ফলমূল বা শাকসবজির পুষ্টি কি সত্যিই আমাদের কাজে আসে না

উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে পাওয়া পুষ্টি উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য আলাদা। মাংস থেকে যে প্রোটিন বা আমিষ পাওয়া যায়, তা শিমের বীজ থেকে পাওয়া আমিষের মতো নয়। কলিজা থেকে পাওয়া আয়রন আর কচুশাক থেকে পাওয়া আয়রনও ভিন্ন। উদ্ভিজ্জ আয়রন আমাদের দেহে শোষণ হয়ও কম। উদ্ভিজ্জ খাবারে থাকা অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টস, যা অন্যান্য খাবারের পুষ্টি শোষণে বাধা দেয় বলেও জানা গেছে। তাহলে কি ফলমূল বা শাকসবজির পুষ্টি আমাদের তেমন কোনো কাজে আসে না? এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান-এর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রাফিয়া আলম

শাকসবজি থেকে পাওয়া সব পুষ্টি উপাদানই আমাদের দেহের কাজে আসে ঠিকঠাক
ছবি: প্রথম আলো

পুষ্টি উপাদানের ধরন

উদ্ভিজ্জ খাবার আমাদের শর্করার প্রধান উৎস। উদ্ভিজ্জ খাবারে যে আমিষ পাওয়া যায়, তাতে আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের সব থাকে না। তবে একাধিক উদ্ভিজ্জ খাবারের আমিষের সংমিশ্রণ করা হলে এ সমস্যা এড়ানো যায়।

এ ছাড়া সয়া পণ্য (টেক্সচারড ভেজিটেবল প্রোটিন বা টোফু) ও মাশরুমও উদ্ভিজ্জ আমিষ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের দারুণ উৎস।

উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে পাওয়া যায় প্রচুর আঁশ। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে তো বটেই, রক্তের খারাপ চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্যও রোজ পর্যাপ্ত আঁশ চাই। রোজ পর্যাপ্ত শাকসবজি ও ফলমূল খেলে বহু দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমে যায়।

উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আমরা নানান রকম ভিটামিন পাই। বিশেষ করে বলতে হয় ভিটামিন সির কথা। ভিটামিন সি উত্তাপে নষ্ট হয়। কাঁচা ফলমূল ছাড়া কোনো উদ্ভিজ্জ বা প্রাণীজ খাবার থেকেই আপনার ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ হবে না।

ভিটামিন সির ঘাটতি হলে দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাবে। দেহের অভ্যন্তরে প্রদাহ হবে। বাড়বে দীর্ঘমেয়াদি বহু রোগের ঝুঁকিও। এমনকি ত্বকের কোলাজেন নামক আমিষ তৈরিই হবে না ভিটামিন সি না পেলে।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের মধ্যে কেবল ভিটামিন বি১২ ছাড়া সবই পাবেন উদ্ভিজ্জ খাবারে। নানান রকম উদ্ভিজ্জ খাবার খেলে বিভিন্ন খনিজ উপাদানও পেয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন

কতটা কাজে আসে

উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে একমাত্র আয়রন ছাড়া বাকি সব পুষ্টি উপাদানই সঠিকভাবে শোষণ হয় আমাদের দেহে। উদ্ভিজ্জ আয়রন ভালোভাবে শোষণের জন্য প্রয়োজন হয় ভিটামিন সি। তবে রান্না করা খাবার থেকে ভিটামিন সি পাবেন না। অর্থাৎ আপনি যদি টক ফলের আচার বা চাটনি খান, তা থেকে ভিটামিন সি মিলবে না।

কাঁচা ফলমূল, সবজি বা পাতা থেকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বি পাবেন। এসব খাবার রান্না করা হলে আবার এতটা ভিটামিন বি পাবেন না। কারণ, ভিটামিন বি পানিতে দ্রবণীয়। রান্নার প্রক্রিয়ায় পানি ফেলে দিলে কিংবা খাবার না ঢেকে রান্না করা হলে তা থেকে ভিটামিন বি হারিয়ে যায় অনেকটাই।

তাই কাঁচা সালাদ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে পাওয়া অন্যান্য সব পুষ্টি উপাদানই আমাদের দেহের কাজে আসে ঠিকঠাক।

সবুজ শাকসবজি কোলাজেনের ভালো উৎস
ছবি: পেক্সেলস

ভয় যখন অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট

অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট হলো খাবারে থাকা এমন সব উপাদান, যা বিভিন্ন খাবারের পুষ্টি উপাদান শোষণে বাধা দেয়। এটা ঠিক যে বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ খাবারে এ ধরনের কিছু অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট থাকে। তবে এসবের পরিমাণ খুবই কম।

তাই কোনো একটি নির্দিষ্ট খাবার অনেক বেশি না খেলে অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টের নেতিবাচক প্রভাব সচরাচর আমাদের ওপর পড়ে না।

আর সুস্থ থাকতে কেবল একটি উদ্ভিজ্জ খাবার নয়, বরং নানান রকম উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। সারা দিনে বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ খাবারের সংমিশ্রণ করা হলে কোনো একটির পরিমাণ খুব বেশি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তাই অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টের ক্ষতিকর প্রভাব আরও কমে যায়।

আরও পড়ুন

উদ্ভিজ্জ খাবার অপরিহার্য

মানুষের দাঁত ও পরিপাকতন্ত্রের সব অংশ এমনভাবে গঠিত, যাতে মানুষ উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ—সব ধরনের খাবারই গ্রহণ করতে পারে। সুস্থতার জন্য উদ্ভিজ্জ খাবার আপনাকে খেতেই হবে।

পর্যাপ্ত আঁশ, ভিটামিন সি বা ফোলেটের মতো উপাদানের জন্য উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণ করা আবশ্যক। এর কোনো বিকল্প নেই।

টাটকা শাকসবজি মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে
ছবি: প্রথম আলো

অন্যদিকে প্রাণীজ খাবার আমাদের প্রয়োজন হলেও তা একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখা উচিত। অনেক প্রাণীজ খাবারেই ক্ষতিকর চর্বি থাকে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। এ ছাড়া অতিরিক্ত আমিষও ক্ষতিকর।

মাংস বা কলিজা অতিরিক্ত খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে। লাল মাংস এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস বেশি খেলে বাড়তে পারে ক্যানসারের ঝুঁকিও।

প্রাণীজ খাবার খেলেও সুস্থ থাকতে উদ্ভিজ্জ খাবারের পরিমাণটাই হতে হবে বেশি। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যও অতিরিক্ত প্রাণীজ খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কেউ চাইলে প্রাণীজ খাবারের বিকল্প খুঁজে নিতে পারেন সহজে, যাতে পুষ্টিও মিলবে ঠিকঠাক।

আরও পড়ুন