হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি কি পেটের পীড়ার কারণ

প্রতীকী ছবি

পেটের পীড়া এমন এক সমস্যা, যাতে প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময় ভুগেছেন বা ভুগছেন। খাওয়ার পর পেট ভারী লাগা, কখনো পেট জ্বলা, গ্যাস, ঢেকুর, পেটের মাঝামাঝি জায়গায় অস্পষ্ট ব্যথা—এসবই পেটের পীড়ার নানা সমস্যা। আজকাল অনেকেই জানেন যে পেটের এসব সমস্যার পেছনে রয়েছে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি, অর্থাৎ এইচ পাইলোরি নামে একধরনের জীবাণু। যদিও এটাই পেটের সমস্যার একমাত্র কারণ নয়।

গত শতকের আশির দশকে দুই অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক ব্যারি মার্শাল ও রবিন ওয়ারেন আবিষ্কার করেন এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যা পাকস্থলীতে আস্তরণে বাসা বাঁধতে পারে। তাঁদের আবিষ্কার প্রমাণ করে, গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের প্রকৃত কারণ এইচ পাইলোরি নামে ব্যাকটেরিয়া।

বাংলাদেশেও ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো সময়ে এর সংস্পর্শে আসে।

হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত সাধারণ। বাংলাদেশেও ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো সময়ে এর সংস্পর্শে আসে। তবে এ সংক্রমণ থাকা মানেই যে সবার পেটব্যথা বা আলসার হবে, তা কিন্তু নয়। পেটের পীড়া, ডিসপেপসিয়া বা পেটব্যথার পেছনে আরও বহু কারণ থাকতে পারে। যেমন—

ফাংশনাল ডিসপেপসিয়া: এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরন। এখানে কোনো সংক্রমণ বা আলসার না থাকলেও পেটের চলাচল বা হজমে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। খাওয়ার পর দ্রুত ভরা লাগা, সামান্য খাবারেই পেট ভর্তি লাগা, মাঝেমধ্যে অম্ল ভাব বা জ্বালাপোড়া—এগুলো এর সাধারণ লক্ষণ।

গ্যাস্ট্রিক আলসার বা ডিউডেনাল আলসার: এখানে এইচ পাইলোরি বড় ভূমিকা রাখে, তবে ব্যথানাশক ওষুধ অতিরিক্ত খাওয়ার ফলেও আলসার হতে পারে।

গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ: যখন পাকস্থলীর অ্যাসিড উল্টো পথে খাদ্যনালিতে উঠে আসে, তখন বুক জ্বালাপোড়া, টক ঢেকুর, গলা জ্বালা ভাব হয়।

লিভার, গলব্লাডার ও অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা: গলস্টোন, ফ্যাটি লিভার বা প্যানক্রিয়াটাইটিসের ক্ষেত্রেও পেটব্যথা হতে পারে।

স্ট্রেস ও মানসিক চাপ: বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ বা ঘুমের অভাব হজমপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।

এইচ পাইলোরির পরীক্ষা

যদি বারবার পেটব্যথা, বমি ভাব, কালো মল, ওজন হ্রাস বা বয়স ৪০–এর বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই পেটের সমস্যায় বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখা উচিত।

প্রতিরোধে করণীয়

  • সময়মতো খাবার খান। অতিরিক্ত মসলা ও তেল এড়িয়ে চলুন।

  • কফি, কার্বোনেটেড ড্রিংক ও ধূমপান কমান।

  • খাবারের পরপরই শুয়ে পড়বেন না।

  • মানসিক চাপ ও অনিয়মিত ঘুম কমান।

  • প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করান।

  • ডা. সাইফ হোসেন খান: মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা