আপনি কি খাওয়া শুরু করলে খেতেই থাকেন? তাহলে বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারে ভুগছেন

সম্প্রতি প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে নিজের ওজন বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে অভিনেত্রী ও মডেল আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘আমার ওভার ইটিং ডিজঅর্ডার আছে। যখন খাই, প্রচুর খাই। এই প্রচুর খাওয়ার কারণে ওজন বাড়তে থাকে। প্রায় ১৭ কেজি ওজন বেড়ে যায়। অনেক দিন ধরেই বাড়ছিল, কিন্তু কমাতে পারছিলাম না। খেয়েই যাচ্ছিলাম।’ বাঁধনের কথায় উঠে আসা এই ওভার ইটিং ডিজঅর্ডার আসলে কী? কেন হয়? এর সমাধান কী? জেনে রাখুন।

অতিরিক্তি খাওয়াকে তখনই বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারের লক্ষণ বলে চিহ্নিত করা হবে, যখন আপনার মনে হবে, খাওয়াদাওয়া নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং অস্বাভাবিকভাবে বেশি খাবার খাচ্ছেনছবি: আনস্প্ল্যাশ

বাঁধন নিজের যে ব্যাধির কথা বলেছেন, তার একটা কেতাবি নাম আছে—বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডার। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, যা মানুষের অনুভূতি ও চিন্তাভাবনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

কোনটাকে বলবেন বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডার

আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সময় অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। যেমন কোনো উৎসবের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত খাবার আমরা চেয়ে নিই। ফলে একে আপনি বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডার বলতে পারবেন না। তাহলে?

অতিরিক্তি খাওয়াকে তখনই বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারের লক্ষণ বলে চিহ্নিত করা হবে, যখন আপনার মনে হবে, খাওয়াদাওয়া নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং অস্বাভাবিকভাবে বেশি খাবার খাচ্ছেন।

যাঁরা এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা প্রায়ই লজ্জা বা বিব্রত বোধ করেন। তাঁরা অনেক সময় খাবার খাওয়া সীমিত করতে বা খুব কম খেতে চেষ্টা করেন। এতে বরং খাওয়ার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাড়তে পারে এবং বিঞ্জ-ইটিংয়ের একটি সাইকেল বা চক্র তৈরি হতে পারে।

সময়মতো চিকিৎসা বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডার নিয়ন্ত্রণ করতে ও ভারসাম্য আনতে সাহায্য করতে পারে।

আরও পড়ুন

লক্ষণ

বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারের কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে, তেমনটা মোটেই নয়, স্বাভাবিকও থাকতে পারে। কিন্তু ওজন যা-ই হোক না কেন, এমন সমস্যার কারণে বেশির ভাগ মানুষই শরীরের আকার বা আকৃতি নিয়ে বিব্রত বোধ করেন।

বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারের অনেক লক্ষণ থাকতে পারে। যেমন—

  • খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। খাওয়া শুরু করলে তা থামানো কঠিন মনে হওয়া।

  • নির্দিষ্ট সময়ে খুব বেশি খাবার খাওয়া, যেমন দুই ঘণ্টার মধ্যে অত্যধিক খাবার খেয়ে ফেলা।

  • পেট ভরা বা ক্ষুধা না থাকা অবস্থায়ও খাওয়া।

  • অতিরিক্ত খাওয়ার সময় খুব দ্রুত খাওয়া।

  • খেতে খেতে পেট ভরার পর হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত খাওয়া।

  • প্রায়ই একা অথবা লুকিয়ে খাওয়া।

  • খাওয়ার পর হতাশা, ঘৃণা, লজ্জা, দুঃখ বা অপরাধবোধে ভোগা।

বুলিমিয়া নার্ভোসা নামের আরেক ধরনের ইটিং ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত কেউ অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার পর বমি করেন, পরিপাকের জন্য ওষুধ নেন কিংবা অতিরিক্ত ব্যায়াম করে অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে হয়তো সেটা হয় না। এ ক্ষেত্রে কেউ হয়তো ক্ষতিপূরণ হিসেবে ডায়েট করতে বা কম খেতে চেষ্টা করেন, কিন্তু এতে খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আরও বাড়তে পারে।

এটি কতটা গুরুতর

অতিরিক্ত খাবার খাওয়া আপনার মেজাজ ও দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্মে কতটা প্রভাব ফেলে, তা থেকেই বোঝা যায় অবস্থাটি আপনার জন্য কতটা গুরুতর। এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে। কয়েক দিন থাকতে পারে, আবার কমে গিয়ে ফিরে আসতে পারে অথবা চিকিৎসা না পেলে বছরের পর বছর স্থায়ী হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

আপনার যদি বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারের কোনো লক্ষণ থাকে, যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিন। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আপনার অনুভূতি ও সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলুন।

যদি আপনার খাওয়ার অভ্যাস নিয়ে লজ্জা পান বা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পান, তবে প্রথমে কারও সঙ্গে শেয়ার করুন, যাঁকে আপনি বিশ্বাস করেন। তিনি আপনার বন্ধু, পরিবারের সদস্য কিংবা শিক্ষক হতে পারেন। তাঁরা আপনাকে চিকিৎসা গ্রহণের প্রথম পদক্ষেপে উৎসাহ ও সমর্থন দিতে পারবেন।

ইটিং ডিজঅর্ডারে প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। তাঁরা আপনার পরিস্থিতি ভালো বুঝতে পারবে।

আরও পড়ুন

আক্রান্ত প্রিয়জনকে চলুন সাহায্য করি

বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত কেউ কেউ বিষয়টা লুকাতে পারেন। কারণ, বিষয়টা তাঁদের কাছে লজ্জার, তাঁরা অপরাধবোধে ভোগেন। তাই তাঁরা যদি নিজেদের এ ধরনের আচরণ লুকিয়ে রাখতে চান, তাহলে অন্যদের পক্ষে তাঁদের সমস্যা বোঝা কঠিন হয়ে যায়।

আপনি যদি মনে করেন কোনো প্রিয়জনের এমন লক্ষণ আছে, তবে সংবেদনশীলতা বজায় রেখে খোলামেলা ও আন্তরিকভাবে আপনার উদ্বেগের কথা বলুন।

মনে রাখবেন, ইটিং ডিজঅর্ডার হলো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। এই আচরণ রোগীর দোষ বা পছন্দ নয়।

প্রিয়জনকে উৎসাহ ও সমর্থন দিন। ইটিং ডিজঅর্ডারে অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ খুঁজে পেতে সাহায্য করুন। প্রয়োজনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে সহায়তা করতে পারেন, এমনকি তাঁদের সঙ্গে যাওয়ার প্রস্তাবও দিতে পারেন।

বাঁধনের কথা দিয়েই শেষ করি। প্রায় ছয় মাসে ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন তিনি। এ সময় চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়েছেন। নিয়ম মেনে করছেন ব্যায়াম।

আজমেরী হক বাঁধন প্রায় ছয় মাসে ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন
ছবি : প্রথম আলো
আমাকে এক্সারসাইজ করতে হয়েছে। খাবার নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম, ৪০ বছরের পর ওজন কমানো খুব কষ্ট হয়ে যাবে—যেহেতু এখন আমার ৪৩, তাই এই ভয়ও কাজ করছিল। তারপরও কমাতে পেরেছি।
আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেত্রী ও মডেল

সূত্র: মায়ো ক্লিনিক

আরও পড়ুন