ঠান্ডায় কি স্নায়ুর ব্যথা বাড়ে

নিউরোপ্যাথি বা স্নায়ুজনিত ব্যথার কারণ অনেক। সাধারণ কারণগুলো হলো, দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, নানা ধরনের নার্ভ এনট্রাপমেন্ট বা নার্ভে চাপ পড়ার সমস্যা, ভিটামিন বি১২–এর অভাব, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি।

শীতকালে তীব্র ঠান্ডায় স্নায়ুজনিত ব্যথা বাড়তে পারে। কারণ, শীতে হাত–পায়ে রক্ত সঞ্চালন কমে। এ কারণে স্নায়ুতে যে রক্তপ্রবাহ করে সরু রক্তনালি দিয়ে—‘ভাসা নারভোসা’—তা সংকুচিত হয়ে রক্ত সঞ্চালন আরও কমে যেতে পারে, বেড়ে যেতে পারে ব্যথা। এমনকি তীব্র ঠান্ডায় কারও কারও মাইগ্রেনের মাথাব্যথা বেড়ে যেতে পারে। মাংসপেশিতে রক্ত সঞ্চালন কমার কারণেও ব্যথা অনুভূত হয় বেশি।

এ ছাড়া শীতে অনেকেরই হাত–পা অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়। বিভিন্ন জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির চারপাশের ত্বক খুব বেশি ঠান্ডা হলে স্নায়ু প্রান্তগুলোর সংবেদনশীলতা বেশি হয়। কোনো কিছুর সঙ্গে আঘাত বা স্পর্শ লাগলে বেশি ব্যথা অনুভূত হয়। শীতকালে অনেক ক্ষেত্রে ভিটামিন ডির পরিমাণ হ্রাস পায়, যা মুড বা ভাব, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, পেশি কামড়ানো, হাড় ও জয়েন্টের সমস্যা তৈরি করে।

করণীয়

  • শীতে যথেষ্ট গরম কাপড় পরুন। বিশেষ করে পায়ে মোজা ও হাতে গ্লাভস পরার চেষ্টা করুন। কারণ, হাত–পায়ের আঙুলে প্রান্তিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি।

  • ঠান্ডা কমাতে গরম সেঁক নেওয়া যায়। শীতে ড্রাই বা শুষ্ক সেঁক ভালো। তবে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির রোগীরা সতর্ক থাকবেন। কারণ, তাঁদের স্নায়বিক অনুভূতি কমে যায় বলে যথেষ্ট তাপ হলেও বুঝতে পারেন না এবং অতিরিক্ত গরমে পা পুড়িয়ে ফেলতে পারেন। রাতে কম্বল বা লেপের নিচে হট ব্যাগ নিয়ে ঘুমাতে হলে আগে তাপমাত্রা পরখ করে নিন বা হালকা গরম পানি ভরে নিন।

  • শীতে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল, সনা বাথ ইত্যাদি বেশ কার্যকর।

  • বয়স্ক ও ডায়াবেটিসের রোগীরা রুম হিটার ব্যবহার করতে পারেন। তবে এতে পরিবেশ অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে শরীর পানিশূন্য হতে পারে। তাই ঘরের কোণে পানি রাখা ভালো।

  • ক্যাফেইন শরীরকে পানিশূন্য করে রক্ত চলাচল আরও কমিয়ে দেয়। ধূমপানও করবেন না। যথেষ্ট পানি পান করুন।

  • শীতে আলসেমি ও ব্যথাবেদনা বয়স্কদের কাবু করে ফেলে। লেপের নিচে শুয়ে থাকতে মন চায় বেশি। কিন্তু বিপাকক্রিয়া বাড়াতে ও তাপ উৎপাদন করতে সচল থাকতে হবে। বাইরের ঠান্ডা এড়াতে চাইলে ঘরের ভেতরে হাঁটুন বা ইনডোর অ্যাকটিভিটি করুন। হাত–পায়ের ব্যায়াম করুন। এতে রক্ত চলাচল বাড়বে।

  • যথেষ্ট ভিটামিন ডি পেতে দিনের একটা সময় বারান্দা বা ছাদে রোদে অবস্থান নিন। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যায়।

যদি ব্যথার তীব্রতা বাড়ে, হাত–পায়ের রং পরিবর্তিত হয়ে নীলচে হয় বা সেঁক নিতে গিয়ে ত্বকে পরিবর্তন চোখে পড়ে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

  • ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা