শিশু সঠিক সময়ে কথা না বলা মানেই অটিজম নয়, যেসব কারণ দায়ী হতে পারে

শিশু আধো আধো বুলিতে, ছোট ছোট পায়ে হাঁটতে শুরু করার সময় আমরা আনন্দিত হই। প্রথম কী ডাকল, কী কথা উচ্চারণ করল, তা নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই। কিন্তু শিশুটি যদি স্বাভাবিক সময় কথা না বলে, তা এক বিরাট দুশ্চিন্তার বিষয়।

শিশু যথাসময়ে কথা না বললে যেসব রোগের নাম মনে পড়ে, তার মধ্যে অন্যতম অটিজম। অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার একটি জটিল স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যা, যা সামাজিক যোগাযোগে অক্ষমতা, ভাব প্রকাশ বা কথা বলার অক্ষমতা এবং পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ দ্বারা শনাক্ত করা হয়। এটি মস্তিষ্কের এমন একটি জটিলতা, যা সাধারণত একজন ব্যক্তির অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এই রোগ শৈশব থেকে বেড়ে ওঠার যেকোনো সময় পর্যন্ত শনাক্ত হতে পারে। কিন্তু শিশু কথা না বলা বা দেরিতে কথা বলা মানেই যে অটিজম, তা কিন্তু নয়।

শিশু কথা না বলা বা দেরিতে কথা বলা মানেই যে অটিজম, তা কিন্তু নয়
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

সঠিকভাবে কথা না বলা অথবা দেরিতে কথা বলা, এ সময়ের শিশুদের খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এটি দুভাবে দেখা দিতে পারে। একটি হলো বাচনভঙ্গির সমস্যা। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চারা কঠিন শব্দগুলো সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারছে না, যেমন র এবং ল-কে আলাদা করতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। কখনো তারা শব্দ উচ্চারণ করতে পারছে বা বাক্য গঠন করতে পারছে কিন্তু তা সমসাময়িক শিশুদের তুলনায় তেমন সাবলীল না। অর্থাৎ অন্য শিশুদের তুলনায় তার বাচনভঙ্গির বিকাশের গতি ধীর। সেটির কারণ হতে পারে তার ঠোঁট, চোয়াল এবং জিহ্বার যুগলবন্দী সঠিকভাবে না হওয়া। আবার অনেক সময় শিশু কথা বলছে, উচ্চারণ সঠিকভাবেই করছে, কিন্তু তার কথার মধ্যে সমন্বয় থাকছে না, সে সঠিকভাবে ভাব প্রকাশ করতে পারছে না। এ সমস্যায় তার চারপাশের মানুষ তাকে কী বলছে অথবা নতুন শব্দ কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা সে বুঝতে পারছে না।

অটিজম থেকে এ সমস্যার পার্থক্য কীভাবে করা যায়?

লক্ষ করার ব্যাপার হলো, শিশু কথা বলা শুরুর আগেই চারপাশের মানুষের সঙ্গে ভাবের আদান–প্রদান শুরু করে। সে চোখে চোখ রাখা শেখে, হাতের ইশারা বুঝতে পারে; মায়ের হাসি, গলার স্বরের সঙ্গে সাড়া দিতে শেখে। কিন্তু অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা এসব ভাব বিনিময় পারদর্শী নয়। দেরিতে কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কিছু রেড ফ্ল্যাগ বা সতর্কীকরণ চিহ্ন রয়েছে—

১. ৬ মাস বয়সে শিশু যদি পরিপূর্ণভাবে না হাসে।

২. ৯ মাস বয়সের মধ্যে হাসির উত্তরের হাসি না দেয় বা ভাব প্রকাশ না করে।

৩. ১২ মাস বয়সে যদি আধো আধো বোল না বলে।

৪. ১৬ মাসের মধ্যে কোনো একটি শব্দ সম্পূর্ণ বলতে না পারে।

৫. ২৪ মাস বয়সের মধ্যে দুই বা ততোধিক শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারে।

৬. ভাষার ব্যবহার রপ্ত করে আবার ভুলে যায়।

৭. বয়স অনুযায়ী আচরণ করতে না পারে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, যেসব শিশু দেরিতে কথা বলে তাদের সবার যে অটিজম রয়েছে, তা নয়। তাই শিশু বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সতর্কীকরণ চিহ্নগুলো খেয়াল রাখতে হবে। যদি অসামঞ্জস্য ধরা পড়ে, তবে দ্রুত শিশুচিকিৎসক, শিশুস্নায়ুবিদ এবং নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে, শিশুর ভাষাগত ও বাচনভঙ্গির তত দ্রুত উন্নতি ঘটবে।

*ডা. রাহনুমা আমিন: মেডিকেল অফিসার, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা