শিশুর কি খেতে, কথা বলতে অসুবিধা হয়? কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে

অনেক শিশুরই ছোট–বড় বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি থাকে। ‘টাং টাই’ বা এঙ্কাইলোগ্লসিয়া এ রকমই একটি সমস্যা (প্রতীকী ছবি)ছবি: পেক্সেলস ডটকম

অনেক শিশুরই ছোট–বড় বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি থাকে। ‘টাং টাই’ বা এঙ্কাইলোগ্লসিয়া এ রকমই একটি সমস্যা। টাং টাই জিহ্বার স্বাভাবিক নড়াচড়া বাধাগ্রস্ত করে। জিহ্বা আমাদের শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অঙ্গ। মায়ের বুকের দুধ পান, লালার সঙ্গে অন্যান্য খাবার মিশিয়ে দাঁতের নিচে পৌঁছে দিয়ে খাওয়ার উপযোগী করা, বিভিন্ন ধ্বনির উচ্চারণ, স্পষ্টভাবে শব্দ বলা, বিভিন্ন স্বাদ বুঝতে পারা, মুখ পরিষ্কার রাখা, চুষে খাওয়াসহ জিহ্বার ভূমিকা অনেক।

জিহ্বায় লিঙ্গুয়াল ফ্রেনুলাম নামের একধরনের টিস্যু থাকে। টাং টাইয়ে আক্রান্তদের সেটা অস্বাভাবিক ছোট অথবা পুরু হয় বলে জিহ্বার নিচের দিকটা মুখগহ্বরের তালুর সঙ্গে আটকে থাকে। স্বাভাবিক নড়াচড়ায় বাধা দেয়।

টাং টাই যে কারও হতে পারে। সঠিক কারণ সম্পূর্ণভাবে জানা যায়নি। তবে জিনগত প্রভাব থাকতে পারে বলে ধারণা করেন গবেষকেরা। ছেলেদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। কখনো কখনো একই বংশে অনেকের এই সমস্যা থাকতে পারে। সাধারণত ৫ শতাংশ নবজাতকের মধ্যে টাং টাই দেখা যায়।

টাং টাই কী

টাং টাই বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। অল্প আক্রান্তদের ক্ষেত্রে পাতলা পর্দা দিয়ে হালকাভাবে জিহ্বা আটকানো থাকে। বেশি আক্রান্তদের জিহ্বা সম্পূর্ণভাবে মুখগহ্বরের মেঝেতে লেগে থাকতে পারে। ‘টাং টাই’ হলে জিহ্বা অনেক সময় ‘হার্ট’ আকৃতির মতো দেখায়, কখনো জিহ্বার অগ্রভাগে খাঁজ কাটাও থাকতে পারে।

টাং টাই হলে কী অসুবিধা হয়?

কারও কারও ক্ষেত্রে টাং টাইয়ে তেমন সমস্যা হয় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চার খাবার খাওয়া এবং কথা বলায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।


১. টাং টাইয়ে আক্রান্ত বাচ্চাদের মায়ের বুকের দুধ খেতে এবং গিলতে সমস্যা হয়। জিহ্বার অগ্রভাগ ঠিকমতো নড়াচড়া করতে না পারায় মায়ের স্তন থেকে সঠিক মাত্রায় দুধ পান করতে পারে না।


২. আমরা যে কথা বলি, বিভিন্ন ধ্বনি উচ্চারণ করি, তাতে জিহ্বার ভূমিকা অপরিহার্য। টাং টাইয়ে আক্রান্ত বাচ্চার কথা শিখতে দেরি হতে পারে। কথা শিখলেও কথার জড়তা থাকতে পারে। দেখা যায় এদের ‘ট’, ‘ড’,‘য’,‘স’,‘থ’,‘র’ উচ্চারণে সমস্যা হয়।


৩. মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষাও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, জিহ্বা বিভিন্নভাবে দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা ময়লা বের করে দেয়, যা টাং টাই থাকলে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?


টাং টাইয়ের সমস্যা বিভিন্ন মাত্রায় থাকে। যাদের সমস্যার মাত্রা বেশি থাকে, তাদের শল্যচিকিৎসা লাগতে পারে। ‘টাং টাই’ থাকলে বাচ্চাদের প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কেননা, বাচ্চার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ছয় মাস থেকে ছয় বছরের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই ফ্রেনুলাম ছোট হয়ে মিশে যেতে পারে। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য ক্ষেত্রে অপারেশন করতে হয়। জেনে নিন কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে।


• যদি বাচ্চার খাবার খেতে অনেক বেশি সমস্যা হয়।
• যদি বাচ্চার কথা বলায় টাং টাই অনেক বেশি সমস্যা করে।
• যদি বাচ্চা টাং টাই থাকায় অস্বস্তিতে থাকে।

লেখক: ডা. ফারাহ দোলা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর