যাক ব্যর্থ হলে দীর্ঘ সময় প্রসববেদনা থেকে মা ও শিশুর বহুবিধ জটিলতা হতে পারে। হাসপাতালে নবজাতকের জন্য এনআইসিইউ, মায়ের কোনো জটিলতা এড়ানোর জন্য অন্য বিভাগের চিকিৎসক পাওয়া যাবে কি না, এসব বিষয়ও চিন্তা করতে হবে।

  • গর্ভস্থ শিশু যমজ বা তিনটি হলে এবং মায়ের জটিল কোনো অসুখ থাকলে ভিব্যাক সম্ভব নয়। আগের ডেলিভারিতে জরায়ুর যেখানে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সেলাইয়ের স্থান খুব পাতলা হয়ে থাকলে, ভিব্যাকের সময় জরায়ুর সেই স্থান ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি।

  • সিজারিয়ান অপারেশনের পাশাপাশি জরায়ুতে অন্য কোনো অপারেশন হয়ে থাকলে বারবার কাটা আর সেলাইয়ের জন্য জরায়ু দুর্বল হয়ে যায়। তখন ভিব্যাক সম্ভব নয়।

  • অতিমাত্রায় খর্বকায় নারী বা ভিব্যাকের জন্য প্রসবের পথ যথেষ্ট প্রশস্ত না থাকলে, আগের গর্ভাবস্থায় খিঁচুনি বা প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া, ভাসা প্রিভিয়ার (গর্ভফুলের অবস্থান নিচে এবং এই অবস্থায় রক্তপাত) ইতিহাস থাকলে ভিব্যাক ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ।

  • গর্ভস্থ নারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। পূর্ববর্তী শিশুর জন্ম থেকে বর্তমান শিশু গর্ভে ধারণ পর্যন্ত কমপ‌ক্ষে দুই থেকে আড়াই বছরের বিরতি থাকতে হবে। এতে জরায়ু এবং পেটের মাংসপেশিতে দেওয়া সেলাইগুলো মজবুত হবে। ভিব্যাক করানোর ইচ্ছা গর্ভধারণের পর থেকে চিকিৎসককে জানাতে হবে। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে। মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য নিরাপদ, দক্ষ জনবল ও মেশিন রয়েছে এ ধরনের হাসপাতালে ভিব্যাক নিরাপদ।