হজে গিয়ে ডায়াবেটিক রোগীরা ইনসুলিন ব্যবহারের বেলায় যা মনে রাখবেন

বিপুলসংখ্যক ডায়াবেটিসের রোগী প্রতিবছর পবিত্র হজ পালন করেন, যাঁরা সরাসরি ইনসুলিন নির্ভরশীলছবি: পেক্সেলস

বিপুলসংখ্যক ডায়াবেটিসের রোগী প্রতিবছর পবিত্র হজ পালন করে থাকেন। তাঁদের অনেকেই টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যাঁরা সরাসরি ইনসুলিন নির্ভরশীল। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদেরও অনেকে ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করছেন। হজ পালনকালে ভিনদেশের প্রতিকূল আবহাওয়ায় দৈনন্দিন রুটিন অনেকটা বদলে যায়। সে কারণে ইনসুলিন ব্যবহারকারীদের বাড়তি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তাই হজ পালনকারীদের সতর্ক থাকতে হবে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি

হজের সময় হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়া) হওয়ার ঝুঁকি অনেক। এ সময় অনেক হাঁটতে হয়। একটি পরিসংখ্যান বলছে, হজ পালনকালে কোনো কোনো হজযাত্রী সর্বোচ্চ ৬৪ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে থাকেন। পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ইনসুলিন রক্তে দ্রুত মিশে যায়। আবার অনেক সময় খাবারের রুটিন মেনে চলা সম্ভব হয় না। এসব কারণে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

গ্লুকোজ বৃদ্ধিজনিত জটিলতা

উষ্ণ আবহাওয়ায় শরীরে ইনসুলিন সঞ্চিত থাকে কম। এ কারণে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে। বেশি গরমে হাঁটাহাঁটি করায় প্রচুর ঘাম ও পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া অনেকে এই সময় খেজুরসহ নানা মিষ্টিজাতীয় ফল খান, সময়মতো ইনসুলিন নেন না। ভুল ধারণায় অনেকে ইনসুলিন নেওয়া ছেড়ে দেন, কেউ ভুলে যান। ফলে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধিজনিত জটিলতা তৈরি হয়।

ইনসুলিন সংরক্ষণ

  • দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করুন।

  • রোদ থেকে দূরে রাখুন।

  • গাড়ির ড্যাশবোর্ডে রাখবেন না।

  • হাতের লাগেজে রাখুন।

  • বাইরে বের হলে বিশেষ ধরনের ঠান্ডা ওয়ালেটের ভেতরে রাখুন।

  • রক্ত পরীক্ষার স্ট্রিপ ও ডায়াবেটিস মনিটর করার যন্ত্র যাতে সরাসরি রোদের সংস্পর্শে না আসে, খেয়াল রাখুন।

ইনসুলিন কমানো-বাড়ানো

যাঁরা ইনসুলিন নিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করছেন, তাঁদের ইনসুলিনের মাত্রা কমানো-বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। এ জন্য যা করতে হবে:

  • রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।

  • গ্লুকোজের মাত্রা অনুযায়ী ইনসুলিন নির্ধারণ করতে হবে।

মনে রাখবেন

  • টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজের মাত্রা প্রতি লিটারে ১৫ মিলি মোলের ওপরে হলে অবশ্যই রক্ত বা প্রস্রাবে কিটোন রয়েছে কি না, তা জানতে হবে।

  • হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ পানীয়, দুধ, ফলের রস বা চিনির শরবত পান করতে হবে।

  • রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সব সময় বেশি থাকলে বা প্রস্রাবে অথবা রক্তে কিটোন নামক রাসায়নিক পদার্থ উপস্থিত থাকলে, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি দেখা দিলে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, বরিশাল