হঠাৎ জ্ঞান হারানো বা বুক ধড়ফড় করা কি লং কিউটি সিনড্রোমের লক্ষণ

সাদামাটা বহু লক্ষণকে অনেক সময় খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। হুট করে জ্ঞান হারানো কিংবা বুক ধড়ফড় করে ওঠা তেমনই দুটি লক্ষণ। অধিকাংশ সময়ই এসব লক্ষণের পেছনে থাকে সাধারণ কোনো কারণ। তবে অল্প কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বিষয়টা সাদাসিধে থাকে না। যাঁদের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাঘাত ঘটার কারণে এ ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, তাঁদের জীবনযাপনে খানিকটা সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। নিতে হয় চিকিৎসাও।

গরমে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকেন কিংবা হঠাৎ বড়সড় মানসিক আঘাত পান, অল্প সময়ের জন্য তিনি জ্ঞান হারাতেই পারেন
ছবি: পেক্সেলস

ধরা যাক, আপনি চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। কিংবা ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন কোনো কারণে। এই মুহূর্তে আপনার বুক ধড়ফড় করতেই পারে। এমনটা হলেই কিন্তু আঁতকে ওঠার কিছু নেই। আবার কেউ যদি গরমে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকেন কিংবা হঠাৎ বড়সড় মানসিক আঘাত পান, অল্প সময়ের জন্য তিনি জ্ঞান হারাতেই পারেন। এটিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বিষয়। তাই সাধারণ এসব লক্ষণ দেখা দিলে ভয়ের কিছু নেই। তবে একেবারে অবহেলা করারও সুযোগ নেই। কারণ, হৃৎপিণ্ডের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটে, এমন কিছু মারাত্মক রোগেও এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। এ সম্পর্কে জানালেন ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নওসাবাহ্ নূর

হৃৎপিণ্ডের ছন্দে ব্যাঘাত

সুস্থ হৃৎপিণ্ড চলে এক চমৎকার ছন্দে। এর স্পন্দনেই সারা দেহে পৌঁছে যায় বিশুদ্ধ রক্ত। পরপর দুবার স্পন্দনের মাঝের সময়টাতে হৃৎপিণ্ড একবার শিথিল হয়। এভাবেই চলে সংকোচন-প্রসারণের ছন্দ। তবে কিছু রোগে হৃৎপিণ্ডের এই ছন্দে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাতেই বাধে বিপত্তি। যেসব রোগে হৃৎপিণ্ডের ছন্দপতন হয়, লং কিউটি সিনড্রোম সেসবের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ রোগে হৃৎপিণ্ড পরপর দুবার স্পন্দনের মাঝের সময়টাতে সঠিকভাবে শিথিল হতে পারে না। তখন স্পন্দনের গতি ও ধরন বদলে যায়। ফলে কিছু শারীরিক লক্ষণ দেখা যায়। তবে সাধারণ অবস্থায় অনেক সময়ই এ রোগের তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না।

আরও পড়ুন

লক্ষণগুলো জানা থাক

লং কিউটি সিনড্রোমের লক্ষণগুলো অনেক সময়ই হয় খুব সাদামাটা। আবার কখনো কখনো হুট করেই ঘটে যায় খারাপ কিছু। এ রোগেরই সাধারণ লক্ষণ হতে পারে সাময়িকভাবে জ্ঞান হারানো কিংবা বুক ধড়ফড় করে ওঠা। কারও কারও খিঁচুনিও হয়। জ্ঞান হারানোর আগের মুহূর্তে চোখ ঝাপসা হয়ে আসতে পারে, মাথা হালকা অনুভূত হতে পারে কিংবা শরীর দুর্বল লাগতে পারে। কেউ কেউ আবার কোনো প্রাথমিক লক্ষণ ছাড়াই হুট করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। লং কিউটি সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকের ক্ষেত্রেই তীব্র উত্তেজনা, রাগ, ভয় কিংবা মানসিক আঘাতের সময় উপসর্গগুলো দেখা দেয়। শরীরচর্চা করতে গেলে কিংবা আচমকা খুব জোরে শব্দ হলেও দেখা দিতে পারে এসব উপসর্গ।

কেন হয় এ রোগ

পরিবারে কারও লং কিউটি সিনড্রোম থাকলে সেই পরিবারের অন্য কারও মধ্যেও এ রোগ দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ এর সঙ্গে জিনগত একটি বিষয় জড়িয়ে আছে। আবার জিনগত বিষয় না থাকলেও নানান কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। রক্তে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম বা পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া, দেহের তাপমাত্রা খুব কমে যাওয়া, থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়া, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির টিউমার, স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো সমস্যার কারণেও লং কিউটি সিনড্রোম হতে পারে। তা ছাড়া এমন অনেক ওষুধ আছে, যেসবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে লং কিউটি সিনড্রোম হতে পারে। এসব ওষুধের মধ্যে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, কিছু অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট এবং কিছু অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধও আছে।

আরও পড়ুন

সবার জন্য সচেতনতা

লং কিউটি সিনড্রোমের উপসর্গগুলো অল্প সময়ের মধ্যে সেরে গেলেও কখনো কখনো এখান থেকেই হৃৎপিণ্ডের ছন্দ প্রাণঘাতী রূপ নিতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। লং কিউটি সিনড্রোম ছাড়াও অন্যান্য বহু কারণে একই ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে, আপনার উপসর্গের পেছনে ঠিক কোন রোগটি দায়ী। চিকিৎসক সেই অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন আপনাকে। লং কিউটি সিনড্রোম ধরা পড়লেও ভয় পাবেন না। চিকিৎসা নিলে এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন আনা হলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। চিকিৎসা হিসেবে ওষুধ সেবন ছাড়াও কোনো কোনো ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডে একটি ডিভাইস বসানোর প্রয়োজন পড়ে।

আরও পড়ুন